আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০১ এএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

‘বদলি’ নিয়ে হতাশায় বেসরকারি শিক্ষকরা

এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ
‘বদলি’ নিয়ে হতাশায় বেসরকারি শিক্ষকরা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মেয়ে মোসা. শাবানা খাতুন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) প্রকাশিত তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মাদারীপুরের কালকিনির শিকারমঙ্গল রাশিদিয়া আলিম মাদ্রাসায়। স্বামীর বাড়িও গোবিন্দগঞ্জে। তার স্বামী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত। আর বাবা-মা থাকেন গাইবান্ধায়। স্বামীর বাড়ি থেকে সাড়ে তিনশ কিলোমিটারের বেশি দূরে ভাড়া করা বাসায় একা থাকছেন শাবানা। ডায়াবেটিস ও প্রেশারের কারণে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়লেও অন্তঃসত্ত্বা এই নারীর দেখাশোনা করার কেউ নেই। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরিতে বদলি ব্যবস্থা না থাকায় তিনি পড়েছেন চরম বিপদে।

শাবানা কালবেলাকে বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিজ এলাকায় বদলি হতে পারব—এটা ভেবে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই ইনডেক্সধারীদের গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বদলির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছি। স্বামী, পরিবার ছেড়ে অনেক দূরে একা থাকি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে অসুস্থতার মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু এখানে দেখার কেউ নেই। সমস্যাগুলোর কথা কাউকে বলতেও পারি না। আবার বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে টাকা সঞ্চয়ও করতে পারি না। নিজ এলাকায় যেতে পারলে এসব সমস্যা হতো না।

বাগেরহাটের রামপালের তারেরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবাল হাসানের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায়। নিজ বাড়ি থেকে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। তাই বাধ্য হয়ে স্কুলের কাছাকাছি ভাড়া বাসায় থাকছেন। এদিকে বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা-মা।

ইকবাল কালবেলাকে বলেন, যে টাকা বেতন পাই তাতে নিজে চলতে পারলেও বাড়িতে তেমন একটা পাঠাতে পারি না। বাবা প্যারালাইজড আর মায়ের ডায়াবেটিস। তাদের ওষুধের পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। বউ-বাচ্চাদের পেছনে তো খরচ আছেই। কোনো কোনো মাসে ধার করে চলতে হয়। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যেতে পারি না। এই অল্প বেতনে সংসার চলে না। নিজ এলাকায় বদলির ব্যবস্থা থাকলে কষ্ট ও খরচ কিছুটা হলেও কমত।

শাবানা খাতুন ও ইকবাল হাসানের মতো এমন চিত্র দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকের। প্রথম থেকে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত ইনডেক্সধারীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে তা সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বদলির সুযোগ না থাকায় শিক্ষকরা ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জানান, সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় এনটিআরসিএর মাধ্যমে প্রবেশ পর্যায়ের পদে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো প্রত্যেক প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে জাতীয় মেধাতালিকায় অবস্থান নিশ্চিত করে নিয়োগের জন্য গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে হয়। প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বরধারী মেধাবীদের নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়োগ পেয়ে থাকে। এমনকি অনেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরের প্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়া এসব শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অতি নগণ্য।

শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই অল্প বেতন-ভাতা দিয়ে জীবনযাপন করা খুবই কঠিন। কম বেতন-ভাতার পাশাপাশি পরিবার থেকে অনেক দূরে চাকরি করার কারণে শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা এখন বদলির সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিও তুলেছেন।

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক শান্ত আলী বলেন, অন্যসব চাকরির মতো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর নিয়োগ পাই। কিন্তু শিক্ষকরা সে অনুযায়ী আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পান না। আবার তাদের বদলির সুযোগও নেই। এসব কারণে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক মেধাবী শিক্ষক অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চাইবেন না।

এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত ও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইমরান খান বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো। ফলে সবাই নিজ এলাকাতেই চাকরির সুযোগ পেতেন। বদলির খুব বেশি প্রয়োজন হতো না। বর্তমানে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগের কারণে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে শিক্ষকরা পাঠদানে যথেষ্ট মনোনিবেশ করতে পারছেন না।

আশার দিক হলো, গত বছরের অক্টোবরে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি সভা হয়। তার ভিত্তিতে এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রাথমিক চিন্তা হলো, এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এ সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে কোন পদ্ধতিতে এ বদলি হবে, সে প্রক্রিয়া এখনো ঠিক হয়নি। এরই মধ্যে বদলির নীতিমালার একটি খসড়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান কালবেলাকে বলেন, এটি (বদলির উদ্যোগ) এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একটি খসড়া হয়েছে, সে অনুযায়ী আলোচনা চলছে। খুব দ্রুত একটি কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এরপর সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কিছুটা সময় লাগবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রীতির হ্যাটট্রিকে নেপালের বিপক্ষে আরেকটি জয় বাংলাদেশের

গ্রেপ্তার ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালকে নিয়ে রাশেদের পোস্ট

রাজশাহীতে বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত

কৃষি জমি রক্ষায় দ্রুত আইন আসছে : কৃষি উপদেষ্টা

টিসিবির চাল নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না বৃদ্ধের

সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসায় অনুদান মঞ্জুরির হার পুনর্নির্ধারণ

প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশ, ২৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতি

কবরের আজাব ও বার্ধক্যের দৈন্য থেকে মুক্তি পেতে যে দোয়া পড়বেন

ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ হলে হাওরে কৃষি উৎপাদনের ক্ষতি কমানো সম্ভব : রিজওয়ানা হাসান

আমড়া ভর্তা খেয়ে হাসপাতালে ৬ শিক্ষার্থী

১০

সিইসির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক বৃহস্পতিবার

১১

‘কাজী জাফরকে বাদ দিয়ে কেউ বাংলার ইতিহাস লিখতে পারবে না’

১২

গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের তথ্য চেয়ে ‘জরুরি’ নির্দেশনা

১৩

পাঁচটি কংক্রিট মিক্সারসহ নিলামে ৫৮ লট পণ্য

১৪

নতুন আইফোন কবে আসছে, জানাল অ্যাপল

১৫

‎গকসু : শুরুতেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ

১৬

নারীর তুলনায় ক্যানসারে পুরুষের মৃত্যুঝুঁকি বেশি, নেপথ্যে কারণ কী?

১৭

মোদি ‘অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যক্তি’, ক্ষোভ ট্রাম্পের

১৮

যমুনার তীরে নষ্ট হচ্ছে অর্ধকোটি টাকার উদ্ধারকারী নৌকা

১৯

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানালেন মির্জা ফখরুল

২০
X