বিকেল থেকেই বৃষ্টির আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এতে প্রকাশকদের মনে শঙ্কা জাগে আজ (বৃহস্পতিবার) হয়তো মেলায় দর্শনার্থী কম হবে। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হলো—বৃষ্টি মেলায় পাঠকের ভিড় ও বই বিক্রি কমাতে পারেনি। গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন।
মেলার মূল প্রবেশদ্বার সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার আগে থেকেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ প্রকাশকদের দুশ্চিন্তা বাড়াতে থাকে। বাউণ্ডুলে প্রকাশনার প্রকাশক অনিন্দ্য দীপ বলেন, আজ (গতকাল) বইমেলার পাঠক-দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশদ্বার খুলে দেওয়ার ঘণ্টা খানেক পর থেকেই বৃষ্টি হবে মনে হয়েছিল। আশঙ্কা জাগছিল হয়তো লোকজন কম হবে। কিন্তু সময় যতই বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়ও ততই বাড়তে থাকে। বিক্রিও বেশ ভালো হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কথা হয় নটরডেম কলেজের একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের হাতে রয়েছে বেশকিছু নতুন বই। তাদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী স্বরাজ সাহা বলেন, এতদিন বইয়ের তালিকা তৈরি করেছি। এখন পছন্দের বইগুলো মেলায় ঘুরে ঘুরে কিনব। নতুন লেখকদের চেয় পুরোনো লেখকদের বই বেশি টানছে আমাকে। একইরকম কথা জানালেন মেলায় ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বীথি মল্লিক। তিনি বলেন, আসলে আজ বৃষ্টিটা হুট করেই এসেছে। অনেক বই দেখার ও কেনার ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়ন বই ঢেকে রেখেছে পলিথিন দিয়ে। হাতে সময় কম, তাই বৃষ্টি থামা মাত্রই চলে যেতে হচ্ছে।
তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে প্রথমার সামনে সপরিবারে পাওয়া গেল ভারত বিচিত্রার সম্পাদক কবি অরবিন্দু চক্রবর্তীকে। তার হাতেও ব্যাগভর্তি বই। এবার মেলায় তার একটি কবিতার বই ‘কবিতা সংগ্রহ’ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেন, বইমেলায় এবার প্রায় প্রতিদিনই আসা হচ্ছে, পাঠক-দর্শনার্থীদের মতামত নিচ্ছি। অন্যদের বইও দেখছি, কিনছি। এবারের মেলায় সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে আছে কবিতার বই। এক হাজারের মতো নতুন কবিতার বই প্রকাশ হয়েছে এবার। তবে বিক্রির দিক থেকে এগিয়ে আছে উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ইতিহাস, সায়েন্স ফিকশন, গোয়েন্দা সিরিজের বইয়ের চাহিদা বেশি। মেলায় সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে আইমান সাদিক, মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই।
কথা প্রকাশের স্টল ব্যবস্থাপক পরিচালক ইউনূস জানান, এবার মেলায় তরুণ লেখকদের গল্প, উপন্যাসের বইও ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এখানে বেশ কয়েকজন তরুণ লেখকের বই প্রকাশ হয়েছে। তাদের লেখায় রয়েছে বৈচিত্র্য। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মেলায় এসেছেন কবি রুদ্র গোস্বামী। এবার মেলায় তার কবিতার নতুন বই এসেছে। তিনি কালবেলাকে বলেন, মেলায় হাজার হাজার বই প্রকাশ হচ্ছে। পাঠকও বই কিনছে । এদের মধ্য তরুণদের সংখ্যা বেশি। বাঙালি যে বই বিমুখ হয়নি—তার প্রমাণ বাংলাদেশের বইমেলা। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ এই বইমেলায় নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, গতকাল বইমেলায় নতুন বই প্রকাশিত হয় ৭৮টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণসভা : আসাদ চৌধুরী এবং ও মনি হায়দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ড. মুহম্মদ সামাদ।