অমর একুশে বইমেলা-২০২৪-এর সময় দুদিন বাড়ানো হয়েছে। ২ মার্চ পর্যন্ত মেলা চলবে। সময় বাড়ানোর এ ঘোষণায় ব্যাপক উচ্ছ্বসিত লেখক ও প্রকাশকরা। গতকাল বুধবার ছিল মেলার ২৮তম দিন। এদিন পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার সময় বাড়ানোয় খুশির আমেজ দেখা গেছে তাদের মধ্যেও।
তাদের মতে, দুদিন বাড়ানোর ফলে যারা এখনো মেলায় আসতে পারেনি এবং নতুন বই কিনতে পারেনি, তাদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। অনেকেই কর্মক্ষেত্রে ছুটি না পাওয়া অথবা অন্যান্য কারণে হয়তো এখনো মেলায় আসার সুযোগ পায়নি। তারা বর্ধিত সময়ে আসার চেষ্টা করতে পারবে। কারণ, বর্ধিত সময় ছুটির দিন পড়েছে। এদিকে বই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন। বিষয়টি নিয়ে কালবেলার প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মেলায় ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহারিয়ার অপূর্বর। তিনি বলেন, সময় বাড়ানোর বিষয়টি আমি ইতিবাচকভাবে দেখছি। আগামী শুক্র ও শনিবার এই দুদিন মেলায় কোটি টাকার বই বিক্রি হতে পারে। বিষয়টি বাণিজ্যিকভাবেও যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বইপ্রেমীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেকেই নানা কারণে এতদিন বইমেলায় আসতে পারেননি। মেলায় আসার জন্য তারা আরও দুদিন সময় পেলেন।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে কবি ও গল্পকার মিলন আব্দুল্লাহ বলেন, অমর একুশে বইমেলার সময় দুদিন বাড়ানোয় প্রকাশক-লেখক-পাঠক সবাই লাভবান হয়েছেন। বইমেলা আসলে মানুষের মিলন মেলা। মাসের শেষ দিন বৃহস্পতিবার হওয়ার কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দুদিন পেতাম না আমরা। তাই মেলা দুদিন বর্ধিত করায় আমরা বেশ খুশি।
জলধি প্রকাশনার প্রকাশক নাহিদা আশরাফী বলেন, মেলা দুদিন বাড়ানোয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। আপনারা জানেন, শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির এই দুদিন মেলায় পাঠক-দর্শনার্থী তুলনামূলকভাবে বেশি থাকেন। ফলে আমাদের বিক্রিও বাড়ে। যেহেতু মেলা দুদিন বর্ধিত করা হয়েছে, আশা করি বিক্রিও বাড়বে।
মেলা বর্ধিতকরণের খবরে বিক্রয় কর্মীরাও বেশ খুশি। অনিন্দ্য প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের বিক্রয় কর্মী আশিক রহমান জানান, অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার বিক্রি তুলনামূলক কম। তাই ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় মেলা বর্ধিতকরণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।
গতকাল মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় নতুন বই এসেছে ৮০টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: মুনীর চৌধুরী এবং স্মরণ: হুমায়ুন আজাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন এবং অধ্যাপক হাকিম আরিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, অধ্যাপক ইউসুফ হাসান অর্ক, ওসমান গনি ও মৌলি আজাদ। সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন গবেষক ড. মোহাম্মদ হান্নান, কবি তারিক সুজাত, কথাসাহিত্যিক সমীর আহমেদ এবং শিশুসাহিত্যিক আবেদীন জনি।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন: এই মঞ্চে বিকেল ৫টায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘সংস্কৃতি ও সদাচার’ বই নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. মো. হাসান কবীর এবং সম্পাদকীয় পর্ষদের সদস্যবৃন্দ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি প্রদীপ মিত্র, তাহমিনা কোরাইশী, চঞ্চল শাহরিয়ার, হাসান মাহমুদ, আসাদ আহমেদ, মীর রেজাউল কবীর, লোকমান হোসেন পলা, কাজী বর্ণাঢ্য, দীপন দেবনাথ, গোলাম মোর্শেদ চন্দন, কৌমুদী নার্গিস, ফারজানা ইসলাম ও বোরহান মাসুদ।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জ্যোতি ভট্টাচার্য, মোহাম্মদ সেলিম ভূঁইয়া, মছরুর হোসেন, ফারজানা নিম্নি ও সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। এ ছাড়া ছিল কোহিনূর রহমান শিল্পীর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আনন্দ নিকেতন সংগীতালয়’, নারায়ণ চন্দ্র শীলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘লোকাঙ্গন সাংস্কৃতিক সংগঠন’, আরিফুজ্জামান চয়নের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘উদ্ভাস নৃত্যকলা একাডেমি’ এবং রোকেয়া ইসলামের পরিচালনায় প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন সংস্থার পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহীন সামাদ, ফেরদৌস আরা, দীপ্তি রাজবংশী, আবদুল মান্নান তালুকদার (নয়ন সাধু), আঁখি আলম, শেখ মিলন, সরদার হিরক রাজা, আরিফ বাউল, বেবী আকতার, রবিউল হক, রিদওয়ানা আফরীন, রীতা ভাঁদুরী ও নয়ন বাউল।