একুশে পদক প্রাপ্তি ঘোষণার এক মাস পার না হতেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহিলা সমিতির সভাপতি রেখা রানী বড়ুয়াকে শ্লীলতাহানি এবং গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে। এমন একটি ভিডিও ইতোমধ্যে কালবেলার হাতে এসেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মের বিশিষ্টজন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরের নন্দনকানন এলাকায় চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে এ ঘটনা ঘটে। এরপর নগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী নারী রেখা রানী বড়ুয়া।
কালবেলার হাতে আসা ভিডিওতে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে রেখা রানী বড়ুয়ার সঙ্গে জিনবোধি ভিক্ষুর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রেখা রানী বড়ুয়ার শাড়ি ধরে টানাটানি শুরু করেন জিনবোধি ভিক্ষু। এ সময় চারপাশের লোকজন জিনবোধি ভিক্ষুকে দমানোর চেষ্টা করেন আশপাশের লোকজন। এর পরও গালাগাল করতে থাকেন জিনবোধি ভিক্ষু।
সাধারণ ডায়রিতে রেখা রানী বড়ুয়া অভিযোগ করেছেন, প্রতিদিনের মতো পূজা করার জন্য বৌদ্ধমন্দিরে যাই। হঠাৎ জিনবোধি ভিক্ষুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমার কাপড়চোপড় খুলে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। আমার স্বামী আমাকে রক্ষা করতে এলে তাকেও বেধড়ক মারধর করে তারা। রেখা রানী বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, ‘আমাকে দেখামাত্র জিনোবধি ভিক্ষু মারতে তেড়ে আসেন। এ বিষয়ে আমি থানায় জিডি করেছি। আমি এ ঘটনার সুবিচার চাই।’
কোতোয়ালি থানার ওসি ওবায়দুল হক কালবেলাকে বলেন, বৌদ্ধমন্দিরে অনুষ্ঠান চলাকালে একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ ও জিনবোধি ভিক্ষুর শাস্তির দাবিতে মিছিল বের করে ‘সম্মিলিত নারী সমাজ’। তারা জিনবোধি ভিক্ষুকে দেওয়া একুশে পদক প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সর্বোচ্চ সংগঠন বাংলাদেশ শঙ্খরাজ ভিক্ষু মহাসভার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বোধিমিত্র মহাথেরো কালবেলাকে বলেন, ‘নারী দিবসে এমন ঘটনায় আমি খুব লজ্জিত। মর্মাহত। নারীনেত্রী রেখা রানী বড়ুয়াকে উনি (জিনোবধি ভিক্ষু) কাপড় টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই।
অভিযুক্ত ড. জিনবোধি ভিক্ষু কালবেলাকে বলেন, ‘ওখানে যে কমিটি আছে। সেটা অবৈধ কমিটি। আজকে আমরা একটা অনুষ্ঠান করতে চাইলে তারা আমাদের বাধা দিয়েছে। এ সময় আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করা হয়।’ শ্লীলতাহানির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ওই নারী খুব ধূর্ত। তিনি আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন। তিনি আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিতে গিয়ে পড়ে গেছেন। দলবল নিয়ে আমার ওপর হামলা করেছেন। আপনারা ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন।’