সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
শেখ হারুন
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০২:১৬ এএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রামে বাড়ছে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার

তুলনামূলক কমছে শহরে
গ্রামে বাড়ছে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার

বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও মোবাইল ফোনের ব্যবহার। কিন্তু ব্যবহারের দিক থেকে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ছিল বিস্তর বৈষম্য। তবে দিন দিন সেই বৈষম্য দূর হচ্ছে। শহরের তুলনায় মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে বরাবরই পিছিয়ে ছিল গ্রামের মানুষ। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে শহরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রামেও বাড়ছে মোবাইল-ইন্টারনেটের ব্যবহার। এমনকি বৃদ্ধির হার শহরের তুলনায় এখন গ্রামে অনেক বেশি। শুধু তাই নয়, বর্তমানে শহরে কমছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের হার। যদিও এখনো মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী শহরে বেশি। এদিকে দেশে মোবাইল ব্যবহারকারী পুরুষ কমলেও বাড়ছে নারী।

সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে শহরে খুব বেশি মোবাইলের ব্যবহার বাড়ছে না। তবে একই সময়ে গ্রামাঞ্চলে মোবাইল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোবাইল ব্যবহারকারীর হার মোট জনসংখ্যার ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এই হার শহরে ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গ্রামে ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ। এই হিসাবে এখনো শহরে মোবাইলের ব্যবহার বেশি। তবে বৃদ্ধির হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি।

২০২০ সালে গ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর হার ছিল ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় দুই শতাংশ বেড়েছে ব্যবহারকারী। আর ২০২২ সালে ছিল ৭১ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

অন্যদিকে, ২০২২ সালে শহরে মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ছিল ৮৩ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ৮২ দশমিক ৭ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। আর ২০২০ সালে শহরে ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী ছিল। চার বছরে বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে শহরের চেয়ে গ্রামে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী বেড়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

শহরের সঙ্গে গ্রামেও বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ছিল ৪১ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে গ্রামে ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। শহরে এই সময়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দিক থেকেও বৃদ্ধির হার শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি।

এদিকে, দেশে পুরুষদের মধ্যে মোবাইল ব্যবহারে আগ্রহ কমছে। অন্যদিকে নারীদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে পুরুষ মোবাইল ব্যবহারকারী ছিল ৮৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বছরের ব্যবধানে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে মোবাইল ব্যবহারকারী পুরুষ।

অন্যদিকে, ২০২২ সালে নারী মোবাইল ব্যবহারকারীর হার ছিল ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৬২ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে নারী ব্যবহারকারী যেখানে বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, সেখানে পুরুষ ব্যবহারকারী কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিসম্প্রতি মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার পেছনে রয়েছে অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফি। অনলাইনে জুয়া খেলার হার সবচেয়ে বেশি। তথ্যপ্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, গ্রামের অনেকে প্রবাসে থাকে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইলের ব্যবহার বাড়ছে। একই সঙ্গে মানুষের সক্ষমতাও আগের থেকে বেড়েছে। তবে গ্রামে মোবাইল ব্যবহারকারী বাড়ার পেছনে বর্তমানে অন্যতম কারণ অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফি। এ কারণে ইন্টারনেটের ব্যবহারও বেড়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামের কিশোর-তরুণরা অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া পর্নোগ্রাফি দেখার প্রবণতাও রয়েছে। পাশাপাশি অনেকে মোবাইলে গেম খেলে। এসব কারণে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ছে। শহরে কমার বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন ডিভাইসের সহজলভ্যতা এবং বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে শহরে মোবাইলের ব্যবহার কম।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শহরের সঙ্গে গ্রামেও ব্যবহারকারী বাড়াটা ভালো খবর। তবে গ্রাম পর্যায়ে এটার নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়ছে। এখান থেকে উত্তরণে বিটিআরসিকে আমরা বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম, কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।

এদিকে, ২০২২ সালে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সংখ্যা কমলেও ২০২৩ সালে বেড়েছে। ২০২২ সালে যেখানে মোবাইল আর্থিক সেবায় হিসাবধারীর হার ছিল ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৭ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৫৫ জনকে নিয়োগ দেবে সিভিল সার্জনের কার্যালয়

তাপপ্রবাহে শিক্ষার্থীরা মাঠে-ঘাটে ঘোরার চেয়ে ক্লাস নিরাপদ: শিক্ষামন্ত্রী

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ না বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শ 

চেন্নাইয়ের জয়ে ফেরার ম্যাচে মোস্তাফিজের ২ উইকেট

নবনিযুক্ত রেড ক্রিসেন্ট চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ

চবির হোস্টেলে আটকে রেখে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

হিট স্ট্রোকে করণীয় শীর্ষক আলোচনা / গরমে লবণ মিশিয়ে পানি-স্যালাইন খেতে হবে

তাজুল ইসলামের সঙ্গে চীনের মন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

দাবদাহে দশ শিক্ষার্থীসহ ১৩ জন হাসপাতালে

যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে নাঙ্গলকোটের বাবুল নিহত

১০

রাজনগরে সড়ক সংস্কারের ভিত্তিপ্রস্তর করলেন জিল্লুর রহমান

১১

জনগণের ওপর চেপে বসে আছে সরকার : আমিনুল হক 

১২

বগুড়ায় বসতবাড়িতে বিস্ফোরণ

১৩

আরও প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

১৪

নওগাঁয় মাদক মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

১৫

এক উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত

১৬

গোপনে ছাত্রীকে বিয়ে করতে গিয়ে ধরা, ভিডিও ভাইরাল

১৭

বিআরটিএর অভিযানে ২৮৯ মামলা 

১৮

বৃষ্টির দীর্ঘ প্রতীক্ষা, সুসংবাদ কবে?

১৯

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলবে কি না জানাল মন্ত্রণালয়

২০
*/ ?>
X