নতুন জামা-জুতার সঙ্গে ঈদ আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করে সালামি। আর সেই সালামিটা হওয়া চাই নতুন নোটে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও নতুন নোট বিনিময় শুরু হয়েছে। তবে এবার নতুন নোট বিতরণে ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ করা হলেও কমানো হয়েছে টাকার পরিমাণ। ফলে গ্রাহকরা তাদের চাহিদামতো টাকা পাচ্ছেন না। শাখায় নতুন নোট না পেয়ে অনেকে ছুটছেন বাংলাদেশ ব্যাংকেও। কিন্তু সেখানে নতুন টাকা বিনিময়ের কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি দেখে তারা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাত থেকে বেশি দাম দিয়ে নতুন টাকা কিনছেন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ৩১ মার্চ থেকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে নতুন নোট বাজারে ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার আট দিনে ছাড়া হবে মোট ১০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার নতুন নোট; যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য। প্রথমবারের মতো এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নতুন নোট বিতরণ হচ্ছে না। যদিও এর আগে প্রতি বছরই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকেও নতুন নোট বিনিময়ের ব্যবস্থা ছিল। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে এবার সেই ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সেনাকল্যাণ ভবনের সামনেই নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে রমরমা ব্যবসা করছেন কারবারিরা।
সেখানে এবার ১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট নিতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য নোটের ক্ষেত্রেও আনুপাতিক হারে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকে না পাওয়ার কারণে এবার ফুটপাতের দোকানিরা দাম হাঁকছেন বেশি। গতবারও নতুন নোট চাহিদার তুলনায় কম ছাড়ায় ব্যবসায়ীরা প্রতি বান্ডিলে সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করেও বেশি নিয়েছিলেন।
নোট কিনতে আসা হাসান জাভেদ বলেন, ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় গিয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নতুন নোট নিতে পারিনি। পরে বাইরে থেকে দরদাম করে ৪০০ টাকা বেশি দিয়ে ২০ টাকার একটি বান্ডিল নিয়েছি।
বাইরে বিক্রির জন্য নতুন টাকা কোথায় পেয়েছেন জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, যারা টাকা নিয়ে আসে, তাদের কাছ থেকেই আমরা কিনে নিচ্ছি। ব্যাংকের পিয়ন থেকে শুরু করে অনেকেই এই টাকা নিয়ে আসে।
ফুটপাতে নতুন নোট কীভাবে আসে, সেই প্রশ্ন নতুন নয়। এর সঠিক উত্তর কখনো মেলেনি। এ প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিবামাত্র টাকা বদলে দেয়। সেই টাকা দিয়ে কোন ব্যক্তি কী করল, তা দেখার বিষয় আমাদের না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ছাড়াও রাজধানীর গুলিস্তান, সদরঘাট, মিরপুর, ফার্মগেট, রায়সাহেব বাজার এলাকায় নতুন নোটের পসরা বসিয়ে থাকেন নিয়মিত ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা নেওয়ার সুবিধা বন্ধ রাখার বিষয়ে মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) এরিয়া হওয়ায় অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধারণের প্রবেশ সংকোচন করা হয়েছে। এ কারণে নতুন টাকা বিতরণ করবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নতুন টাকার নোট যাতে গ্রাহকরা নিতে পারেন, সেজন্য ব্যাংকের শাখা সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০ থেকে ৮০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী নতুন টাকার নোট দেওয়া হবে।
এবার ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ৮০টি ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাপ্তাহিক দুদিন ছুটি ছাড়া ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করা যাবে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে একজন ব্যক্তি একাধিকবার নতুন নোট নিতে পারবেন না।