

ফেনীর সিভিল সার্জন অফিসে সরকারি চাকরি জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনার প্রধান আসামি পরশুরাম উপজেলার সাবেক সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বিকে ফেনী জেলা এনসিপির আহ্বায়ক কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট জেলা এনসিপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফেনী জেলা শাখার আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম সৈকত ও সদস্য সচিব শাহ ওয়ালী উল্লাহ। কমিটিতে বিতর্কিত নাহিদ রাব্বিকে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসে ফেনীর সিভিল সার্জন অফিসে সরকারি চাকরি জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির একটি অডিও ফাঁস হওয়ার পর দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ১৯ জুন রাতে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইফতেখার হাসান ভূঁইয়া এ মামলা করেন। মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বি (২৮) ও চাকরি প্রার্থী আব্দুল কাদেরকে আসামি করা হয়।
নাহিদ রাব্বি পরশুরাম পৌর এলাকার কোলাপাড়া এলাকার নুরুন্নবীর ছেলে ও কাদের অনন্তপুর এলাকার বেলাল হোসেনের ছেলে। মামলার প্রধান আসামি এনসিপি নেতা নাহিদ রাব্বি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন।
ফেনী আদালত সূত্রে জানা যায়, চাঞ্চল্যকর এই ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার দুই আসামির আইনজীবী পার্থ পাল চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট আব্দুল আলিম মাকসুদ। বর্তমানে ওই মামলার অভিযুক্ত নাহিদ রাব্বিসহ দুই আসামির ভয়েস কল রেকর্ড সিআইডির ঢাকার ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে।
ফেনী স্বাস্থ্য বিভাগের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ডা. মো. ইফতেখার হাসান ভূঁঞা হাসপাতালে অবস্থানকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও কল রেকর্ড শুনেত পান। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক নাহিদ রাব্বি ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ‘অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক’ পদে অর্থের বিনিময়ে আব্দুল কাদেরকে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দুই মিনিট ২১ সেকেন্ডের কথোপকথনে নাহিদ রাব্বি ফেনী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পাইয়ে দিবে বলে ১০ লাখ টাকা দাবি করার ঘটনায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
কল রেকর্ডিংয়ে বলতে শোনা গেছে, ‘লিখিত পরীক্ষার আগে বৃহস্পতিবারের (১৯ জুন) মধ্যে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হবে। বাকি টাকা পরীক্ষার পর দিতে হবে।’ এ সময় হৃদয় নামে এক ব্যক্তি দুই লাখ টাকা কম দিতে চাইলে সমন্বয়ক রাব্বি বলেন, ‘১০ লাখ টাকা থেকে এক পয়সাও কম হবে না। চাকরি নিশ্চিত হওয়ার পর টাকা পরিশোধ করবেন।’ হৃদয় এমন কথা বললে নাহিদ রাব্বি বলেন, ‘বাংলাদেশে এসব চলে না। টাকা ছাড়া কিছুই হবে না।’
নাহিদ রাব্বি, জাহাঙ্গীর ও আব্দুল কাদেরসহ গত ৫ আগস্টের পর থেকে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের সঙ্গে সরকারি গাড়িতে করে বিভিন্নস্থানে ঘোরাঘুরি করেন এবং দিনের বেশির ভাগ সময়ে অফিস কক্ষে বসে থাকতেন। এছাড়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভাসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অতিথির আসনে বসতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতা নাহিদ রাব্বির মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সেটা বন্ধ পাওয়া যায়।
ফেনী সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুন ফেনী জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১১৫টি পদের জন্য ১২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিটি পদের জন্য লড়াই করেন ১০৮ জন।
এনসিবির ফেনী জেলার আহ্বায়ক কমিটির নবনির্বাচিত আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম সৈকত বলেন, ‘অনুমোদিত কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ রাব্বি ও ওমর ফারুক শুভর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। নাহিদ রাব্বির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্বাস্থ্য বিভাগের মামলার বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির পর্যালোচনা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে পরশুরাম থানার ওসি মো. নুরুল হাকিম বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের করা মামলায় দুই আসামি বর্তমানে জামিন রয়েছে। বর্তমানে ওই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।’
মন্তব্য করুন