উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোটের উপস্থিতি বাড়াতে এবং নির্বাচন উৎসবমুখর করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। তার পরও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ের হিড়িক পড়েছে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আটজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। সংশ্লিষ্ট উপজেলার রিটার্নিং কর্মকর্তারা ওই প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন বলে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারদের অংশ গ্রহণ বাড়াতে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরও স্থানীয় এ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তারের নানা চিত্র উঠে আসে। এমন প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় দলের হাইকমান্ড। দলীয় এ নির্দেশ অমান্য করে ভোটের মাঠেই রয়ে যান মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা। শুধু তা-ই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও নির্বাচিত হয়েছেন, যা নিয়ে দলে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে দেড়শ উপজেলায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দ শেষে এরই মধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক নিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন।
ইসি ও কালবেলার স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে দেখা গেছে, সাঘাটায় (গাইবান্ধা) চেয়ারম্যান, সিংড়া (নাটোর) চেয়ারম্যান, রোয়াংছড়িতে (বান্দরবান) চেয়ারম্যান, বালিয়াডাংগিতে (ঠাকুরগাঁও) ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, হাকিমপুরে (দিনাজপুর) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, বেড়া (পাবনা) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, বাগেরহাট সদরে সব পদ, মুন্সীগঞ্জ সদরে সব পদ, শিবচরে (মাদারীপুর) সব পদ, বড়লেখায় (মৌলভীবাজার) মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, পরশুরামে (ফেনী) সব পদ, সন্দ্বীপে (চট্টগ্রাম) ভাইস চেয়ারম্যান, কক্সবাজার সদরে ভাইস চেয়ারম্যান, কাউখালীতে (রাঙামাটি) ভাইস চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গার ডামুড়হুদায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং জীবননগরে ভাইস চেয়ারম্যান, নোয়াখালীর হাতিয়ায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, মতলব উত্তরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বগুড়ার সোনাতলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এদিকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলার ভোটের পূর্ণাঙ্গ তপশিল ঘোষণা করেছে ইসি। আগামী ৫ জুন এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। গতকাল নির্বাচন ভবনে ৩২তম কমিশন সভা শেষ ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে, বাছাই ১২ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে। আর ভোট গ্রহণ হবে ৫ জুন। ৫৫টি উপজেলার মধ্যে দুটিতে ইভিএমে ভোট হবে বলে জানান তিনি।