রাজস্ব আদায়ের একটি বড় অংশ আসে শুল্ক থেকে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী সময়ে এ বিষয়টি থাকবে না। উঠে যাবে শুল্ক। তাই এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজস্ব আদায়ের গতি ধরে রাখতে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে এনবিআর। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। সম্পূরক শুল্কের এই হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। আগামী ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক বিভাগের বেশকিছু বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে এনবিআর। বিশেষ করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হয়—এমন নীতি প্রণয়ন করছে শুল্ক বিভাগ। ১৯১ পণ্যের শুল্ক পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে আগামী বাজেটে।
এলডিসি-পরবর্তী সময়ে কিছু পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহারও করে নিতে হবে। তাই আগে থেকে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আসছে বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ কমানো হতে পারে। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় যেসব পণ্যে সম্পূরক শুল্কারোপ করা আছে, তার কোনো পরিবর্তন হবে না বলেও নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আগামী বাজেটে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ উত্তরণের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে শুল্কহার কমিয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে ডলার সংকট তৈরি হয়—এমন পণ্যের শুল্কহার এই বিবেচনায় আসবে না বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, আগামী বাজেটে বিলাসী পণ্যের সম্পূরক শুল্ক কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। বিশেষ করে গাড়ি থেকে শুরু করে বিলাসী পণ্যের শুল্কহার নিয়ে অবস্থান কঠিন হবে। এ ছাড়া শিল্প সুরক্ষায় যেসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক বসানো হয়েছে, সেগুলোর হার একই থাকবে। সেই হিসেবে প্রায় ১৯১ পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে আগামী বাজেটে। এরই মধ্যে আইএমএফের শর্তানুযায়ী সংসদ সদস্যের গাড়ি আমদানিতে শুল্কারোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটিতে বর্তমানে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া আছে। এ ছাড়া আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকেও এনবিআর জানিয়েছে বকেয়া এবং শুল্ক পুনর্বিন্যাস করে শুল্ক ঘাটতি পূরণ করবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুল্কহার যৌক্তিককরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বাজেটে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা কাজে আসবে। তবে যেসব খাত বা পণ্যে এ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে, তার বিকল্প কী হবে। অর্থাৎ শুল্ক প্রত্যাহারের কারণে তৈরি হওয়া রাজস্ব ঘাটতি পূরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।