ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত বিজয়ী হলেও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। হিসাবনিকাশ কষছেন ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকরাও। নির্বাচনী প্রচারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দেখা গেলেও ভোটার উপস্থিতি মোটেও সন্তোষজনক ছিল না। কেন তারা ভোটবিমুখ ছিলেন, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলে। অন্যদিকে, নির্বাচনে হারলেও দুটি কেন্দ্রে ভালো সাফল্য দেখিয়েছেন আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। দুটি কেন্দ্রই আবার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার। একটি কেন্দ্রে জয়ী আরাফাতের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছেন হিরো আলম, যা আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে। এই উপনির্বাচনে জয়ী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য
অনুযায়ী, মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। ১২৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোট পড়েছে মোট ৩৭ হাজার ৪২০টি, যা মোট ভোটের মাত্র ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি কেন্দ্রে আরাফাতের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছেন হিরো আলম। এ ছাড়া একটি কেন্দ্রে দুজনই সমান সংখ্যক ভোট পেয়েছেন। ১০৫ নম্বর কেন্দ্র বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ডিওএইচএস মহাখালীর দ্বিতীয় তলায় (পুরুষ ভোটার) কেন্দ্র-১-এ মোট ভোটার ছিলেন ৩ হাজার ১৮২ জন। ভোট পড়েছে ২২৫টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আরাফাত পেয়েছেন ৭৯ ভোট। আর হিরো আলম পেয়েছেন ১১০ ভোট। এ ছাড়া ১১৩ নম্বর কেন্দ্রে শহীদ বীরবিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল (দক্ষিণ ভবন) (পুরুষ ও মহিলা ভোটার), কেন্দ্র-১-এ মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ১৭ জন। ভোট পড়ে মাত্র ৬০টি। এই কেন্দ্রে আরাফাত ও হিরো আলম উভয়ে সমানসংখ্যক ২৫টি করে ভোট পান। ভোটের সর্বনিম্ন হার হিসেবে দেখা যায়, ১১৪ নম্বর কেন্দ্র শহীদ বীরবিক্রম রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল (উত্তর ভবন) (পুরুষ ও মহিলা ভোটার), কেন্দ্র-২-এ মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ২৪টি, যা শতকরা ০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এই কেন্দ্রে সর্বনিম্ন ভোট পেয়েছেন আরাফাত। তিনি পেয়েছেন ১১ ভোট। হিরো আলম পেয়েছেন ৮ ভোট। আর শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ৩৩ নম্বর কেন্দ্র বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা উচ্চ বিদ্যালয়, পশ্চিম ভাষানটেক (নিচতলা ও দ্বিতীয় তলা) (নারী ভোটার-১) কেন্দ্র-১ এ। এই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৯৯৪টি ভোটের মধ্যে ৮৭৬টি কাস্ট হয়। শতকরা হিসাবে যা ২৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন আরাফাত। তিনি পেয়েছেন ৭৮২ ভোট। বিপরীতে হিরো আলমের ভোট ২৫টি। এ ছাড়া ২৯টি কেন্দ্রে ১০০-এর কম ভোট পেয়েছেন আরাফাত। আর ৫০ ভোটের কম পেয়েছেন ১১টি কেন্দ্রে। ভোটার উপস্থিতির উদ্বেগজনক হারের কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তারা নির্বাচনী প্রচারে থাকলেও নেতাকর্মীদের কেন্দ্রে আসতে উৎসাহ দেননি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিপরীতে শক্ত কোনো প্রার্থী না থাকায় নৌকার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত মনে করে দলীয় নেতাকর্মীরাও ভোট কেন্দ্রে আসেননি। আর জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এ নির্বাচন তেমন গুরুত্ব পায়নি ভোটারদের কাছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ কালবেলাকে বলেন, শক্ত প্রার্থী না থাকায় আমাদের দলের সবাই মনে করেছেন নৌকা জিতবে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাননি। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে উপনির্বাচন হওয়ায় ভোটের হার কমে গেছে।
মন্তব্য করুন