টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩ নম্বর ফটকের দোকানগুলোতে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মাসে প্রায় লাখ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের উন্মুক্ত লাইব্রেরির তিন কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন উন্মুক্ত লাইব্রেরি দেখাশোনা ও পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মফিজ, সা’দ আলী ওরফে চাঁদ ও রিয়াদ। তারা তিনজন লাইব্রেরির কোনায় অবস্থিত টিনের ঘরে থাকেন এবং এখান থেকেই এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সৈকতের ছত্রছায়ায় তারা দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছেন। এর বাইরে শাহজাহান ও ইয়াসিন নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কয়েকটি দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উদ্যানের ৩ নম্বর ফটকে ‘স্বাধীনতা যাদুঘর’ লেখা পিলারে স্থাপিত বৈদ্যুতিক বাতির তার থেকে সংযোগ নিয়ে এ এলাকার সব দোকানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফটকের পাশের ফুটপাতে অবস্থিত বিদ্যুৎ সংযোগের একটি বাক্স থেকে অবৈধভাবে উন্মুক্ত লাইব্রেরিতেও সংযোগ নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্যানের এই গেটে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শ দোকান বসে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫টি দোকানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। প্রতি বাতি বাবদ বিল নেওয়া হয় দৈনিক ৩০ টাকা এবং দুই বাতির বিল একসঙ্গে ৫০ টাকা। প্রতিটি দোকানে গড়ে দুটি করে বাতি ধরা হলে প্রতিদিন মোট বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার টাকার বেশি। এক মাসে প্রায় ৯৭ হাজার টাকা হয়। এ ছাড়া উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে রাতে প্রায় ২০টি উচ্চমাত্রার বাতি জ্বালানো হয়।
লাইব্রেরির বিপরীত পার্শ্বে অভিযুক্ত শাহজাহানের একটি পানির পাইকারি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া তার চটপটি, আইসিক্রম ও চায়ের আরও চারটি দোকান আছে। সবগুলোতে নেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ অবৈধ বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন, উন্মুক্ত লাইব্রেরির তিন কেয়ারটেকারের একেকজন একেকদিন ঘুরে ঘুরে বিল তোলেন। গত শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন এর সত্যতাও পান এই প্রতিবেদক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানদার বলেন, নতুন কেউ দোকান বসালেই সা’দ আলী নিজেই তার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যোগাযোগ করেন।
তবে অভিযোগ স্বীকার করে সা’দ আলী বলেন, ‘উদ্যানের লাইন থেকে সংযোগ নিয়ে আমরা কিছু দোকান চালাই। এখানকার দোকানগুলোও আসলে দুই নম্বর, আমাদের লাইনও দুই নম্বর। এভাবেই সংসার চালাই।’ অবৈধ সংযোগের বিলের টাকা আর কে পায়—জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাইনম্যান খোকা এসব দোকান নিয়ন্ত্রণ করেন।
জানতে চাইলে লাইনম্যান খোকা বলেন, ‘আমি এসব কিছুতে নেই। এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ।’
এ বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘এরকম ভোক্তা পর্যায়ের কিছু আমরা দেখি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন এই দিকটা দেখে।’ তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম আবু মুছা চৌধুরী জানান, এর খবর তারাও জানেন না। বিষয়টি তাদের আওতায় নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাকসুদুর রহমান বলেন, ফুটপাতের যে বাক্স থেকে সংযোগ নেওয়া হয়েছে সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন নয়। এটা ডিপিডিসির আওতাধীন।
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের বক্তব্য জানতে তাকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।