চলনবিল এলাকার জীববৈচিত্র্য ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এজন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প প্রস্তাব করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রকল্প প্রস্তাবনায় মোট ব্যয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ ধরা হয়েছে পরামর্শক বাবদ। এটাকে অত্যধিক উল্লেখ করে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। একই সঙ্গে এই প্রকল্পে ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ দ্বিগুণ অর্থ চাওয়া হয়েছে, যা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর ‘চলনবিল এলাকার পানি ও ভূমি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং জীবনযাত্রার মানের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাবনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে শুধু পরামর্শক খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২৭ পরামর্শকের সম্মানী বাবদ এই অর্থ খরচ করা হবে, যা মোট ব্যয়ের সাড়ে ৫৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই খরচ হবে শুধু পরামর্শকদের সম্মানীতেই।
পরামর্শকের ব্যয় বিশ্লেষণে জানা গেছে, প্রতি মাসে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের টিম লিডারের সম্মানী বাবদ ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ পরামর্শকের জন্য ৫ লাখ ৭০ হাজার, ১৪ পরামর্শকের জন্য ৪ লাখ ৫০, দুই পরামর্শকের জন্য ৩ লাখ এবং অন্য পাঁচ পরামর্শকের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে মাসিক সম্মানী ধরা হয়েছে, যা সমজাতীয় সমীক্ষা প্রকল্পের তুলনায় দ্বিগুণ।
জানা গেছে, গত ৬ মে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে আলোচ্য প্রকল্পের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী। সেই সভায় অত্যধিক পরামর্শক ব্যয়সহ প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
পরামর্শক ব্যয়ের বিষয়ে সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এবং প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকদের সম্মানী পর্যালোচনায় দেখা যায়, উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হালনাগাদকরণ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের টিম লিডারের সম্মানী মাসিক ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বরিশাল অঞ্চলের নদীগুলোর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প প্রণয়নের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশের নদনদীগুলোর তথ্যাদি হালনাগাদকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের টিম লিডারের সম্মানী ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্পের পরামর্শক ফার্মের টিম লিডারের সম্মানী মাসিক ৬ লাখ ৯০ টাকা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৪ মাসে একজনের পেছনেই খরচ ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্য পরামর্শকদের ক্ষেত্রে ১ লাখ ৬৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়। সেই হিসেবে এই প্রকল্পে দ্বিগুণ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় এই ব্যয় প্রস্তাবকে অত্যধিক উল্লেখ করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শকের তালিকায় টিম লিডারের সম্মানী মাসিক ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। এতে টিম লিডারের ১৪ মাসে ব্যয় দাঁড়াবে ৭০ লাখ টাকা। যেখানে প্রস্তাব অনুযায়ী ছিল ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ফলে শুধু একজনের সম্মানী বাবদ কমবে ২৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া অন্য পরামর্শকদের মাসিক সম্মানী অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করার পাশাপাশি পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ বাদ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী কালবেলাকে বলেন, পরামর্শক খাতের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা এবং যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে পরামর্শক খাতের ব্যয় সমজাতীয় অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক গাজী মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পরামর্শক ব্যয় খুব বেশি ধরা হয়নি। তবে পরিকল্পনা কমিশন যেহেতু কাটছাঁট করে সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছে। সেই হিসেবে ব্যয় কাটছাঁট করে ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে।
পিইসি সভা সূত্রে জানা গেছে, পরামর্শকসহ প্রকল্পভুক্ত অন্যান্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ট্যাক্স ধরা হয়েছে। সভায় অর্থ বিভাগের উপসচিব মিলিয়া শারমিন জানান, পরামর্শকসহ প্রকল্পভুক্ত অন্য ব্যয়গুলোর ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ ট্যাক্স ধরে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা যৌক্তিক নয়।