জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে গর্বিত অংশীদার বাংলাদেশ। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা তিন যুগের বেশি সময় ধরে নির্ভীকভাবে কাজ করে চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বিশ্বের ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন। মিশন এলাকায় সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৮ জন। আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশের বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ স্থানে শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশি ৬ হাজার ৯২ জন সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে শান্তিরক্ষার এ মিশনে যুক্ত হয়েছেন নারীরাও।
আজ বুধবার আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন করা হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদান এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল ইরাক-ইরান শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগদানের মধ্যদিয়ে জাতিসংঘের পতাকাতলে যাত্রা শুরু। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ নামিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। আর ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী মোজাম্বিক ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। হাইতি থেকে পূর্বতিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পদচিহ্ন রয়েছে। বসনিয়ার তীব্র শীত, সাহারা মরুভূমির দুঃসহনীয় গরম ও পূর্ব এশিয়ার ক্লান্তিকর আর্দ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। ধর্ম, গোত্র, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও আঞ্চলিক বৈষম্যকে পেছনে ফেলে তারা নিজেদের উৎসর্গ করেছে বিশ্বমানবতার সেবায়। পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, সততা ও মানবিকতার কারণে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা বিশ্বে আজ অনন্য দৃষ্টান্ত।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক সাইদা তাপসী রাবেয়া লোপা জানান, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৬ বাংলাদেশি বিশ্বের ৪৩টি দেশে জাতিসংঘ মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে ১৩টি দেশে আমাদের ৬ হাজার ৯২ জন নিয়োজিত আছে, যার মধ্যে ৪৯৩ জন নারী।
পুলিশের অবদান: পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) ইনামুল হক সাগর জানান, শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের পদযাত্রা সূচিত হয় ১৯৮৯ সালে। এ পর্যন্ত পুলিশের ২১ হাজার ৪৫৩ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে নারী সদস্য রয়েছেন ১ হাজার ৮১০ জন। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মালি, সাইপ্রাস, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, সাউথ সুদান ও লিবিয়ায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ৩৬৪ পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। এর মধ্যে ১২০ জন নারী। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ২৪ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১২ জন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী: আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। ফলে আমরা জাতিসংঘে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের মর্যাদা লাভ করেছি। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের নারীদের অংশগ্রহণের ফলে দেশের সুনাম আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাষ্ট্রীয় আয়োজন: দিবসটি উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মধ্যদিয়ে শুরু হবে দিবসের কর্মসূচি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-২০২৪’ উদ্বোধন করবেন।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।