ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে জোয়ারের পানিতে খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের লিটু সরদারের ঘরের অধিকাংশ জিনিসপত্র ভেসে গেছে। ঘরের মধ্যে এখনো কোমর পানি। পানিতে থইথই করছে তার ঘরসহ পুরো গ্রাম। চারদিকে এত পানি থাকলেও কোথাও এতটুকু বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেক দূর হেঁটে গিয়ে রাস্তার ওপর মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানীয় জল আনতে হচ্ছে তাকে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে মিঠাপানির আধারগুলোতে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের লবণাক্ত পানি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসছে। বিশুদ্ধ পানি না থাকায় গ্রামগুলোর প্রায় ১৫ হাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী একাধিকবার রিং বাঁধ নির্মাণ করে জোয়ারের পানির প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিছুতে কাজ হচ্ছে না। উল্টো জোয়ারের পানি নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে বারবার প্লাবিত করছে গ্রাম। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করেছে। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী।
শুধু পাইকগাছার ১৩টি গ্রাম নয়; খুলনার দাকোপ, কয়রা উপজেলাসহ সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর এবং বাগেরহাটের শরণখোলায় ৬৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। পরিপূর্ণ বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় রিমালের চার দিন পরও জোয়ারের পানিতে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু। গতকাল ফের ভাঙনের মুখে পড়ে কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামটি। এই গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে। শরণখোলার রায়েন্দার কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মতে, খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা এবং সুতারখালী ইউনিয়নের মানুষের পানীয় জলের আধার নষ্ট করেছে রিমাল। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে যেসব ট্যাঙ্কে রাখা হতো, সেগুলোর বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে সংরক্ষিত পানি। জোয়ারের পানি ঢোকায় সুতারখালী চেয়ারম্যানবাড়ি পুকুরসহ মিঠাপানির আধার কয়েকটি পুকুরের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার চলছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের দুঃখ যেন কোনোভাবেই কাটছে না। আইলার আঘাতের ১৫ বছর পার হলেও এখনো এই গ্রামের মানুষ তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে রিমালের আঘাতে ফের লন্ডভন্ড হয়ে গেছে এই গ্রাম। বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি নেই গ্রামের কোথাও। তাই অগভীর নলকূপের নোনাপানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে এই গ্রামের মানুষ।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকমল হোসেন বলেন, এই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামে বিশুদ্ধ পানির আধার কিছু পুকুর ছিল, যা সরকারিভাবে খনন করা হয়েছিল। মানুষ এসব আধার থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করত। কিন্তু জোয়ারের কারণে সেই আধারগুলোর পানি নষ্ট হয়ে গেছে। বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমরাও পাইকগাছার দেলুটি, দাকোপের বটবুনিয়া বাজার, পানখালীর খালসিতে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছি। এ ছাড়া এলাকাগুলোতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে। সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। আশা করছি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির সংকট কেটে যাবে।