হাসান আজাদ
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ০৩:০০ এএম
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:০২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ টাকায়

আংশিক অর্থ
রূপপুর প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ টাকায়

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের চুক্তিমূল্যের অগ্রিমের আংশিক অর্থ মার্কিন ডলারের পরিবর্তে টাকায় পরিশোধ করা হবে। মূলত অগ্রিম অর্থ পরিশোধে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের নির্ধারিত ব্যাংক ভেনোশকোনমন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া এবং দেশে ডলার সংকটের কারণে টাকায় পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ অনুযায়ী, প্রকল্পের মোট চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থের আংশিক রাশিয়ার ঠিকাদারকে বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করবে সরকার। এর পরিমাণ ১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি মাসের শুরুতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মঈনুল ইসলাম তিতাস। রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এতে সম্মতি দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ করা মোট অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে। গত ২ জুন পিআইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিষয়টি সুপারিশের জন্য প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। পরে সভায় সবার সম্মতিতে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রকল্পের চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রিম অর্থের আংশিক টাকায় পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে গত বছর চুক্তিমূল্যের ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধের বিষয়ে সপ্তম জয়েন্ট কো-অরডিনেশন কমিটির (জেসিসি) সভায় ডলারের পরিবর্তে আংশিক অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট

জেনারেল কন্ট্রাক্টের আওতায় অতিরিক্ত চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। স্বাক্ষরিত চুক্তির ধারা ১ অনুসারে এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট ২০২৩ সালের প্রথম কোয়ার্টারের ১০ শতাংশ অগ্রিমের মোট ৬৪ দশমিক ৫১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধের জন্য অনুরোধ করে। অতিরিক্ত চুক্তিতে পাওনা অর্থের কত ভাগ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা যাবে, চুক্তিতে তা উল্লেখ করা নেই। ঠিকাদার তার প্রয়োজন বুঝে নিয়মিত চাহিদা জানাবে।

এদিকে কালবেলার হাতে আসা পিআইসির সভার কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চুক্তি মূল্যের ৯০ শতাংশ (১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার) রাশিয়ার ঋণ সহায়তা এবং বাকি ১০ শতাংশ (এক দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার) বাংলাদেশ সরকার অগ্রিম হিসেবে দেবে।

জেনারেল কন্ট্রাক্টের অনুচ্ছেদ ৪-এর ৪.২ ও নির্মাণকাজের ফাইন্যান্সিং সিডিউলের (অ্যাপেনডিক্স ১০) টেবিল এক অনুসারে বছরে চার কিস্তি করে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৩২ কিস্তিতে ১২৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধের বিষয়টি নির্ধারিত আছে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় ঋণ চুক্তিতে এবং জেনারেল কন্ট্রাক্টে নির্ধারিত শর্তানুসারে প্রয়োজনীয় ইনভয়েস ও ব্যাংক গ্যারান্টি প্রাপ্তি সাপেক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ভেনোশকোনমন ব্যাংকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২ কিস্তিতে ১ হাজার ৭৪ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধাবস্থার কারণে রাশান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ব্যাংকের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আসে। এ কারণে ১০ শতাংশ অগ্রিম পরিশোধ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের চলমান কাজ নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে রাশান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসসি এটমস্টয়এক্সপোর্টের নামে সোনালী ব্যাংকে একই বছরের ২৫ মে একটি এফসি (ফরেন কারেন্সি) হিসাব পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিচালিত এফসি হিসাবে ২০২২ সালের চার কিস্তির ৮২ দশমিক ২২৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ২০২৩ ক্যালেন্ডার বছরের চার কোয়ার্টারের ১০ শতাংশ অগ্রিম বাবদ ৯৭ দশমিক ৪০৫ ও ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরের প্রথম কোয়ার্টারের ৬ দশমিক ৩২৫ মিলিয়ন ডলারসহ মোট পাঁচ কোয়ার্টারের ১০৩ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ডলার জেএসসি এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টকে পরিশোধের জন্য সোনালী ব্যাংককে ব্যাংক অ্যাডভাইস প্রেরণ করা হয়। কিন্তু আজও সেই টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে সোনালী ব্যাংকেও ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় ডলার পাচ্ছে না ব্যাংকটি। সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এর ফলে বিদেশি ব্যাংকের কাছে দেনা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনে সোনালী ব্যাংকের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।

তিনি আরও জানান, চলমান ডলার সংকটের মাঝে ঋণপত্র (এলসি) প্রক্রিয়াকরণে, বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি করা পণ্যের দায় মেটানোর ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। গত ১১ জুন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের কাছে সোনালী ব্যাংকের বকেয়া আমদানি দায় দাঁড়িয়েছে ৭৫৫ মিলিয়ন ডলারে। এ বিষয়ে গত ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক একেএম কামরুজ্জামানকে চিঠি দেন সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দাস। ওই চিঠিতে ৭২টি আমদানি এলসির বকেয়া নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জরুরি সহায়তার অনুরোধ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওমানে মাছ ধরে বাসায় ফেরা হলো না ৮ বাংলাদেশির

সাংবাদিক শহীদুল আলমকে আটকে রিজভীর উদ্বেগ

নির্বাচন নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে : কফিল উদ্দিন

দুদিন পর উদযাপিত হবে জবির এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে বড় লাফ, ফের ইতিহাস

জবি শিক্ষার্থীদের বিশেষ বৃত্তি, যেভাবে করতে হবে আবেদন

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

শহিদুল আলমের আটকের প্রচারিত ছবির বিস্তারিত জানা গেল

ডেঙ্গু জ্বরে জবির সাবেক শিক্ষার্থী সানজিদার মৃত্যু

সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা পেছানোর দাবি

১০

প্রতি বছর ১ ফুট হারে তলিয়ে যাচ্ছে যে শহর

১১

ঘুমন্ত স্বামীর গায়ে ফুটন্ত তেল ঢেলে মরিচ গুঁড়া মাখিয়ে দিলেন স্ত্রী

১২

ধর্ষণের অভিযোগ করার পর অভিযোগকারীকেই স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গ্রেপ্তার

১৩

আ.লীগে যোগ দেওয়া রফিকুল এবার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদপ্রার্থী

১৪

শহিদুলের ভিডিওবার্তা নিয়ে যে তথ্য দিল বাংলাফ্যাক্ট

১৫

মাঝ সমুদ্রে ভাসতে থাকা ২৬ জেলেকে উদ্ধার

১৬

কেন শুধু জাতীয় দলের হয়েই খেলতে চাইলেন রোনালদো?

১৭

যে শহরে দিনে ২ ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ!

১৮

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে লালুর বক্তব্য ব্যক্তিগত : বিএনপি

১৯

নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া শাপলার ৭ নমুনা প্রকাশ এনসিপির

২০
X