রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে দিনমজুরের কাজ করছিলেন ছবিরন বেগম। থাকেন ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের জোয়ার আমতা গ্রামে। অন্যের দেওয়া ২ শতাংশ জমিতে ঘর তৈরি করে কোনোরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে তার। বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েও বেঁচে থাকার তাগিদে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। দুই মেয়েকে নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে জীবন পার করছেন। অভাবের কারণে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেননি। অল্প বয়সেই গ্রামের ধর্নাঢ্য ব্যক্তি ও মধ্যবিত্ত ব্যক্তিদের সাহায্য সহযোগিতায় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি একাই থাকেন। অভাবের সংসারে তার ঘরে নেই কোনো ঈদ আনন্দ।
ছবিরনের মতে, ২০ বছর ধরে কাজ করে সংসারের হাল ধরছি। ১৫ বছর আগে আমার স্বামী বাদল দুই মেয়ে রেখে মারা যায়। জোয়ার আমতা গ্রামে থাকলেও রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাই মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া, বালিয়াটি, হাজিপুর ও কুষ্টিয়াতে। বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এখন কাজ করছি বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। কাজ করতে হয় একটানা। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্না করে খাবার নিয়ে বের হই। হেঁটে সকাল ৮টার আগেই কর্মস্থলে পৌঁছাই। কাজ করলে প্রতিদিন ৪০০ টাকা রোজ (হাজিরা) পাই রাজমিস্ত্রি সহযোগী হিসেবে। কাজ শেষে আবার ক্লান্ত শরীরে বাড়ির পথে রওনা হই। একা মানুষ, আমার আবার ঈদ কি!
আরেক নারী মমতাজ বেগম। ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের জোয়ার আমতা পশ্চিমপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। তিনি ঘরকন্নার কাজ ছাড়া বাইরে আর্থিক রোজগারের কোনো কাজ করেন না। স্বামীর রেখে যাওয়া ঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি আর তার সন্তানরা। কিন্তু দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে মমতাজ বেগমেরও সুখের সংসার ছিল।
মমতাজ বেগম বলেন, স্বামী আবদুল হাই পাঁচ বছর আগে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ রেখে মারা যায়। সম্পত্তি বলতে স্বামীর রেখে যাওয়া শুধু ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। বাবার ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়ে বড় ছেলে অল্প বয়সেই সংসারে বোঝা কাঁধে নেয়। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট ছেলে লেখাপড়া করছে। কীভাবে এত টাকার ঋণ পরিশোধ করব বুঝতে পারছি না। দুবেলা দুমুঠো খাবার ব্যবস্থা করতেই অনেক কষ্ট করতে হয়। সেখানে কীভাবে ঈদে আনন্দ করব। স্বামীর রেখে যাওয়া ভাঙা ঘরে দুই ছেলেকে নিয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত করছি।
মন্তব্য করুন