শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
জাহিদ বিন মোস্তফা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৫ এএম
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার

ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ উভয়ই তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। কোরআন বলা হয়েছে, ‘নারীদের ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন রয়েছে পুরুষদের।’ নারীর সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশি।

এ অংশ নির্ধারিত’

সমাজের অর্ধেক পুরুষ, অর্ধেক নারী। ইসলাম নারীকে দিয়েছে সব ধরনের অর্থনৈতিক অধিকার। তবুও তারা আজ অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত। উত্তরাধিকার, দেনমোহর, ভরণপোষণ ইত্যাদি নানাদিক থেকে নানাভাবে বঞ্চিত নারীরা। অন্যদিকে সঠিক জ্ঞান না থাকায় ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে মর্মে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। ইসলামে উত্তরাধিকার আইনে পুরুষদের চেয়ে নারীদের সম্পদের অংশ কম দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে যুক্তিসংগত কারণ বুঝতে না পেরে অনেকে ইসলামী নীতিমালা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। তাদের ধারণা, নারীদের প্রতি ইসলামের আইন হলো বৈষম্যমূলক। পবিত্র কোরআনের বিধান অনুযায়ী, সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। এরপরও মহাবিজ্ঞানময় পূর্ণ জীবনবিধান সম্পর্কে না বুঝে অনেকে কটাক্ষ করে থাকেন। সত্য অনুসন্ধিৎসু সুন্দর মনের অবলোকনের জন্য সম্পত্তিতে নারীর যে কোরআনিক অধিকার রয়েছে, তা জানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমাজে কোরআনের আইন মোতাবেক নারীরা সম্পত্তি সর্বক্ষেত্রে পাচ্ছে না বিধায় তারা আজ অধিকারহারা, সম্পত্তিহারা ও নির্যাতিতা। এজন্য মানবতার ধর্ম ইসলামকে কটাক্ষ করা মানে এর বিরোধিতা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর বর্তমানে নারীর এ বঞ্চনার জন্য প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত সমাজব্যবস্থা দায়ী।

ইতিহাস সাক্ষী বিশ্বমানবতার বন্ধু হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম অধিকারহারা নারী জাতির প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বাস্তব ঘোষণা দেন। পূর্বের প্রায় সব সভ্যতা ও মতবাদ নারীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে কুক্ষিগত করে তাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি কিংবা ভোগ্যপণ্যে পরিণত করেছিল। আধুনিক যুগেও তাকে নানা চটকদার স্লোগানে বাঁধনহারা করেছে। একশ্রেণির লোক নারীদের অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলে বিজ্ঞাপনে পরিণত করেছে। অসংখ্য নারীর জীবনকে নৈতিক চরিত্রহীনতার স্তরে ঠেলে দিচ্ছে। নারীর মানবিকতা তুলে না ধরে শরীরকে তুলে ধরে সমাজে তাদের পণ্য হিসেবে প্রদর্শন করেছে অহরহ। অথচ ইসলাম বলেছে, ‘তোমার জিনা-ব্যভিচারের কাছেও যেও না, এতে ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি অবশ্যম্ভাবী।’ ইসলাম সর্বপ্রথম নারীকে একটি সত্তা হিসেবে এবং তার ব্যক্তিগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যখন নারীকে মানুষ হিসেবেই স্বীকার করা হতো না, তখন ইসলাম এসে ঘোষণা করল, ‘হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি দুজন হতে নর-নারী ছড়িয়ে দেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যার নামে তোমরা একে অন্যের কাছে প্রার্থনা করো এবং সতর্ক থাকো জ্ঞাতি সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা নিসা: ১)। নারীদের যখন অবরুদ্ধ করে রাখা হতো এবং তাদের পাওনা মোহরানা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হতো, তখন কোরআন ঘোষণা করল, ‘তোমরা তাদের যা দিয়েছ, তা হতে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখবে না।’

পবিত্র কোরআনের বণ্টননীতি অনুযায়ী একজন তিনটি সূত্র থেকে তিনভাবে সম্পদ লাভ করেন—১. মিরাস। ২. মোহর। ৩. নাফাকা। অর্থাৎ পিতার মৃত্যুর পর মিরাসের অংশ। বিয়ের সময় স্বামী থেকে উপযুক্ত দেনমোহর এবং স্বামীর পক্ষ থেকে জীবনধারণের ওয়াজিব খরচ, বাসস্থান, খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি; যাকে আরবিতে নাফাকা বলা হয়। পক্ষান্তরে পুরুষ শুধু একটি সূত্র থেকে সম্পদ লাভ করে, সেটা হলো মিরাস। কিন্তু সমাজে নারীর এসব অর্থনৈতিক সূত্রগুলো বন্ধ করে রেখেছে এবং এসব অধিকার নিশ্চিত না করে নানা বিতর্কের অবতারণা করা হয়, যাতে ডুকরে কাঁদে অপ্রাপ্তিগুলো। ইসলামে দেনমোহরের এত সুন্দর বিধান থাকা সত্ত্বেও সমাজে এখন উল্টো ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। পাত্র কাবিন তো পরিশোধ করেই না, উল্টো কন্যাপক্ষ থেকে উপহারের নামে যৌতুক নেয় আর মেয়ের বাবার ঘাড়ে একরাশ বরযাত্রী খাওয়ানোর বোঝা চাপিয়ে দেয়। ইসলামে যৌতুক নেওয়া সম্পূর্ণরূপে হারাম ও কনেপক্ষকে যে কোনোরকম জুলুম করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সবাই তা বেমালুম ভুলে যায়। আমরা কি জানি, আমাদের ধর্মে মেয়ের পক্ষ বিয়ের খরচ দিতে পর্যন্ত বাধ্য নয়। এমনকি ছেলের বাবা-মায়েরও দায়িত্ব নয় বিয়ের খরচ বহন করা। ছেলের দায়িত্ব হলো বিবাহের ভোজস্বরূপ অলিমার আয়োজন করা এবং কাবিন পরিশোধ করা।

ইসলামের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণার পূর্বে পৃথিবীর কোনো জাতিই নারীর কোনো কিছুর ওপর নিজস্ব অধিকার স্বীকার করত না। ইসলাম এসে নারীজাতির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা স্বীকার করেছে। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য।’ ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ উভয়ই তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। কোরআন বলা হয়েছে, ‘নারীদের ন্যায়সংগত অধিকার আছে যেমন রয়েছে পুরুষদের।’ নারীর সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশি। এ অংশ নির্ধারিত।’ (সুরা নিসা: ৭)। ইসলাম একাধারে কন্যা, স্ত্রী, ভগ্নি, মাতা হিসেবে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নর-নারী সবাইকেই দ্বীনের সহিহ বুঝ দান করুন।

লেখক: আলেম ও প্রাবন্ধিক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৪২ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুই’ বলায় তুমুল সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ 

চার দেশে বন্যায় ১৫০০ মৃত্যুর পর নতুন আতঙ্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত

শাহজালালে ‘এয়ারপোর্ট মিনি ফায়ার এক্সারসাইজ-২০২৫’ সম্পন্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম

ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া

তারেক রহমানের ৩১ দফায় বদলে যাবে শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

এরশাদ-হাসিনা কারও সঙ্গেই আপস করেননি খালেদা জিয়া : মিল্লাত

১০

মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত নোটিশ, আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

১১

সব দল ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হবে ইনশাআল্লাহ : অধ্যাপক মুজিবুর

১২

মনোনয়নের খবর শুনে উচ্ছ্বাস, কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতার মৃত্যু

১৩

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা / সাবেক বিচারপতি-হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

১৪

ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

১৫

ববি উপাচার্য দপ্তরে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ

১৬

ধেয়ে আসছে তীব্র শীত, দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ

১৭

‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

১৮

নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে ২ রাজনৈতিক দল

১৯

বেওয়ারিশ কুকুরের প্রতি সামিনের ‘অদ্ভুত’ ভালোবাসা

২০
X