বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির পুরান ঢাকায় প্রতি বছর পবিত্র শবেবরাত বিশেষভাবে পালন করা হয়। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে এখানকার আনুষ্ঠানিকতা চোখে পড়ার মতো। লিখেছেন—বৃষ্টি শেখ খাদিজা
শবেবরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকার অলিগলিতে নকশাদার সুস্বাদু রুটির পসরা দেখা যায়। যার মধ্যে কোনোটি দেখতে মাছের মতো, কুমিরের মতো অথবা ফুলের মতো। যার ভেতরে মোরব্বা আর কিশমিশে ঠাসা, ওপরে চেরির সজ্জা। পুরান ঢাকার এই বিশেষ রুটির নাম বরাতি রুটি। শুধু একদিনই এ রুটি বেচাকেনা হয়ে থাকে।
শবেবরাতের আগের রাতভর পুরান ঢাকার বিভিন্ন বেকারির কারখানায় রুটি তৈরির কর্মযজ্ঞ চলে। সকাল থেকে সেগুলো ভ্যানে করে দোকানে এনে থরে থরে সাজিয়ে রাখেন কর্মীরা। ফেন্সি রুটি গোল, চারকোনাসহ নানান আকৃতির হয়ে থাকে। এর মধ্যে মাছ আদলের রুটি ক্রেতাদের নজর কাড়ে। এতে রয়েছে খাঁজকাটা নকশা। আর মাছের চোখ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে মার্বেল। এ ছাড়া ফুলসহ অসংখ্য নকশার সমাহার দেখা যায় রুটিতে। রুটির স্বাদ বাড়াতে কারিগররা ব্যবহার করেন মোরব্বা, কিশমিশ, বাদাম ও তিল। বেশিরভাগ রুটিতে মধু মাখা থাকে। মধু দেওয়া রুটিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তিল। মধু ছাড়াও ফেন্সি রুটি পাওয়া যায়।
চকবাজারে মূল সড়কের পাশে শামিয়ানা ও প্যান্ডেল সাজিয়ে সারিবদ্ধভাবে বসে রুটির দোকানগুলো। এ ছাড়া চানখাঁরপুল ও নারিন্দায় রাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি।
বংশপরম্পরায় অনেকে শখেরবশে ফেন্সি রুটি বিক্রি করেন। মোহাম্মদ শিহাব তাদেরই একজন। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘শখ থেকে বিভিন্ন নকশার ফেন্সি রুটি বানানো হয়। দাদার আমল থেকে শুরু করে বাবার পর এখন আমরা পুরান ঢাকার শতবছরের এ ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’
একেকটি রুটির ওজন আধা থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি কেজি এসব রুটি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
পুরান ঢাকায় রুটির পাশাপাশি বিক্রি হয় হালুয়া। এর মধ্যে থাকে গাজর, দুধিয়া, হাফসি, বুট, সুজি, লাউ ও বাদামি হালুয়া। এগুলোর কেজি ৩০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
শবেবরাত উপলক্ষে হালুয়া বানিয়ে বিশেষ নকশার ছাঁচে ফেলে কাটা হয়। এগুলোকে স্থানীয়রা বলে থাকে বরফি বা মাসকাট। অরেঞ্জ, লাল, করাচি ও ফ্রুট মাসকাট দেখা মেলে শবেবরাতের দিন। ক্রেতাদের মধ্যে এসব খাবারের চাহিদা ব্যাপক।
পুরান ঢাকার সাতরওজা এলাকায় আনন্দ বেকারি শবেবরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটির বিশেষ বিশেষ পদ তৈরি করে। ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য দোকানের বাইরে রাখা হয় ব্যানার।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আলাউদ্দিন সুইটমিট হালুয়া-রুটির বিশেষ আয়োজন রাখে। শবেবরাতের সকাল থেকে এগুলো বেচাকেনা চলে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে এখানে রয়েছে সুদৃশ্য বাক্স।
পুরান ঢাকায় বোম্বে সুইটসে হালুয়া এবং বোম্বে বেকারিতে ফেন্সি রুটি বিক্রি হয়। দুই ভাই দুটি প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করছেন। বেকারিতে এক ও দেড় কেজি ওজনের ফেন্সি রুটি বিক্রি হয়। প্রতি কেজির মূল্য ৪০০ টাকা। হালুয়া-রুটি কিনতে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা পুরান ঢাকায় ভিড় করেন। অনেকে হালুয়া-রুটি কেনার জন্য এখানে লোক পাঠান।