ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির আক্রমণের মুখে নিজের মন্ত্রিসভা ‘পঞ্চরত্ন’ ও পুরো বাহিনী নিয়ে পালিয়ে যান মধ্যযুগীয় বাংলার রাজা লক্ষ্মণ সেন। প্রায় ৮শ বছর আগে লক্ষ্মণ সেন যেভাবে পালিয়েছিলেন, অনেকটা একইভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে জীবন বাঁচান টানা সাড়ে ১৫ বছরের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের আজকের এইদিনে দুপুর আড়াইটার দিকে তার পলায়নের মধ্য দিয়ে পুরো জাতি মুক্তি পায় এক ফ্যাসিবাদী শাসনের জিঞ্জির (শৃঙ্খল) থেকে। আর হাসিনার পালানোর খবর শুনে বিজয়ের আনন্দে পথে নেমে আসা হাজার হাজার মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা ঢুকে পড়ে গণভবনে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় ওই বাসভবনে ঢোকে বিপ্লবী জনতা তাদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখায়। হাসিনার শোবার ঘর থেকে শুরু করে গণভবনের প্রতিটি কক্ষেই ঢু মারেন তারা। এ সময় কিছু অতিউৎসাহী লোভী মানুষ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সেখান থেকে নিয়ে যান। এ ঘটনাকে ‘লুট’ উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
সেদিন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা গণভবন ছাড়ার পরপরই হাজার হাজার জনতা ফটক ভেঙে, প্রাচীর টপকে সেখানে ঢুকে পড়ে। কাছাকাছি সময়ে এ প্রতিবেদক গণভবনে গিয়ে সেখানকার মাঠে দুহাত উঁচু করে উল্লাস করতে দেখেন শত শত জনতাকে। কেউ কেউ সেখানে শোকরানা নামাজও আদায় করছিলেন। কেউবা আবার হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকে তাদের অনেককে গণভবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। তবে প্রকৃত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা হাসিনার পতনের পর সেদিন রাজপথেই আনন্দ মিছিলে ব্যস্ত ছিলেন। আর সাধারণ মানুষ চারদিক লাল ইটের উঁচু সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা বিশাল চত্বরটির মধ্যে কী এমন আছে, সেই কৌতূহল মেটাতে ঢুকে পড়েন গণভবনে। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় তাদের অনেকের হাতেই হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত নানা জিনিসপত্র দেখা যায়। এ ছাড়া গণভবনের সরকারি সম্পদ নষ্ট করেন একশ্রেণির মানুষ। জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া কিংবা নষ্ট করার সেসব চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি প্রতিবেদন আকারে গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়। মূলত একজনের দেখাদেখিতে অন্যরাও একইভাবে জিনিসপত্র নিয়েছিলেন। তারা সেসব জিনিস স্বৈরাচার পতনের স্মারক বা স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবে এমন ঘটনা দেশের মানুষকে লজ্জিত করেছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন