বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত গত এক যুগে একসঙ্গে দ্রুত বিস্তৃতি ও গভীর জটিলতায় পৌঁছেছে। তার ওপর অতীতের গঠনগত দুর্বলতা—Non Performing Loan (NPL), দুর্নীতি ও তদারকির ঘাটতি—কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ২০২৩-২৫ সময়কালে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শে একগুচ্ছ নীতিগত ও সাংগঠনিক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে। বলাই বাহুল্য, এসবই করা হয়েছে ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে স্থিতিশীল, প্রযুক্তিনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে। এ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি পরিণত ও ত্বরিত পরিবর্তনের ধারায় রয়েছে। এখানে মুদ্রানীতি, তদারকি কাঠামো, SOB (state-owned bank) ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং আন্তর্জাতিক শরিকদের শর্তাদি একসঙ্গে এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে চালিত ও প্রভাবিত করছে। যদিও রূপরেখা ও নীতিসংকলন শক্তভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে, বাস্তবতায় রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতার কেন্দ্রায়ন, তথ্যগত অপূর্ণতা ও প্রতিষ্ঠানগত ক্ষমতার ঘাটতির মতো বহু অন্তর্ভুক্তিহীনতা এখনো ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে। এই নিবন্ধে মূলনীতি ও বাস্তবায়নের দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হলো। এর পাশাপাশি কিছু সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ এবং প্রস্তাবনাও রয়েছে।
১. আন্তর্জাতিক চাহিদা, তহবিল ও শর্তাবলি—চাপ এবং সুযোগ
২০১৯-২৫ সময়কালে বাংলাদেশ বহু আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে; বিশেষ করে আইএমএফের তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) প্রোগ্রামগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য। আইএমএফের পর্যালোচনা ও তহবিল রিলিজের শর্ত হিসেবে প্রণীত অনেক রূপরেখা—যেমন রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, মুদ্রানীতিগত শাসন এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য কাঠামোগত সংস্কার—গৃহীত হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ পড়েছে দ্রুত ফলাফল দেখানোর। আইএমএফের সাম্প্রতিক রিভিউতে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সামঞ্জস্য ও অতিরিক্ত রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ করতে প্ররোচিত করা হয়েছে, যার বিনিময়ে তহবিল রিলিজ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: আন্তর্জাতিক আচার-অনুশাসন মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন হলেও, স্থানীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বিবেচনায় না নিলে কোনো নীতির সরল রূপান্তরকেই কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ কারণেই অর্জনসমূহ বাস্তবতার বদলে কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এমতাবস্থায়, শর্তাদি বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক, স্বচ্ছ ও গৃহীত রোডম্যাপ অপরিহার্য।
২. SOBs (State-Owned Banks) সংস্কার ও AQR (Asset Quality Review—দায়বদ্ধতা ও পুনর্গঠন
SOBs-এর দুর্বলতাই বহুদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সমস্যার উৎপত্তির কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার প্রস্তাবিত ১০-পয়েন্ট রেসকিউ প্ল্যান ও রিফর্ম প্যাকেজে SOBs-এর পরিমার্জন ও পুনর্গঠনকে প্রথম সারিতে রাখা হয়েছে—এতে ব্যাংক রেজল্যুশন ফ্রেমওয়ার্ক, প্রাক-অ্যাকশন রিমেডিয়েশন, ম্যানেজমেন্ট রিলোকেশন এবং সম্ভাব্য মিশন/মার্জার পরিকল্পনাও আছে। বিশ্বব্যাংকের এ সুপারিশগুলো SOBs-কে আর্থিক স্বাধীনতা ও বিপদ-মোচনে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: SOBs-এর সংস্কার রাজনৈতিক ইচ্ছা ছাড়া সফল হবে না—কারণ উচ্চস্তরের নিয়োগ, প্রশাসনিক কাঠামো ও রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই ছিল মূল সমস্যা। যদি পুনর্গঠনের সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন ধীরগতিতে অথবা অপ্রতুল আচরণে সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে, SOBs-এর পুনর্গঠনকে কেবল প্রযুক্তিগত কাজ না করে আইনগত ও প্রশাসনিক স্বাধীনতার রোডম্যাপ হিসেবেও দেখা জরুরি।
৩. অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (AQR) ও দুর্নীতির তদন্ত—সত্য উন্মোচন ও পরিণতি
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের AQR শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে (Big Four) দিয়ে ব্যাংক-সম্পর্কিত বড় চুরির/ ধ্বংসাত্মক ব্যয়/সম্পদ উদ্বৃত্ত অনুসন্ধান করানো হয়েছে—এর লক্ষ্য হলো সম্পদ-অপসারণ ও অনিয়মের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়া ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হলেও, একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক আনুকূল্যের কারণে ফলাফল সময়সাপেক্ষ কিংবা আংশিক হতে পারে।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: AQR-এর সত্যিকারের শক্তি তখনই প্রকাশ পাবে যখন অনুসন্ধানের ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও পুনরুদ্ধারের কদমে পরিণত হবে—তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইন-প্রয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নির্ধারণী ভূমিকা রাখবে, নিঃসন্দেহে।
৪. NPL (Non-Performing Loans)—পরিসংখ্যান, প্রকৃত প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি
২০২৪-২৫-এ NPL-এর হার কিছু ব্যাংকে উদ্বেগজনকভাবে উচ্চ—এই খাতে, এটি একটি মৌলিক বিপদ সংকেত। খবরপত্র ও গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, ক্যাপিটাল প্রভিশনিংয়ের ঘাটতি, ক্রেডিটের দুর্বল মূল্যায়ন ও সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন (related-party lending) প্রভৃতি বিষয় NPL-এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়ই NPL নিয়ন্ত্রণে একটি শক্ত রোডম্যাপ উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক নীতিমালা, রিজিউলেটরি রিক্যাপিটালাইজেশন এবং দেউলিয়া-কাঠামো উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: NPL-এর চিরস্থায়ী সমাধান কেবল ব্যাংকের অ্যাকাউন্টিং বা প্রোভিশন বাড়িয়ে হবে না। প্রয়োজন কার্যকর ঋণদানের নতুন সংস্কৃতি, শক্তিশালী পরিকল্পনাভিত্তিক ক্রেডিট মূল্যায়ন, ডাইভার্সিফায়েড রিস্ক ও আইনগত দেউলিয়া কাঠামোর বিকাশ। এ ছাড়া লেনদেন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা ও আর্থিক তথ্য-প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা জরুরি।
৫. ডিজিটাল ব্যাংকিং ও পেমেন্ট অবকাঠামো—সুযোগ ও বিপদ
ডিজিটাল ব্যাংক ও MFS-এর (Mobile Financial Services) দ্রুত প্রসার বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করেছে—খাস উদাহরণ বিকাশ, নগদ ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিজিটাল ব্যাংক গঠন ও লাইসেন্সিং নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর চালু করেছে এবং পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট আইনও আপডেট হচ্ছে; একই সঙ্গে ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকের সম্ভাব্য সুবিধা হলো—কম খরচে বাধ্যতামূলক সেবা, গ্রামীণ অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনী পণ্য সরবরাহ।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: ডিজিটাল ব্যাংকিং বাড়লেও সাইবার সিকিউরিটি, ডাটা প্রাইভেসি, কাস্টমার প্রটেকশন ও AML/CFT (Anti-Money Laundering / Combating the Financing of Terrorism) ঝুঁকি বৃদ্ধিই প্রকট। Regulative arbitrage (যেখানে ডিজিটাল ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষ রেগুলেশন এড়িয়ে যায়) এবং Shell-company sponsorship-এর আশঙ্কা দেখা গেছে—এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করলে সিস্টেমিক ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই লাইসেন্সিংয়ের সঙ্গে কঠোর KYC, টেকনিক্যাল অডিট এবং কমপ্লায়েন্স মনিটরিং বাধ্যতামূলক করা উচিত।
৬. AML/CFT
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, MFS (Mobile Financial Service) ও ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার AML/CFT-এর গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। এখানে BFIU (Bangladesh Financial Intelligence Unit), BB (Bangladesh Bank) ও অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে AML/CFT ফ্রেমওয়ার্ক শক্ত করা হয়েছে, তবে বাস্তবায়নের দ্রুততা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়—বিশেষত বড় লেনদেনের অনুরোধ ট্র্যাকিং এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহায়তায় দ্রুত তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: AML/CFT কার্যকর করতে শুধু নিয়ম থাকলেই হবে না—রেগুলেটর ও ব্যাংকগুলোর হাতে আধুনিক ট্রান্সঅ্যাকশন-মনিটরিং সরঞ্জাম, বিস্তৃত প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকতে হবে। নইলে তহবিল-সংস্থাগুলো দ্রুত ও গোপনে স্থানান্তর হতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৭. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও গুঞ্জন—নীতি প্রয়োগে বাধা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর ও নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক ভূমিকা গঠনে ‘স্বাধীনতা’ অপরিহার্য। অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট ও বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকলে রেগুলেটরি পদক্ষেপ দুর্বল বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। স্বচ্ছতা ও আইনগত স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে, দুর্নীতি ও সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বব্যাংক, ADB (Asian Development Bank)-এর রিপোর্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও স্বাধীনতার জোরালো রূপায়ণ সুপারিশ করা হয়েছে।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: স্বাধীনতা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না—তবে তা বিঘ্নিত হলে কোনো রিকভারি স্ট্র্যাটেজি টেকসই হবে না। আইনগত গ্যারান্টি, নিয়োগ-প্রক্রিয়ার জবাবদিহি ও বাজেট স্বচ্ছতা জোরদার করা উচিত।
৮. ডিপোজিট প্রটেকশন, রেজল্যুশন ও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট
বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সুদৃঢ় ডিপোজিট প্রটেকশন ফান্ড এবং রেজল্যুশন ক্ষমতা একটি দেশে ব্যাংকিং সেক্টরের স্থিতিশীলতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রিস্ক-ভিত্তিক রেজল্যুশন কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পে ডিপোজিট প্রটেকশন ও ফান্ডিং ডিভাইস তৈরির সুপারিশ আছে। এটি ডিফল্ট পরিস্থিতিতে ট্যাক্সদাতাদের ওপর চাপ হ্রাস করবে এবং গ্রাহকদের আস্থাকে সুরক্ষা দেবে।
সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: রেজল্যুশন ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর করতে হলে স্পষ্ট আইন গঠনের পাশাপাশি ত্বরিত বাস্তবায়ন দক্ষতা দরকার। তহবিল ও লিকুইডিটি সরবরাহ দেরি হলে Systemic contagion দেখা দিতে পারে।
৯. বাস্তবায়ন জটিলতা: ক্ষমতা, রাজনীতি ও সামাজিক প্রভাব
নির্ধারক নীতি থাকলেও বাস্তবায়নের সময় তিনটি বড় বাধা দেখা দেয়—(ক) প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব, (খ) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও স্বার্থসংকুলতা, (গ) সামাজিক প্রভাব—বিশেষত কর্মস্থান হ্রাস ও সংক্ষিপ্ত মেয়াদে আর্থিক কঠোরতা। এই বাধাগুলো সমাধান না হলে সংস্কারগুলো আংশিক বা নিষ্প্রয়োজনীয় রূপে থেমে যেতে পারে। তাই সংস্কার প্রোগ্রামে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
১০. সুপারিশ: কৌশলগত ও বাস্তবায়নমূলক
নিচের সুপারিশগুলো সময়োপযোগী, বাস্তবসম্মত ও প্রয়োগযোগ্য—যদি জোরালোভাবে গ্রহণ করা হয় তবে সংস্কারগুলো টেকসই হবে বলে আশা করা যায়:
ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত স্বাধীনতা শক্ত করা: নিয়োগ প্রক্রিয়া, বাজেট ও নীতিগত স্বাধীনতা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। (অন্তর্ভুক্তি: স্বাধীন তদারকি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ)।
খ. SOBs-এর রূপান্তর পরিকল্পনায় রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিধান: SOBs-এর ম্যানেজমেন্টের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য আইনগত ও প্রশাসনিক গ্যারান্টি জরুরি।
গ. AQR ও তদন্তের ফলাফল দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ: তদন্তাধীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারের কার্যকর কৌশল গঠন ও বাস্তবায়ন।
ঘ. ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সিং ও AML/CFT-এর কঠোর বাস্তবায়ন: ডিজিটাল ব্যাংক ও MFS-এ Shell company and related-party risk বন্ধ করতে লাইসেন্সিং শক্ত করা আবশ্যক।
ঙ. ডিপোজিট প্রটেকশন ফান্ড ও রেজল্যুশন বডি প্রতিষ্ঠা করা: সিঙ্গেল রেজল্যুশন ফান্ড ও সর্বজনীন ক্রাইসিস প্ল্যান তৈরির জন্য আইন ও বাস্তবায়ন কৌশল হাতে নেওয়া প্রয়োজন।
চ. মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ: রেগুলেটরি বডি ও ব্যাংকগুলোকে আধুনিক মনিটরিং টুল, সাইবার-রেসিলিয়েন্স এবং প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করা উচিত।
বাংলাদেশ এখন একটি সংকট-প্রেক্ষাপটে থাকা সত্ত্বেও সংস্কারের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে—বিশ্বব্যাংক, IMF ও ADB-এর সমর্থন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ এবং ডিজিটাল উদ্ভব সব মিলিয়ে খাতটিকে পুনর্গঠনের পথপ্রদর্শন করছে। তবে সফলতা অনিবার্য নয়; সেটি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দৃঢ়তা, নীতি-বাস্তবায়ন ক্ষমতা, আদালতনির্ভর জবাবদিহি এবং পারদর্শী প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর। সংস্কারগুলো কেবল কাগজে বা পরোক্ষভাবে নয়—পরীক্ষিত, স্বচ্ছ ও জনগণ-সমর্থিত রূপে বাস্তবায়িত হলে তবেই তারা দেশের জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই প্রবৃদ্ধি আনতে সক্ষম হবে।
আবু এন এম ওয়াহিদ
অর্থনীতির অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন