সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২
আবু এন এম ওয়াহিদ
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাম্প্রতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত প্রসঙ্গে

সাম্প্রতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত প্রসঙ্গে

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত গত এক যুগে একসঙ্গে দ্রুত বিস্তৃতি ও গভীর জটিলতায় পৌঁছেছে। তার ওপর অতীতের গঠনগত দুর্বলতা—Non Performing Loan (NPL), দুর্নীতি ও তদারকির ঘাটতি—কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের স্থিতিশীলতা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ২০২৩-২৫ সময়কালে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শে একগুচ্ছ নীতিগত ও সাংগঠনিক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করে। বলাই বাহুল্য, এসবই করা হয়েছে ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে স্থিতিশীল, প্রযুক্তিনির্ভর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে। এ সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি পরিণত ও ত্বরিত পরিবর্তনের ধারায় রয়েছে। এখানে মুদ্রানীতি, তদারকি কাঠামো, SOB (state-owned bank) ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং আন্তর্জাতিক শরিকদের শর্তাদি একসঙ্গে এই রূপান্তর প্রক্রিয়াকে চালিত ও প্রভাবিত করছে। যদিও রূপরেখা ও নীতিসংকলন শক্তভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে, বাস্তবতায় রাজনৈতিক প্রভাব, ক্ষমতার কেন্দ্রায়ন, তথ্যগত অপূর্ণতা ও প্রতিষ্ঠানগত ক্ষমতার ঘাটতির মতো বহু অন্তর্ভুক্তিহীনতা এখনো ঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে। এই নিবন্ধে মূলনীতি ও বাস্তবায়নের দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হলো। এর পাশাপাশি কিছু সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ এবং প্রস্তাবনাও রয়েছে।

১. আন্তর্জাতিক চাহিদা, তহবিল ও শর্তাবলি—চাপ এবং সুযোগ

২০১৯-২৫ সময়কালে বাংলাদেশ বহু আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে; বিশেষ করে আইএমএফের তহবিল, বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) প্রোগ্রামগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য। আইএমএফের পর্যালোচনা ও তহবিল রিলিজের শর্ত হিসেবে প্রণীত অনেক রূপরেখা—যেমন রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, মুদ্রানীতিগত শাসন এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য কাঠামোগত সংস্কার—গৃহীত হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ পড়েছে দ্রুত ফলাফল দেখানোর। আইএমএফের সাম্প্রতিক রিভিউতে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সামঞ্জস্য ও অতিরিক্ত রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ করতে প্ররোচিত করা হয়েছে, যার বিনিময়ে তহবিল রিলিজ নিশ্চিত করা হয়েছে।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: আন্তর্জাতিক আচার-অনুশাসন মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন হলেও, স্থানীয় রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বিবেচনায় না নিলে কোনো নীতির সরল রূপান্তরকেই কার্যকর করা সম্ভব নয়। এ কারণেই অর্জনসমূহ বাস্তবতার বদলে কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এমতাবস্থায়, শর্তাদি বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক, স্বচ্ছ ও গৃহীত রোডম্যাপ অপরিহার্য।

২. SOBs (State-Owned Banks) সংস্কার ও AQR (Asset Quality Review—দায়বদ্ধতা ও পুনর্গঠন

SOBs-এর দুর্বলতাই বহুদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সমস্যার উৎপত্তির কারণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার প্রস্তাবিত ১০-পয়েন্ট রেসকিউ প্ল্যান ও রিফর্ম প্যাকেজে SOBs-এর পরিমার্জন ও পুনর্গঠনকে প্রথম সারিতে রাখা হয়েছে—এতে ব্যাংক রেজল্যুশন ফ্রেমওয়ার্ক, প্রাক-অ্যাকশন রিমেডিয়েশন, ম্যানেজমেন্ট রিলোকেশন এবং সম্ভাব্য মিশন/মার্জার পরিকল্পনাও আছে। বিশ্বব্যাংকের এ সুপারিশগুলো SOBs-কে আর্থিক স্বাধীনতা ও বিপদ-মোচনে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: SOBs-এর সংস্কার রাজনৈতিক ইচ্ছা ছাড়া সফল হবে না—কারণ উচ্চস্তরের নিয়োগ, প্রশাসনিক কাঠামো ও রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই ছিল মূল সমস্যা। যদি পুনর্গঠনের সময় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন ধীরগতিতে অথবা অপ্রতুল আচরণে সীমাবদ্ধ থাকবে। ফলে, SOBs-এর পুনর্গঠনকে কেবল প্রযুক্তিগত কাজ না করে আইনগত ও প্রশাসনিক স্বাধীনতার রোডম্যাপ হিসেবেও দেখা জরুরি।

৩. অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (AQR) ও দুর্নীতির তদন্ত—সত্য উন্মোচন ও পরিণতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের AQR শুরু করেছে এবং আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থাগুলোকে (Big Four) দিয়ে ব্যাংক-সম্পর্কিত বড় চুরির/ ধ্বংসাত্মক ব্যয়/সম্পদ উদ্বৃত্ত অনুসন্ধান করানো হয়েছে—এর লক্ষ্য হলো সম্পদ-অপসারণ ও অনিয়মের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এই প্রক্রিয়া ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হলেও, একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও সামাজিক আনুকূল্যের কারণে ফলাফল সময়সাপেক্ষ কিংবা আংশিক হতে পারে।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: AQR-এর সত্যিকারের শক্তি তখনই প্রকাশ পাবে যখন অনুসন্ধানের ফলাফল প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ ও পুনরুদ্ধারের কদমে পরিণত হবে—তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইন-প্রয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নির্ধারণী ভূমিকা রাখবে, নিঃসন্দেহে।

৪. NPL (Non-Performing Loans)—পরিসংখ্যান, প্রকৃত প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি

২০২৪-২৫-এ NPL-এর হার কিছু ব্যাংকে উদ্বেগজনকভাবে উচ্চ—এই খাতে, এটি একটি মৌলিক বিপদ সংকেত। খবরপত্র ও গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, ক্যাপিটাল প্রভিশনিংয়ের ঘাটতি, ক্রেডিটের দুর্বল মূল্যায়ন ও সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন (related-party lending) প্রভৃতি বিষয় NPL-এর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়ই NPL নিয়ন্ত্রণে একটি শক্ত রোডম্যাপ উল্লেখ করেছে, যার মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক নীতিমালা, রিজিউলেটরি রিক্যাপিটালাইজেশন এবং দেউলিয়া-কাঠামো উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: NPL-এর চিরস্থায়ী সমাধান কেবল ব্যাংকের অ্যাকাউন্টিং বা প্রোভিশন বাড়িয়ে হবে না। প্রয়োজন কার্যকর ঋণদানের নতুন সংস্কৃতি, শক্তিশালী পরিকল্পনাভিত্তিক ক্রেডিট মূল্যায়ন, ডাইভার্সিফায়েড রিস্ক ও আইনগত দেউলিয়া কাঠামোর বিকাশ। এ ছাড়া লেনদেন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা ও আর্থিক তথ্য-প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা জরুরি।

৫. ডিজিটাল ব্যাংকিং ও পেমেন্ট অবকাঠামো—সুযোগ ও বিপদ

ডিজিটাল ব্যাংক ও MFS-এর (Mobile Financial Services) দ্রুত প্রসার বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করেছে—খাস উদাহরণ বিকাশ, নগদ ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিজিটাল ব্যাংক গঠন ও লাইসেন্সিং নিয়ে বিভিন্ন দপ্তর চালু করেছে এবং পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট আইনও আপডেট হচ্ছে; একই সঙ্গে ডিজিটাল ব্যাংক গাইডলাইন প্রকাশিত হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকের সম্ভাব্য সুবিধা হলো—কম খরচে বাধ্যতামূলক সেবা, গ্রামীণ অন্তর্ভুক্তি ও উদ্ভাবনী পণ্য সরবরাহ।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: ডিজিটাল ব্যাংকিং বাড়লেও সাইবার সিকিউরিটি, ডাটা প্রাইভেসি, কাস্টমার প্রটেকশন ও AML/CFT (Anti-Money Laundering / Combating the Financing of Terrorism) ঝুঁকি বৃদ্ধিই প্রকট। Regulative arbitrage (যেখানে ডিজিটাল ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষ রেগুলেশন এড়িয়ে যায়) এবং Shell-company sponsorship-এর আশঙ্কা দেখা গেছে—এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করলে সিস্টেমিক ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই লাইসেন্সিংয়ের সঙ্গে কঠোর KYC, টেকনিক্যাল অডিট এবং কমপ্লায়েন্স মনিটরিং বাধ্যতামূলক করা উচিত।

৬. AML/CFT

সাম্প্রতিক বাংলাদেশে, MFS (Mobile Financial Service) ও ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার AML/CFT-এর গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। এখানে BFIU (Bangladesh Financial Intelligence Unit), BB (Bangladesh Bank) ও অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে AML/CFT ফ্রেমওয়ার্ক শক্ত করা হয়েছে, তবে বাস্তবায়নের দ্রুততা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়—বিশেষত বড় লেনদেনের অনুরোধ ট্র্যাকিং এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহায়তায় দ্রুত তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: AML/CFT কার্যকর করতে শুধু নিয়ম থাকলেই হবে না—রেগুলেটর ও ব্যাংকগুলোর হাতে আধুনিক ট্রান্সঅ্যাকশন-মনিটরিং সরঞ্জাম, বিস্তৃত প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থাকতে হবে। নইলে তহবিল-সংস্থাগুলো দ্রুত ও গোপনে স্থানান্তর হতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

৭. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও গুঞ্জন—নীতি প্রয়োগে বাধা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর ও নিরপেক্ষ নিয়ন্ত্রক ভূমিকা গঠনে ‘স্বাধীনতা’ অপরিহার্য। অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট ও বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকলে রেগুলেটরি পদক্ষেপ দুর্বল বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। স্বচ্ছতা ও আইনগত স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে, দুর্নীতি ও সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বব্যাংক, ADB (Asian Development Bank)-এর রিপোর্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও স্বাধীনতার জোরালো রূপায়ণ সুপারিশ করা হয়েছে।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: স্বাধীনতা দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না—তবে তা বিঘ্নিত হলে কোনো রিকভারি স্ট্র্যাটেজি টেকসই হবে না। আইনগত গ্যারান্টি, নিয়োগ-প্রক্রিয়ার জবাবদিহি ও বাজেট স্বচ্ছতা জোরদার করা উচিত।

৮. ডিপোজিট প্রটেকশন, রেজল্যুশন ও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট

বৈশ্বিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, সুদৃঢ় ডিপোজিট প্রটেকশন ফান্ড এবং রেজল্যুশন ক্ষমতা একটি দেশে ব্যাংকিং সেক্টরের স্থিতিশীলতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রিস্ক-ভিত্তিক রেজল্যুশন কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পে ডিপোজিট প্রটেকশন ও ফান্ডিং ডিভাইস তৈরির সুপারিশ আছে। এটি ডিফল্ট পরিস্থিতিতে ট্যাক্সদাতাদের ওপর চাপ হ্রাস করবে এবং গ্রাহকদের আস্থাকে সুরক্ষা দেবে।

সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ: রেজল্যুশন ফ্রেমওয়ার্ক কার্যকর করতে হলে স্পষ্ট আইন গঠনের পাশাপাশি ত্বরিত বাস্তবায়ন দক্ষতা দরকার। তহবিল ও লিকুইডিটি সরবরাহ দেরি হলে Systemic contagion দেখা দিতে পারে।

৯. বাস্তবায়ন জটিলতা: ক্ষমতা, রাজনীতি ও সামাজিক প্রভাব

নির্ধারক নীতি থাকলেও বাস্তবায়নের সময় তিনটি বড় বাধা দেখা দেয়—(ক) প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাব, (খ) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও স্বার্থসংকুলতা, (গ) সামাজিক প্রভাব—বিশেষত কর্মস্থান হ্রাস ও সংক্ষিপ্ত মেয়াদে আর্থিক কঠোরতা। এই বাধাগুলো সমাধান না হলে সংস্কারগুলো আংশিক বা নিষ্প্রয়োজনীয় রূপে থেমে যেতে পারে। তাই সংস্কার প্রোগ্রামে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

১০. সুপারিশ: কৌশলগত ও বাস্তবায়নমূলক

নিচের সুপারিশগুলো সময়োপযোগী, বাস্তবসম্মত ও প্রয়োগযোগ্য—যদি জোরালোভাবে গ্রহণ করা হয় তবে সংস্কারগুলো টেকসই হবে বলে আশা করা যায়:

ক. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত স্বাধীনতা শক্ত করা: নিয়োগ প্রক্রিয়া, বাজেট ও নীতিগত স্বাধীনতা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। (অন্তর্ভুক্তি: স্বাধীন তদারকি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ)।

খ. SOBs-এর রূপান্তর পরিকল্পনায় রাজনৈতিক নিরাপত্তা বিধান: SOBs-এর ম্যানেজমেন্টের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের জন্য আইনগত ও প্রশাসনিক গ্যারান্টি জরুরি।

গ. AQR ও তদন্তের ফলাফল দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রকাশ: তদন্তাধীন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারের কার্যকর কৌশল গঠন ও বাস্তবায়ন।

ঘ. ডিজিটাল ব্যাংক লাইসেন্সিং ও AML/CFT-এর কঠোর বাস্তবায়ন: ডিজিটাল ব্যাংক ও MFS-এ Shell company and related-party risk বন্ধ করতে লাইসেন্সিং শক্ত করা আবশ্যক।

ঙ. ডিপোজিট প্রটেকশন ফান্ড ও রেজল্যুশন বডি প্রতিষ্ঠা করা: সিঙ্গেল রেজল্যুশন ফান্ড ও সর্বজনীন ক্রাইসিস প্ল্যান তৈরির জন্য আইন ও বাস্তবায়ন কৌশল হাতে নেওয়া প্রয়োজন।

চ. মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি বিনিয়োগ: রেগুলেটরি বডি ও ব্যাংকগুলোকে আধুনিক মনিটরিং টুল, সাইবার-রেসিলিয়েন্স এবং প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করা উচিত।

বাংলাদেশ এখন একটি সংকট-প্রেক্ষাপটে থাকা সত্ত্বেও সংস্কারের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে—বিশ্বব্যাংক, IMF ও ADB-এর সমর্থন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ এবং ডিজিটাল উদ্ভব সব মিলিয়ে খাতটিকে পুনর্গঠনের পথপ্রদর্শন করছে। তবে সফলতা অনিবার্য নয়; সেটি নির্ভর করবে রাজনৈতিক দৃঢ়তা, নীতি-বাস্তবায়ন ক্ষমতা, আদালতনির্ভর জবাবদিহি এবং পারদর্শী প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর। সংস্কারগুলো কেবল কাগজে বা পরোক্ষভাবে নয়—পরীক্ষিত, স্বচ্ছ ও জনগণ-সমর্থিত রূপে বাস্তবায়িত হলে তবেই তারা দেশের জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা, অন্তর্ভুক্তি ও টেকসই প্রবৃদ্ধি আনতে সক্ষম হবে।

আবু এন এম ওয়াহিদ

অর্থনীতির অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রূপনগরে আগুন / ডিএনএ শনাক্তের পর ১৬ মরদেহ পেলেন স্বজনেরা

জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক 

সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : বাসস চেয়ারম্যান

রোমাঞ্চকর জয়ে ভারতকে হারিয়ে সেমিতে ইংল্যান্ড

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

‘আগুন লাগার ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে’

কিডনি রোগীদের জন্য যে ১০ খাবার নিষেধ

গাজায় আবারও ইসরায়েলের বিমান হামলা 

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কালবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

আ.লীগের কেন্দ্রীয় ১ নেতা গ্রেপ্তার

১০

হোটেলে নাশতা খেয়ে শিশুসহ ৬ জন অজ্ঞান

১১

তাঁতিবাজারে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ

১২

তিন ধর্মের উপাসনাস্থল নির্মিত হচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে

১৩

সীমান্তে ১২ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ

১৪

রাজধানীতে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৫

বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব দুঃশাসনের কবর দেওয়া হবে : জুয়েল

১৬

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ : সারজিস

১৭

জবি ছাত্রদল নেতা খুন, সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেল

১৮

ভয়াবহ আগুনে হার্ডওয়্যারের দোকান পুড়ে ছাই

১৯

৪৯তম বিশেষ বিসিএসের ফল প্রকাশ

২০
X