কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার

ভালো অর্থনীতি হলে রাজনীতিও ভালো হবে

মোস্তাফিজুর রহমান
ভালো অর্থনীতি হলে রাজনীতিও ভালো হবে

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর সম্মানীয় ফেলো। তিনি সিপিডির নির্বাহী পরিচালক (২০০৭-১৭) এবং তারও আগে সিপিডির গবেষণা পরিচালক (১৯৯৮-২০০৭) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে শিক্ষক হিসেবে ২৫ বছর অধ্যাপনার পর ২০১২ সালে সিপিডিতে পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি

অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতি সংস্কারসহ একাধিক কমিশন ও কমিটি গঠন করেছে। আপনি এই উদ্যোগগুলোকে কীভাবে দেখছেন? এবং এসব সংস্কার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যেতে বর্তমান ও পরবর্তী সরকারের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

মোস্তাফিজুর রহমান: সংস্কার, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগগুলো খুবই ইতিবাচক ছিল। শ্বেতপত্র কমিটি যখন করা হলা তখন এর লক্ষ্যটা ছিল অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থাটা জানা। যে কমিটির আমিও একজন সদস্য ছিলাম। মোট একুশটা চ্যাপ্টার আছে সেখানে। অর্থনীতির প্রায় সব খাতের চলমান অবস্থাটা কী ছিল, কোন কোন জায়গায় প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল, তথ্য-উপাত্তের কোথায় কোথায় ঘাটতি ছিল—এগুলো উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছি। মেগা প্রজেক্টের ওপর একটা চ্যাপ্টার আছে। মেগা প্রজেক্টে অর্থ কীভাবে ব্যয় হয়েছে, অর্থ পাচার কীভাবে হয়েছে, কোন কোন রুটে হয়েছে, ট্রেড প্রাইসিং, মিস প্রাইসিং ইত্যাদি নিয়ে পরবর্তী সময়ে ফলোআপ করা হয়েছে। দুটি রিপোর্ট থেকে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি। এখানে শুধু যে সঠিক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিচ্যুতি হয়েছে, তা নয়; নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে তথ্য-উপাত্ত ঠিকভাবে না থাকলে যে পরিকল্পনা ঠিকভাবে করা যায় না, সেটাও স্পষ্ট করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, ২০২৪ সালের জুলাই মাসেও খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন এটা হয়ে গেছে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপর। বেশিরভাগটাই ছিল আগের তথ্য-উপাত্তে হেরফের করার ফলাফল। এমন অবস্থা হলে, একটা ব্যাংক কত ঋণ দেবে, তার সুদ কত রাখবে, ঋণের ওপর সুদ কত রাখবে, তার স্বাস্থ্য কীরকম—এসব ব্যবস্থাপনা ঠিকভাব করা যাবে না। এজন্য আর্থিক খাতে আমরা বড় ধরনের একটা সমস্যায় পড়েছি। অন্যান্য খাতেও তাই হয়েছে। সেজন্য পরিসংখ্যান নিয়ে আরও একটি কমিটি করা হয়েছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান যেটার প্রধান। সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আমার মনে হয়। তার কারণ হলো, ভালো তথ্য-উপাত্ত না পেলে, ভালো নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় না। ভালো নীতিমালা প্রণয়ন করা না গেলে, ভালো বাস্তবায়নও করা যায় না। মানুষের জীবনমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে। সেখানে তথ্য-উপাত্ত ভালো না থাকলে সেটা করা যায় না। একটা আরেকটার সম্পূরক। আরেকটা বিষয় হলো, অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাক্টর। সাফিশিয়েন্ট ফ্যাক্টর হলো যে, সেটার ওপর ভিত্তি করে আমি কী বাস্তবায়ন করছি এবং জনগণ সেটা থেকে কী উপকার পাচ্ছে। এ জায়গাটায় আমরা এখনো আসতে পারিনি। সেটা বিনিয়োগের পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, সেটা ঋণ নেওয়ার পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, সেটা কর্মসৃজনের পরিসংখ্যান থেকেও দেখা যাচ্ছে। নতুন উদ্ভাবন নিয়ে যারা আসতে চাচ্ছেন, তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনার ওপরও দেখা যাচ্ছে। আমাদের সে জায়গাটায় পৌঁছাতে হবে যে, এগুলোর ওপর ভিত্তি করে আমার কীভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি, কীভাবে বিনিয়োগ আনতে পারি, কর্মসৃজন করতে পারি এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারি।

অন্তর্বর্তী সরকার এ সমস্যাগুলো সমাধানে কতটা পদক্ষেপ নিতে পেরেছে?

ড. মোস্তাফিজুর রহমান: প্রথম প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ—এই যে ঘাটতিগুলোকে নির্ণয় করা হলো, বিভিন্ন খাতে এবং ক্ষেত্রে কী কী করা যায়, এ ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হলো, এর পরিপ্রেক্ষিতে আসলে কী করা হয়েছে? এখানে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আমাদের ব্যাংক খাতের সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের রিপোর্টেও আমরা অনেক কিছু বলেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা এখন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। তারপরও কিছু অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে যে, আর্থিক খাতের প্রকৃত অবস্থাটা কী, যা আমাদের শঙ্কিত ও চিন্তিত করছে। কিন্তু বাস্তবতা আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি। তারা এখন নিজেরা সেন্ট্রাল ব্যাংকের বোর্ডের আয়ুষ্কাল কত হবে, সেটা ঠিক করছেন। স্বাধীনভাবে যাতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা বা অ্যাসেট রিকোভারি, বিভিন্ন ধরনের অর্গানাইজেশনকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ঋণখেলাপি, বিশেষ করে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, তাদের বিরুদ্ধে কিছু কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে দুদক ও ইন্টেলিজেন্স ইউনিটগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সুতরাং কিছু ভালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আমি যদি আরেকটা দুর্বল জায়গার কথা বলি—তা হলো আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা, বিশেষত বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে আমাদের দুর্বলতা রয়ে গেছে। টুকটাক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, কিন্তু পুরো সাপ্লাই চেইনের মধ্যে যে একটা শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা দরকার, সেখানে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এখনো মধ্যস্বত্বভোগী, সিন্ডিকেশন অনেক প্রভাব রয়ে গেছে। সামষ্টিক বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। ভালো কাজগুলোকে কীভাবে আমরা সামনের দিকে নিয়ে যাব—এটাই এখনকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই সরকার বেশি সময় পায়নি। নবনির্বাচিত সরকার কী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবে, সেটাও একটা বড় বিষয়। আমরা আশা করছি যে, তাদের মানসে চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের একটা পদচিহ্ন থেকে যাবে।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, ভালো অর্থনীতি মানে ভালো রাজনীতিও—সেই শিক্ষাটা তারা নেবে বলে আমরা আশা করছি। অর্থনীতি খারাপ হলে রাজনীতিও যে খারাপ হয়ে যায়, সে ঘটনাটা আমরা নিকট অতীতে দেখলাম। আমরা আশা করব নতুন যারা আসবে, তারা সুশাসন, জবাবদিহি, স্পষ্টতা—এগুলোর ভিত্তিতে কাজ করবে। এখন যে ভালো কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো তারা অব্যাহত রাখবে। এটা সোজা ব্যাপার নয়, ব্যাংক খাতে আমরা দেখেছি কীভাবে দুর্বৃত্তায়ন হয়। পরে এসে আবারও সেই দুর্বৃত্তায়ন শুরু হবে কি না, সে শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা আশা করব যে, জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাইয়ের স্পিরিট অনুসরণ করে তারা সামনের দিকে এগোবে। দ্বিতীয় হলো, আমাদের সচেতন জনগণের চাপ সার্বক্ষণিকভাবে রাখতে পারলে ইতিবাচক বিষয়গুলো অব্যাহত থাকবে। আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে তাদের এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

অর্থ পাচার হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল। এখন ব্যবসায়ীদের ওপর নানারকম চাপ তৈরি করা হচ্ছে, কারও কারও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে, অনেকে ব্যবসা করতে পারছেন না। এসব কারণে কি অর্থ পাচার আবার বেড়ে যাবে না?

ড. মোস্তাফিজুর রহমান: আমি বিজনেস কমিউনিটিকে একটা হোমোজেনাস একক হিসেবে দেখি না। বিগত সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি যে, সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী সমাজ ও সুবিধাহীন ব্যবসায়ী সমাজ—এভাবে ভাগ করা হয়েছে। একীভূত একক কোনো ব্যবসায়ী সমাজ ছিল না। যারা বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা অনেকে দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং আমার ধারণা যে, যারা সৎভাবে ব্যবসা করবেন, কোনো ধরনের নয়-ছয়ের মধ্যে থাকবেন না, তাদের কোনো সমস্যা বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা আজ থেকে পনেরো-বিশ বছর আগেও দেখেছি যে, ব্যবসায়ীদের অনেকে দুর্নীতি করে থাকলেও সেটা দেশেই বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু গত দশ বছরে বড় ধরনের অর্থ পাচার ঘটেছে। কারণ, দুর্নীতি তো করেছেই, তারপর সে টাকা দেশেই আর বিনিয়োগ করেনি। অর্থাৎ, দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে তাদের ভবিষ্যতের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেক ভালো ব্যবসায়ীর দ্বিতীয় প্রজন্মও দেশে আসছে, ব্যবসা করছে। এটা যদি আমরা অব্যাহত রাখতে পারি, আবার যদি আমরা পুরোনো দুষ্টচক্রে না পড়ি, তাহলে বিনিয়োগও চাঙ্গা হবে, কর্মসৃজন হবে, শ্রমিকের জন্য শোভন মজুরিও নিশ্চিত হবে। কিন্তু এটা অনেক দিনের সমস্যা। এটা এক দিনে সমাধান হবে না। কিন্তু যারা ভালো ব্যবসা করবেন, আমরা চাইব তাদের যাতে কিছু না হয়। তবে এর অনেক কিছুই নির্ভর করবে পরবর্তী সরকারের ওপর। নির্বাচিত সরকার আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগুলো বিবেচনা করবে কি না, তার ওপর এর সাফল্য নির্ভর করছে। জুলাই-আগস্টের একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমরা গেলাম। ফলে সে কথাতেই ফিরে আসি যে, ভালো অর্থনীতি হলে রাজনীতিও ভালো হবে।

গত পনেরো বছরে ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলারা একটা সিস্টেম তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসাকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা কতটা দরকার এবং কীভাবে করা যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ড. মোস্তাফিজুর রহমান: বিগত সময়ে এ ক্ষেত্রে খুবই নেতিবাচক একটা প্রবণতা দেখেছি। যেটা আমাদের দেশের অর্থনীতির ওপর একটা নীরব অভিঘাত হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। রাজনীতিবিদরা ব্যবসায়ী হয়েছেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে নেমেছেন, আমলারা দুটোর সঙ্গে মিলে নিজেরাও রাজনীতিতে ঢুকেছেন। অর্থনীতিতে এটা একটা দুষ্টচক্র সৃষ্টি করেছে। এখান থেকে আমাদের বের হতে হবে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন, তার সঙ্গে যদি ব্যবসাকে জড়িয়ে ফেলা হয়, তাহলে নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক অনেক কিছু সৃষ্টি হবে। জাতীয় সংসদের কথা যদি বলি—সেখানে রাজনীতিবিদদের কাজ নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে যাওয়ার কথা নয়। দুটোর এ পার্থক্যটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকার থাকবে। সেসব প্রতিষ্ঠানে যাতে ভালোভাবে কাজ করতে পারে এবং সংসদ সদস্যরা তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমলারা যাতে তাদের অভীপ্সা বাস্তবায়নের জন্য তাদের পেশাকে কাজে লাগাতে না পারেন, তারও ব্যবস্থা করা জরুরি। এগুলো সবই লিখিতভাবে আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদদের বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে হবে।

কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন করে মানুষ দারিদ্র্য হচ্ছে, কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে, মানুষের আয়ও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বৈষম্যও বাড়ছে। ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আমাদের কী ধরনের নীতি সহায়ক হতে পারে?

ড. মোস্তাফিজুর রহমান: অর্থনৈতিক নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। সাম্প্রতিককালে যেসব তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসছে, তাতে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ইতিবাচক চিত্র মিলছে না। বেকারত্বের সংখ্যাও বাড়ছে। যত শিক্ষিত তত বেকারত্ব। তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। খুব সহজ কাজ নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটও আমাদের অনুকূলে নেই। রাজনৈতিক একটা অনিশ্চয়তা আছে, সেটাও বাস্তবতা। কিন্তু এটা ঠিক করতে না পারলে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যাব। এবারের আন্দোলন কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু হয়েছিল—যেখানে কর্মসংস্থান আর বৈষম্যই ছিল মূল। এখানে বড় ধরনের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষিত জনসংখ্যাকে প্রকৃত অর্থেই যাতে প্রশিক্ষিত করতে পারি, যাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে, দক্ষতা সৃষ্টি হয়, এমন পদক্ষেপ দেখছি না। এটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

২০২৫-২৬ সালের যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে, তাতে আমি খুব আশাবাদী হতে পারিনি। গতানুগতিক একটা বাজেট দেওয়া হয়েছে। শক্ত সিদ্ধান্তে যাওয়া হয়নি। শিক্ষায় দুই শতাংশ, স্বাস্থ্যে এক শতাংশেরও নিচে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পেনশন বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। এসব জায়গায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা জরুরি ছিল। অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস একটা বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার নিতে চায়নি। কিন্তু আমার মনে হয় যে, তারা যদি সাহস করে এটা করতেন, তাহলে আগামীতে নির্বাচিত সরকারের জন্য রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে সেটা থেকে যেত। মানুষ চিন্তা করত যে, শিক্ষায় বরাদ্দ জিডিপির পাঁচ শতাংশ করা হয়েছিল, এই সরকার কেন এটা কমাচ্ছে! এটা একটা প্রশ্ন থাকত তখন।

সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কীভাবে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করা যায়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এরই মধ্যে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিচ্যুতি হয়েছে। দৃষ্টিটা চলে গেছে অন্যান্য ইস্যুতে। কিছু কিছু ভালো কাজ যে হয়নি তা নয়, স্বল্পমেয়াদে অনেক কিছু করা সম্ভবও নয়। তারপর আরও ভালো করার সুযোগ ছিল।

অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে কয়েক মাস সময় আছে। এ সময়ে তাদের কোন দিকগুলোতে বেশি ‍দৃষ্টি দেওয়া উচিত?

ড. মোস্তাফিজুর রহমান: বাস্তবতা হলো, এ কয়েক মাসে নির্বাচনের দিকেই তাদের নজর বেশি চলে যাবে। এটা এমন একটা সময়, যখন কি না অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো আবার পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এমনকি কিছু কিছু আরও ঘনীভূত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি উচ্চহারেই রয়ে গেছে। কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ইত্যাদির সংকট রয়েছে। কিন্তু এ সময়টা মূলত নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি দিতেই চলে যাবে। দেশের পরিবেশও এ সময় বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচক হবে না। আমরা আশা করছি যে, কোনো সংঘাত হবে না, কিন্তু মানুষের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। তবু সবকিছুর মধ্যেই অর্থনীতি চলতে হবে। বাংলাদেশের অগ্রগতি, বৈশ্বিক সম্পর্ক, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনা—এগুলো কোনো কিছুর জন্য থেমে থাকবে না। সুতরাং আমরা আশা করব সরকারের দৃষ্টি এসব থেকে খুব বেশি বিচ্যুত না হয়। নিরপেক্ষ সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করতে মনোযোগের অধিকাংশই চলে যাবে, কিন্তু আমার প্রত্যাশা থাকবে, জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের আশু করণীয় কাজগুলো থেকে নজরটা যেন বিচ্যুত না হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরিয়ে দেওয়া হলো ঢাকা ওয়াসার এমডি ও ডিএসসিসির প্রশাসককে

ম্যাসাচুসেটসে ব্রেস্ট ক্যানসার সারভাইভারদের সম্মাননা ও তহবিল সংগ্রহ

জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট প্রয়োজন : শিবির সভাপতি

গাজায় আবারও ব্যাপক বিমান ও কামান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

র‌্যাব পরিচয়ে ইসলামী ব্যাংকের টাকা লুট

পুলিশ একাডেমি থেকে পালিয়েছেন ডিআইজি এহসানুল্লাহ

বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হলো সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে

দেশে এক দিন পর কমলো স্বর্ণের দাম

বাবা হারালেন মোহাম্মদ এ আরাফাত

জুলাই সনদ : ফের ঐকমত্য কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি

১০

শুরু হচ্ছে নতুন কুঁড়ির ফাইনাল রাউন্ড

১১

পেন্টাগনকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশ দিলেন ট্রাম্প

১২

ঐক্যবদ্ধ থাকুন, কেউ উচ্চ আকাঙ্ক্ষা করবেন না : দুদু

১৩

প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন আপিল কমিটি গঠন

১৪

নিখোঁজের ৭ দিন পর আদিবার হাত বাঁধা লাশ উদ্ধার 

১৫

‘খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাপন পদ্ধতি পরিবর্তন না আনলে ক্যানসার ঠেকানো কঠিন’

১৬

মালদ্বীপে জুমার খুতবা বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগ

১৭

শ্রেষ্ঠত্বের অগ্রযাত্রা, ডিবিএল সিরামিকসের সেরা ডিলারদের অনুপ্রেরণার গল্প

১৮

পাকিস্তান-আফগানিস্তান দ্বন্দ্বে যার পাশে থাকছে ভারত

১৯

আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবে জাগপা ও আপ বাংলাদেশ

২০
X