পুষ্পারাজ—ঝুকেগা নাহি শালা। পুষ্পা যে ফ্লাওয়ার নয় ফায়ার, সেটাই আবার প্রমাণ করলেন আল্লু অর্জুন। ৫ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া পুষ্পা সিনেমার সিক্যুয়েল ‘পুষ্পা-২ : দ্য রুল’ নিয়ে রীতিমতো ধুমধাড়াক্কা। পুষ্পারাজ এতটাই উড়ছে যে, তাকে দেখতে অতিরিক্ত শো-এর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে সিনেমাহল মালিকদের। সমালোচকদের সমালোচনায় পুষ্পার অবস্থান যে পর্যায়েই যাক না কেন, পারফেক্ট বিনোদন আর অ্যাকশন বলতে যা বোঝায়, পুষ্পা-২-এ তা ভরপুর। মুক্তির প্রথম দিনই অনলাইনে প্রকাশ হওয়ার পরও আগ্রহে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি দর্শকদের। আপাতত পুষ্পারাজের জাদুর ছোঁয়ায় বুঁদ হয়ে আছে সিনেপাড়া। এরই মধ্যে দুই দিনেই বক্স অফিস থেকে তুলে নিয়েছে ৫০০ কোটি টাকার মতো। এর আগে বিভিন্ন স্বত্ব বিক্রি বাবদ এসেছিল হাজার কোটিরও ওপরে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার স্ত্রীর অনুরোধ রক্ষা আর পুলিশ অফিসারকে ‘সরি’ বলা নিয়ে পুষ্পার পাগলামি আসলে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। স্ত্রীর সঙ্গে অনস্ক্রিন রসায়নও কিন্তু দর্শক বেশ ভালোমতোই চাক্ষুষ করতে পারবেন।
সময়টা ২০২১। করোনা-পরবর্তী ট্রমা কাটাচ্ছে দুনিয়া। ধীরে ধীরে মানুষ চেষ্টা করছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে। সবকিছুই চলছিল নির্দিষ্ট গণ্ডির ভেতর থেকে—নানা বিধিনিষেধের আওতায়। করোনার আঘাতে বেশ কিছু খাতে দেখা দেয় মহাবিপর্যয়। তেমনই একটা খাত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিজ। মহামারির আঘাত বিধ্বস্তপ্রায় সিনেজগৎ। সেই ট্রমা থেকে বলিউডের সিনেদুনিয়ার জন্য মুক্তির বার্তা হয়ে আসে ‘পুষ্পা-দ্য রাইজ’। ঘরে আবদ্ধ থাকা মানুষকে সিনেমার বড় পর্দার সামনে হাজির করে সুকুমার-আল্লু অর্জুন জুটি। তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির এই ক্রাইম অ্যাকশন থ্রিলারটি সেই মহাপ্রতিকূলতার মধ্যেও ৩৭০ কোটি রুপির ওপর, টাকার হিসাবে যা ৪৫০ কোটির মতো আয় করে। ‘পুষ্পা’ ২০২১ সালের সর্বাধিক আয় করা সিনেমায় আবির্ভূত হয়। একজন সাধারণ কুলি-কাঠুরে থেকে মূল্যবান লাল চন্দনের চোরাচালান সিন্ডিকেটের প্রধান হয়ে ওঠার গল্পেই নির্মিত হয়েছিল সিনেমাটি। ‘পহেলি এন্ট্রি পার ইতনা বাওয়াল নাহি করতা, জিতনা দুসরি এন্ট্রি পার করতা হ্যায়’—পুষ্পাকে নিয়ে মুভির অন্যতম ভিলেন মঙ্গলাম শ্রীনুর এই সংলাপ যে পুরোপুরি বাস্তব, ছবির পরতে পরতে তা উঠে এসেছে। সংলাপটি যেন পুষ্পা-২ ছবিরই প্রতিচ্ছবি। প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয় ছবি আরও আকর্ষণীয়। এবার সেই পুষ্পা কীভাবে চোরাচালান জগতের সর্বেসর্বা হয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইন্টারন্যাশনাল হয়ে ওঠে আর নিজের বংশপরিচয় উদ্ধার করে, সেটা দেখা গেছে সিনেমায়।
পরিচালক সুকুমার আর পুষ্পারূপী আল্লু অর্জুন গত পাঁচ বছর যে পরিশ্রম করেছেন, তার সার্থকতা ফুটে উঠেছে পুষ্পা দ্য রুলে। মাস এন্টারটেইনমেন্ট বলতে যা বোঝায়, পুষ্পা-২ একেবারেই সেই ঘরানার। একচুলও ব্যতিক্রম বা বাড়াবাড়ি নয়। পুষ্পার ডায়ালগ, অ্যাকশন, রোমান্স—প্রতিটি দৃশ্যেই রয়েছে ভরপুর এন্টারটেইনমেন্ট। পুষ্পারাজ চরিত্রে আল্লু অর্জুনের সাবলীল অভিনয় মনোমুগ্ধকর আর তার স্ত্রী শ্রীভাল্লিরূপী রাশমিকা মান্দানার পারফরম্যান্স মনে দাগ কেটে যায়। এ ছাড়া সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেন ফাহাদ ফাসিল, যিনি অভিনয় করেন পুলিশ অফিসার ভানওয়ার সিং শেখাওয়াত চরিত্রে। এ ছাড়া সুনীল, অনসূয়া ভারদ্বাজ, জগদীশ প্রতাপ, রাও রমেশসহ প্রায় সবার কাছ থেকেই সেরা অভিনয় আদায় করে নেন পরিচালক সুকুমার। পুষ্পা-২-এ অ্যাকশনের কোনো কমতি না থাকলেও গানগুলো প্রথম পর্বের মতো নয়। প্রথম পর্বে সামান্থার আইটেম গানটি ব্যাপক সাড়া ফেললেও এবার শ্রীলীলা তেমনভাবে সাড়া ফেলতে পারেননি। তবে সিনেমাটির ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দুর্দান্ত। পুষ্পা চরিত্রের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় হিরোগিরি করার আলাদা মাত্রা সংযোজন করে দিয়েছেন আল্লু অর্জুন। পুষ্পারূপী অর্জুনকে টেক্কা দিতে চাইলে অন্য নায়কদের সাংঘাতিক কিছুই করতে হবে রুপালি পর্দায়—এটা নিশ্চিত।
এত কিছুর পরও একটি ব্যাপার হতাশার, প্রথম দিনই ‘পুষ্পা-২’-এর পাইরেট ভার্সন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। তার পরও কিন্তু পুষ্পা নিয়ে দর্শকের উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি। আক্ষরিক অর্থেই পুষ্পা এবার ‘ওয়াইল্ড ফায়ার’। অ্যাকশন আর বিনোদনে ভরপুর এই সিনেমা দেখে যুক্তি বা রেটিং খোঁজাটা বোকামি। কারণ প্রথম দিকটায় একটু ধীরগতি থাকলেও ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটের এই ছবি দেখার পর আপনার মাথা, মন-মেজাজ থাকবে একটা ঘোরের ভেতর। তাই বিনোদনপ্রেমীদের জন্য সেরা বিনোদন হয়ে এসেছে ‘পুষ্পা-২ : দ্য রুল’। আর এটি নিঃসন্দেহে হতে যাচ্ছে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার সিনেমা। একই সঙ্গে দিয়ে রেখেছে পুষ্পা ফ্র্যাঞ্চাইজির পরবর্তী ধামাকা ‘পুষ্পা ৩ : দ্য র্যামপেজ’-এর ঝড় তোলার আভাস।