দীর্ঘদিন ধরেই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র শেষ ঘোড়া তাপস দাস বাপি ওরফে বাপিদা। একেবারে মৃত্যুশয্যায় তিনি, এ পরিস্থিতিতে কলকাতার পর ঢাকাতেও তার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তহবিল সংগ্রহের জন্য কনসার্টের প্রস্তুতি চলছিল। এর আগেই পৃথিবীর সব আয়োজন পাশে রেখে চির ঘুমের দেশে চলে গেলেন সংগীতের এই মায়েস্ত্রো। রোববার সকাল ১১টার দিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৬৮।
ছোটবেলা থেকেই গানবাজনা ও লেখালেখির প্রতি টান ছিল বাপির। সঙ্গ দিয়েছিলেন তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনপ্রিয় আধুনিক বাংলা গান গাইতেন এই দুই তরুণ। গান গাওয়ার বাঁধাধরা কোনো তালিম পাননি কোনোদিন। তবে ভানু ও বাপির গানের গলা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন গৌতম চট্টোপাধ্যায় (মণি)। শোনা যায়, তার পরই ১৯৭৫ সালে তৈরি হয় ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। মহীনের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘ভালোবাসি জ্যোৎস্নায়’ ভানু ও তাপস দাসেরই সৃষ্টি। সুন্দরবনের এক মায়াবী রাতে এই গানের সুর বেঁধেছিলেন মণি। ব্যান্ডে তার ‘ডানহাত’ ছিলেন তাপস দাস বাপি। ১৯৯৯ সালের ২০ জুন মৃত্যু হয় মহীনের মণিদার। ২৪ বছর পর আবার সেই জুন মাসেই জীবনাবসান হলো তার সঙ্গীর।
চলতি বছরের জানুয়ারির দিকে প্রকাশ্যে আসে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র প্রতিষ্ঠাতাকালীন সদস্য তাপস দাসের অসুস্থতার খবর। মারণরোগ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন জেনে পাশে এসে দাঁড়ান শহরের সংগীতশিল্পীরা। চিকিৎসার খরচ জোগাতে তৈরি করা হয় তহবিল। ‘ফসিলস’ থেকে ‘বর্ণ অনন্য’, শিল্পীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে একাধিক কনসার্টের আয়োজন করে। পরে অবশ্য তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় কলকাতা রাজ্য সরকার।
প্রসঙ্গত, সালটা ১৯৭৫। তখনো সেভাবে ‘পাঙ্করক’ বাংলার মাটির সঙ্গে মাখামাখি হয়নি। ওই সময় হাতে গিটার নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘মহীনের ঘোড়ারা’। তৈরি হয় বাংলার প্রথম রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়গুলি’। এরপর একের পর এক মাইলস্টোন উপহার পায় শ্রোতারা।
আজও একই রকমভাবে জনপ্রিয় ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’, ‘টেলিফোন’, ‘তোমায় দিলাম’-এর মতো গানগুলো। মহীনের ঘোড়াগুলির অন্যতম মুখ ছিলেন সবার প্রিয় বাপিদা। তার প্রয়াণে শোকের ছায়া বিরাজ করছে এপার-ওপার দুই বাংলার সংগীত জগতে।
মন্তব্য করুন