জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে আজ থেকে লাগাতার শাটডাউন শুরু। একইসঙ্গে সারাদেশ থেকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মার্চ টু এনবিআর করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার রাত ৮টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গ বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানানো হয়েছে। যদিও এই বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান ও সদস্য ছাড়া ঐক্য পরিষদের কেউ ছিলেন না। এই বিজ্ঞপ্তির পরে ঐক্য পরিষদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খাঁনের অপসারণের বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে। এই আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এনবিআর। আর লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউনে বন্ধ হয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানি।
এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর পৃথিকীকরণের অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য গত ১৯ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ৬ সদস্যের কমিটি গঠনের আদেশ জারি করা হয়। রাতের অধ্যাদেশকে স্বাগত জানানো কর্মকর্তাকে করা হয় কোঅর্ডিনেটর। এতে ক্ষোভ বাড়ে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে। নতুন করে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খাঁনের অপসারণের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। পরবর্তী কর্মদিবসে আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা পাঁচ উপকমিশনারের স্ট্যান্ড রিলিজ আগুনে ঘি ঢালে। সারা দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন।
এরইপ্রেক্ষিতে শুরু কলম-বিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট। গত বৃহস্পতিবার ঐক্য পরিষদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি শুরুর আগ মুহূর্তে আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে তালা দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সেবাপ্রার্থীদের ঢুকা-বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কার্যত দুপুরের পর থেকে অচল হয়ে পড়ে এনবিআর। সন্ধ্যায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
এরইমধ্যে শুক্রবার রাতে অর্থমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়, এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগামী মঙ্গলবার বৈঠক ও এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরপরই শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে উপস্থিত না থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থায় কর্মরত কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ, বিলম্বে অফিসে উপস্থিত হলে তার বিরুদ্ধে সরকারি বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনবিআরের জারি করা কঠোর নির্দেশনার পর পরই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শনিবার লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে আমন্ত্রণ না জানানোয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এ ছাড়া দেশ ও রাজস্বের স্বার্থে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের রাজস্ব সংস্কার বিষয়ে দাবিসমূহ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানাতে যে কোন সময় অর্থ উপদেষ্টার সাথে আলোচনায় বসতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ প্রস্তুত রয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে এনবিআর সংস্কার বিষয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন আন্দোলনকারীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন হলে বিপাকে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই আন্দোলনে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসবে। রাজস্ব আহরণে ধস নামারও আশঙ্কা করছেন তারা। এজন্য শনিবার সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে দেশের তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু শুক্রবার রাতে কালবেলাকে বলেন, এই আন্দোলন নিয়ে আমরা অবগত আছি। সরকার ও আন্দোলনকারীদের জন্য কেন আমরা জিম্মি হব। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
মন্তব্য করুন