ঋণ পরিশোধ না করে যোগসাজশে ৪১ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভাটিয়ারি শিপ ব্রেকার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান, এমডিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে যমুনা ব্যাংক চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখা।
বুধবার (৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার আসামিরা হলেন- ভাটিয়ারি শিপ ব্রেকার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন (৫৭), প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নাঈম শাহ ইমরান (৫৮) ও পরিচালক মো. জামাল উদ্দিন (৫৭)।
তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি-৪০৬ / ৪১৭ / ৪২০ / ৪২২ / ৫০৬ / ১০৯ / ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে পুরোনো জাহাজ আমদানি করতে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখায় আবেদন করেন ভাটিয়ারি শিপ ব্রেকার্স লিমিটেড। ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর এলসি এর ওপর মঞ্জুরীপত্র ইস্যু করেন ব্যাংক। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি মঞ্জুরীপত্র সংশোধন করা হয়। পরবর্তীতে আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি ভাটিয়ারী শীপ ব্রেকার্স লিমিটেড এর নামে বিদেশ থেকে পুরাতন জাহাজ আমদানি করার জন্য ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার LTR (Loan against Trust Receipt) ঋণ সুবিধা মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া মূল ঋণ, সুদ, লাভ ও অন্যান্য চার্জ বাবদ সমুদয় পাওনা নির্ধারিত সময়কালের মধ্যে পরিশোধের জন্য ব্যাংকের সাথে চুক্তিবদ্ধও হয় ভাটিয়ারী শিপ ব্রেকার্স লিমিটেড।
২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারির Payment Claim অনুসারে যমুনা ব্যাংক জাহাজের মূল্য পরিশোধ করেন। কিন্তু আসামীরা পুরাতন জাহাজ বিক্রির টাকা LTR ঋণ পরিশোধ করার জন্য যমুনা ব্যাংকে জমা না করে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে এবং ঋণের শর্ত ভঙ্গ করেছে। অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তাদের মালামাল অর্থ থেকে যমুনা ব্যাংকের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে ৪১ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে। যমুনা ব্যাংক বিভিন্ন সময় পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসামীদের বরাবরে পত্র পাঠায়।
কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ তাদের অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান 'বেষ্ট স্টিল লিমিটেড' এর হিসাবের সাথে ওই ঋণের টাকা রি-রিশিডিউলের আবেদন করে। যমুনা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় তা বিবেচনা করে শর্ত সাপেক্ষে মঞ্জুর করলেও আসামিরা রি-শিডউলের শর্ত লংঘন করে এখনও ব্যাংকের পাওনা টাকার কোন টাকায় পরিশোধ না করে পরষ্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে ৪১ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।
এ বিষয়ে বাদী টাকা পরিশোধের জন্য অভিযুক্তদের একাধিকবার চিঠি ও লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেও তাঁরা টাকা পরিশোধ করেননি। গত ৩০ জুন পর্যন্ত আসামিদের কাছে ঋণ বাবদ ৪১ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। মামলার নথিতে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই ব্যাংক উকিল নোটিশ পাঠালে ২৪ জুলাই তা গ্রহণ করেন আসামিরা।
পরবর্তীতে ৮ আগস্ট সর্বশেষ লেনদেন অস্বীকার করলে ৯ আগস্ট দণ্ডবিধি-৪০৬ / ৪১৭ / ৪২০ / ৪২২ / ৫০৬ / ১০৯ / ৩৪ ধারায় যমুনা ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. শহীদ উল্লাহ বাদী হয়ে ভাটিয়ারি শিপ ব্রেকার্স লিমিটেড মালিকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য করুন