

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক ঘোষিত ৪৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচিকে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন পরীক্ষার্থীরা।
আকস্মিক এই সময়সূচি ঘোষণায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে তারা অভিযোগ করেন, পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক বিসিএস ব্যাচের প্রক্রিয়া যথাযথভাবে শেষ না করে নতুন ব্যাচের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছে, যা পরীক্ষার মান ও ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
তাদের মতে, এত কম সময়ের ব্যবধানে লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হলে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারবেন না এবং বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সঠিক মূল্যায়নের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাবে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে জামালখান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিভিন্ন দাবিদাওয়া সম্বলিত পোস্টার হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন পরীক্ষার্থীরা।
অংশগ্রহণকারীরা জানান, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, পরীক্ষার মূল্যায়ন এবং নিয়োগের ধাপগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার আগেই নতুন ব্যাচের লিখিত পরীক্ষার ঘোষণা পরীক্ষার্থীদের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করছে। এতে কেবল বিভ্রান্তি বাড়ছে না, একইসঙ্গে বিসিএস পরীক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
পরীক্ষার্থী জুলফিকার বলেন, বিসিএস একটি দীর্ঘ প্রস্তুতির বিষয়। আমরা চাই পিএসসি ধৈর্য ধরে একটি পরীক্ষার প্রক্রিয়া শেষ করে তারপর আরেকটি পরীক্ষা নিক। এতে যোগ্য প্রার্থীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং বিসিএস ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। এখনকার মতো হঠাৎ করে সময়সূচি ঘোষণা করা হলে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন, যা আসলে যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত পরীক্ষার্থী সামিয়া জাহান বলেন, পিএসসির সিদ্ধান্তহীনতা এবং সময়সূচি নির্ধারণে অসঙ্গতি দেশের লাখো পরীক্ষার্থীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
আরেক পরীক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিসিএসের প্রস্তুতি এক বা দুই মাসের বিষয় নয়। এখানে বিশাল সিলেবাস, বিশ্লেষণমূলক পড়া, রেফারেন্স বই সবকিছু মিলিয়ে প্রস্তুতি দীর্ঘ সময় ধরে করতে হয়। পিএসসি যদি সময় কমিয়ে দেয়, তাহলে যারা চাকরির পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে প্রতিযোগিতার ন্যায্যতা নষ্ট হবে। বিসিএসের মতো বড় পরীক্ষায় সময় বাঁচানোর নামে তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়।
পরীক্ষার্থীরা দাবি জানান, বিসিএস পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও সুস্পষ্ট নীতিমালা করা হোক। যাতে পূর্ববর্তী ব্যাচের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে নতুন ব্যাচের পরীক্ষা শুরু না হয়। তাদের ভাষ্য, এমন নীতিমালা থাকলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং পরীক্ষার প্রতিযোগিতার ভারসাম্যও বজায় থাকবে। একইসঙ্গে পিএসসি যেন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সময়সূচি নির্ধারণ করে, তাহলেই দীর্ঘদিনের এই বিশৃঙ্খলার অবসান হবে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা সতর্ক করে বলেন, দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। তাদের অভিযোগ, পিএসসি পরীক্ষাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরীক্ষার্থীদের অনুভূতি, প্রস্তুতির বাস্তবতা এবং পরিস্থিতি যথাযথভাবে বিবেচনা করছে না।
মন্তব্য করুন