গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৩:১৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছেলের কবরের পাশে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন বাবা-মা 

গুলিতে নিহত ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন বাবা-মা। ছবি : কালবেলা
গুলিতে নিহত ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন বাবা-মা। ছবি : কালবেলা

‘আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি মিলে চাকরি করত। সকালে নাশতার জন্য আমার থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাজারে যায় সে। এরপর লাশ হয়ে বাড়ি ফেরে। এখন পরিবারের হাল কে ধরবে?’ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বিপ্লব হাসানের মা বিলকিস বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের চূড়ালি গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বিপ্লব হাসান (১৯)। দুই বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে বিপ্লব সবার বড়। সে স্থানীয় মোজাফফর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। দুই বোনের মধ্যে একজন অষ্টম ও আরেকজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে সংঘর্ষে বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওইদিনই হাসপাতাল থেকে বিপ্লবের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লবের বাবা বাবুল মিয়া একটি ওয়ার্কশপ চালাতেন। কয়েক বছর আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষাণী মিলে চাকরি নেন বিপ্লব।

গত ২০ জুলাই দুপুরের শিফটে বিপ্লবের ডিউটি ছিল। ওইদিন সকালে নাশতা করার জন্য মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাড়ির সামনে কলতাপাড়া বাজারে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে বিপ্লবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনেই ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তার বাবা-মা। স্বজনরা জানান, বিপ্লবদের সম্বল বলতে দুই শতাংশ জমি ঘর-ভিটেটাই। অভাবের সংসারে ছেলেটা চাকরি করে কিছু হাসি ফুটিয়েছিল। এখন তো তাদের সব শেষ হয়ে গেল।

বিপ্লবের মা বিলকিস বেগম বলেন, সংঘাতের খবর পেয়ে সড়কে গিয়ে দেখি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাছে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বাজারের দোকানের পেছন দিয়ে ছেলের কাছে যেতে যেতে ও চোখের আড়াল হয়ে যায়। একটু পরেই দেখি গাড়ি দিয়ে গুলিবিদ্ধ বিপ্লবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিপ্লবের বাবা বলেন, ঘটনার দিন সিলেট ছিলাম। আগের রাতে বিপ্লব ফোন করে বলে বাবা দেশের পরিস্থতি ভালো না, তুমি নিরাপদে থেক। আমাকে নিরাপদে থাকার কথা বলে বিপ্লব পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিল। বিপ্লবের মরদেহের মাথা, ঘাড় ও পেটে গুলির ছিদ্র ছিল। আমি এ ঘটনায় মামলা করব না, মামলা করলেই কি আর ছেলে ফিরে আসবে?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টঙ্গীতে বজ্রপাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

শেখ হাসিনা লাদেনের খালাতো বোন : রিজভী

দেড় হাজার প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের জন্য সুখবর, তবে…

রাবি উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও ছাত্রশিবিরের

ফিলিস্তিনিদের জন্য মালয়েশিয়াস্থ চট্টগ্রাম সমিতির অনুদান হস্তান্তর

মালাইকার বিরুদ্ধে জারি হতে পারে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি নেতা ফিরোজ / কৌশল করলে বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না

জিআই স্বীকৃতি পেল কুমিল্লার খাদি

চিন্ময়ের জামিন নিয়ে সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি হাসনাতের 

র‍্যালি শেষে ফেরার পথে শ্রমিক দল নেতা নিহত

১০

বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন চুক্তি করবেন না : ফখরুল

১১

প্রবাসীর অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

১২

ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ফোনালাপ, কী আলোচনা হলো

১৩

মানবিক করিডোর ইস্যুতে পাশ কাটাচ্ছে সরকার : তারেক রহমান

১৪

‘আমার লাখ লাখ শ্রমিক ভোটের দাবিতে ক্ষুধার্ত’

১৫

জনগণের বিপক্ষে পুলিশকে দাঁড় না করানোর আহ্বান বিশিষ্টজনদের

১৬

ভ্যাকসিনে অর্ধশত গবাদি পশুর মৃত্যু, তদন্তে নমুনা সংগ্রহ

১৭

গ্রিন কার্ডধারীদের জন্য নতুন কড়া সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের

১৮

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় অবস্থান স্পষ্ট করলে চীন

১৯

সীমিত পরিসরে ইলিশ বেচাকেনা শুরু

২০
X