এনামুল হক রানা, নরসিংদী
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নরসিংদীতে শত কোটি টাকার ক্ষতি, দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন আ.লীগ নেতারা

কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নরসিংদী জেলা পরিষদের চিত্র। ছবি : কালবেলা
কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নরসিংদী জেলা পরিষদের চিত্র। ছবি : কালবেলা

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ঢাল করে অতর্কিত হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে নরসিংদীর ৯টি সরকারি দপ্তরসহ ১৮টি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া জেলার বিভিন্নস্থানে বেসরকারি, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ট্রেন ও পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে ৯ জঙ্গিকে। এ সময় ৮১৭ জন কারাবন্দি পালিয়ে যায়। লুট হয়েছে ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ হাজার ১৫০টি গুলি এবং নগদ টাকা। সব মিলিয়ে নরসিংদী জেলায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা।

তবে ব্যর্থতার দায় নিতে নারাজ নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন। কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মাঠে দেখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত দৃশ্যত তারা ঘরের বাইরে বের হননি। নরসিংদীর জেলখানা মোড়, পাঁচদোনা মোড়, মাধবদী, শিবপুরের ইটাখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীরা সহিংসতা চালালেও ক্ষমতাসীন দলের পদধারী ও শীর্ষ নেতারা ছিলেন নীরব দর্শক।

১৯ জুলাই প্রায় একই সময়ে আগুন দেওয়া হয় নরসিংদী জেলা কারাগার, নরসিংদী জেলা পরিষদ, ইটাখোলা হাইওয়ে থানা, পাঁচদোনা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, পাঁচদোনা পুলিশ ফাঁড়ি, পাঁচদোনা বদ্ধভূমি, মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, মাধবদী পৌরসভা কার্যালয়, মাধবদী ডাকঘর, মাধবদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, মাধবদী মুক্তিযোদ্ধা বিজয় মঞ্চ, নরসিংদী কৃষি বিপণন কার্যালয়সহ বেশ কিছু স্থাপনা। এ ছাড়া রায়পুরা উপজেলার খানাবাড়ি রেলস্টেশনে অবস্থানরত একটি ট্রেনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ট্রেনের প্রায় চারটি বগি পুড়ে যায়। নরসিংদী জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা।

তবে হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলো দখল এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা। দুর্বৃত্তদের হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিনতের পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়ে কর্মচঞ্চল এসব সরকারি কার্যালয়।

আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা অবশ্য দাবি করেছেন, তারা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলেন। স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপির হরতাল-অবরোধে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আগে যেভাবে রাজপথে থেকেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাদের সেভাবে কাউকে দেখা যায়নি। তবে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলেন বলে জানান তারা। ২৫ জুলাই নরসিংদী জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নরসিংদী জেলার বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায়’ উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা একে অন্যকে দোষারোপ করেন।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনোরকম সক্রিয় আন্দোলনের ঘোষণা বা নেতাকর্মীদের নিয়ে কোনো সভা-সমাবেশ করেনি। দলীয় নেতাদের জেলার সার্বিক পরিস্থিতি রক্ষার জন্য কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব হোসেন বলেন, আমরা একত্রে বসে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি এবং সব সংসদ সদস্যের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রেখেছি এবং জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনকে মোকাবিলা করার জন্য দলীয়ভাবে একত্রিত হয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। নরসিংদী রেলস্টেশনে অবস্থান নিয়ে স্টেশনকে জ্বালাও-পোড়াও থেকে বাঁচিয়েছি। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলীর নিজ বাড়ির ৫০০ গজ দূরে জেলা কারাগার। সুরক্ষার ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি নিজেই শঙ্কিত ছিলাম কখন না আমার বাড়ি-ঘরে আক্রমণ করে।

নরসিংদী পৌরসভার মেয়র মো. আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, ঘটনার সময় উচ্চপর্যায়ের নেতাদের কাউকে দেখিনি। আমরা নরসিংদীতেই ছিলাম, আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।

নরসিংদী সদরের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই, একই অবস্থান থেকে সবাই মিলেমিশে কাজ করছি। জামায়াত-শিবির চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, হামলার ঘটনায় শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারাগার দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়েদি রাখার উপযোগী করার চেষ্টা চলছে। আপাতত উচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আত্মসমর্পণকারী ও সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের গাজীপুর কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নরসিংদী জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের দুটি মামলাসহ মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলির মধ্যে ৫০টি অস্ত্র, ১ হাজার ১৪৩টি গুলি, ২১টি ম্যাগাজিন এবং ২২৭টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৫৯২ পলায়নরত কারাবন্দি নরসিংদীর আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছে। ৯ জঙ্গির মধ্যে পুলিশ এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং গত সোমবার এক জঙ্গি নরসিংদীর আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভেঙে গেল ৬৩ কোটি টাকার নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার

বাংলাদেশকে ২৪৭ রানে থামানোর পর লঙ্কানদের দুর্দান্ত শুরু

ভিসাপ্রত্যাশীদের জরুরি নির্দেশনা দিল যুক্তরাষ্ট্র

‘কিছু লোক আমাকে ভালো হতে দিল না’

‘ভবিষ্যতে যেন কেউ হুদাই আওয়াল না হয় তার একটা শিক্ষা হতে পারে‘

উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে জবি শিবিরের মৌসুমি ফল উৎসব 

শুরু হচ্ছে ‘ফ্রাইডে নাইট উইথ জায়েদ খান’ 

আশ্বাসে বছর যায়, নদী গিলে খায় জীবনের সবটুকু

আবু সাঈদ হত্যায় মিলেছে ৩০ জনের সম্পৃক্ততা

পুরুষের বন্ধ্যত্ব বাড়াতে পারে যেসব খাবার

১০

গণডাকাতি করে বোমা ফাটিয়ে পালাল ডাকাতরা

১১

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যাচ্ছে আরও মুসলিম দেশ?

১২

লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয় নারীর গলাকাটা মরদেহ

১৩

মাথায় গুলি ঠেকিয়ে প্রকাশ্যে বিপুল টাকা ছিনতাই

১৪

কমেছে স্বর্ণের দাম, কত টাকা ভরি আজ

১৫

স্ত্রী অল্পতেই রাগছেন? জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ 

১৬

টাঙ্গুয়ার হাওরে ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড

১৭

৪ স্কুলছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার

১৮

রোজা কবে শুরু হতে পারে, জানাল আমিরাত

১৯

‘মহান এই নায়ককে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত’

২০
X