‘ভারতীয় নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন, বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন’- এমন গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা সীমান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জড়ো করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের উত্তর গোতামারী সীমান্তে গিয়ে তিন শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেখা যায়।
হাতিবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর শ্বশুরবাড়ি ওই এলাকায়। তিনি ওই সীমান্ত এলাকায় গুজব ছড়িয়ে এসব লোকজন জড়ো করেন। এ সময় তাদের ভিড় সামলাতে বিজিবি ও পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
খবর পেয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা সনজিত ও গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মিয়া বলেন, দলে দলে লোকজন সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার দিকে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান ভারতীয় নেতারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসেছেন বাংলাদেশি নির্যাতিত হিন্দুদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে। সে কারণে তারা এসেছেন কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন পুরোটা গুজব। ভারতীয় বিএসএফ ছাড়া কেউ ছিল না সেখানে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পাশের ডিমলা উপজেলা থেকে আসা পরশ চন্দ্র জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন এই সীমান্তে ভারতীয় নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন, বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন। তাই তারা এসেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর শ্বশুরবাড়ি। সরকার পতনের দিন থেকে তিনি ওই এলাকায় অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে- এমন খবর ভারতীয় মিডিয়ার নজরে নিয়ে আসার কৌশল হিসেবে তিনি গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জড়ো করেছেন।
এ ছাড়া ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা হচ্ছে- এমন দাবি তুলে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) তার লোকজন দিয়ে তিনি মানববন্ধনেরও চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোনাবেরুল ইসলাম মোনা বলেন, সকাল থেকে হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজন দলে দলে জড়ো হয়। তারা কী কারণে জড়ো হয় তা কিছুই জানে না। তারাও বলছে না। তিনি তাদের চলে যেতে বললে তারা চড়াও হয়।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাতিবান্ধা উপজেলার বাসিন্দা ব্যারিস্টার হাসান বলেন, খবর শুনেই ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলি। তারা সীমান্ত এলাকায় কেন এসেছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। পরে আমরা সব মানুষকে বুঝিয়ে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নির্দিষ্ট করে তাদের অভিযোগ বলতে পারেনি। কিন্তু বলছে, তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পরে তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।