কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪, ০২:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত

ছেলের দৃষ্টি ফিরে পেতে মায়ের আকুতি

মায়ের সঙ্গে আন্দোলনে চোখ হারানো জুবায়ের হাসান জিহাদ। ছবি : কালবেলা
মায়ের সঙ্গে আন্দোলনে চোখ হারানো জুবায়ের হাসান জিহাদ। ছবি : কালবেলা

‘আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আমার ছেলের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এই সন্তানই শেষ ভরসা। আমার সন্তানকে যদি সরকার কোনো ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমি বাঁচব। এ ছাড়া আমার কোনো উপায় নাই। একমাত্র সন্তান নিয়েই আমি বেঁচে আছি। সরকার যেন আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়। ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো আমার সামর্থ্য নেই।’

ছেলের চোখের দৃষ্টি ফিরে পেতে কান্নাজরিত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে এক চোখ হারানো জুবায়ের হোসেন জিহাদের মা হাসি বেগম।

১৬ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বাম চোখ হারান জুবায়ের হাসান জিহাদ। জুবায়ের সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার হায়দারপুর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে এবং উপজেলার সরকারি হাজী কোরপ আলী মেমোরিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

আহত জুবায়ের বলেন, গত ১৬ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল নিয়ে সিরাজগঞ্জে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বের হয়ে রেলগেটের কাছে আসলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ছোড়ে। একপর্যায় একটা ছোড়া গুলি এসে আমার বাম চোখে লাগে। আমার বন্ধুরা হাসপাতলে নিয়ে যায়। অবস্থা ভালো না দেখে চিকিৎসকরা ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।

তিনি বলেন, ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। সেই অপারেশনের পর থেকে বাম চোখে দেখতে পাই না। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা আমাকে বলেছে এখনো তিনটা অপারেশন করতে হবে। কিন্তু চোখে দেখতে পাব কিনা বরতে পারছেন না। আমি চাই আমার চোখের দৃষ্টি ফিরে আসুক। এখন পর্যন্ত আমার এটাই চাওয়া, আর কিছু চাওয়ার নেই।

জুবায়ের হাসানের মা হাসি বেগম বলেন, আমার ছেলের যখন পাঁচ মাস তখন তার বাবা মারা যান। আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলেকে নিয়েই খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। সে এবার এইচএসসি পরিক্ষা দিচ্ছে। আশা ছিল রেজাল্ট করলে ঢাকায় ভর্তি করাব। পড়াশোনা করে একটা চাকরি করলে আমার দুঃখ কেটে যাবে। ছেলে আন্দোলনে গিয়ে চোখ হারাল।

তিনি বলেন, ছেলের চোখের চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য নেই। আরো তিনটা তিনটা অপারেশন করাতে হবে। ২/৩ লাখ টাকা খরচ হবে। সরকার যদি আমার ছেলের পাশে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো সে চোখের দৃষ্টি ফিরে পাবে। ছেলের এ অবস্থায় সরকারি চাকরি পাবে কিনা সন্দেহ। তারা যদি কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমার দুঃখ গুছবে। না হয় সারাজীবন চোখ হারানো ছেলেকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হবে।

আন্দোলনে জুবায়ের সহপাঠী রুকাইয়া বলেন, ১৬ জুলাই যখন আমরা সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া কলেজ থেকে একটা মিছিল বের করি তখন পুলিশের বাধার সম্মুখীন হই। সেখানে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে একটা ছোড়া গুলি জুবায়েরের বাম চোখে লাগে। তখন আমরা ওকে এমএ মতিন চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাই। তারা আহত জুবায়েরকে ঢাকাতে নিয়ে যেতে বলে।

তিনি বলেন, আমরা সরকারে কাছে আবেদন করছি, জুবায়েরের পারিবারিক অবস্থা ভালো না। চিকিৎসা করানোর মতো পরিস্থিতি নেই। তার দায়িত্ব যেন সরকা নেয় এটাই আমার আমাদের চাওয়া।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেয়ামতের দিন যে ৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বয়ং মহান আল্লাহ বাদী হবেন

বাম চোখ লাফালে কী হয়? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ আলেম

২৩ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

লবণ নাকি চিনি, কোনটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে?

হল ত্যাগের নির্দেশ, ঢাবিশিক্ষার্থীদের প্রতি তাসনিম জুমার যে অনুরোধ

ভূমিকম্প আতঙ্কে হল ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান ইডেন শিক্ষার্থীদের

৭ ঘণ্টা পর রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় সংঘর্ষ, আহত অনেক

ক্যাম্প ন্যুতে বার্সার রাজকীয় প্রত্যাবর্তন

জনগণকে নিয়ে এলাকার কল্যাণে কাজ করব : রবিন 

১০

দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেটে ৭৬ ক্লাবকে নিয়ে কোয়াবের চা-চক্রের আয়োজন

১১

ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাবি ভিসির বাসভবনের সামনে শুয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা

১২

এবার নিজেদের মাঠে নাস্তানাবুদ লিভারপুল

১৩

ভূমিকম্পে নিহতদের সম্পর্কে যা বলেছেন নবীজি (সা.)

১৪

তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কোরআন বিতরণ 

১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ দিন বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ

১৬

সিমেন্ট কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ, ৬ শ্রমিক দগ্ধ

১৭

বাংলাদেশ সমাজকর্ম শিক্ষক সমিতির আত্মপ্রকাশ 

১৮

জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও ইউনিভার্সেল মেডিকেলের স্বাস্থ্য চুক্তি

১৯

ভূমিকম্পে নিহত রাফিকে শেষ দেখা দেখলেন মুর্মূষু মা

২০
X