তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে যান নাটোরের বাগাতিপাড়ার বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি। কার্যালয় ছাড়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাদের অনেকেই এখনো কার্যালয়ে ফেরেননি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোরে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁকা, বাগাতিপাড়া ও দয়ারামপুর— এ ৩টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। তবে, পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসুস্থ থাকায় গত এক বছর থেকে তার দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত হওয়ায় হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই গা-ঢাকা দেন বাগাতিপাড়া ও দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ৫টি ইউনিয়নেরই অনেক ইউপি সদস্যও রয়েছেন আত্মগোপনে। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে অনেকের মোবাইল ফোন।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পরিষদে না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া বিভিন্ন সনদ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের মতো নাগরিক সেবা কার্যক্রম। সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ পড়েছেন চরম বিপাকে।
বাগাতিপাড়া ও দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সেবা প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিষদে চেয়ারম্যান না থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকলে বেশিরভাগ সেবা তৎক্ষণাৎ পাওয়া যেত। চেয়্যারম্যান অনুপস্থিত থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি যেখানে বলছেন সেখানে যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, সেইসঙ্গে খরচ হচ্ছে বাড়তি অর্থ ও সময়।
উপজেলার বাগাতিপাড়া ইউনিয়নের কাকফো এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, বোনের মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য ইউপি কার্যালয়ে যান তিনি। পরিষদ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর প্রয়োজন। চেয়ারম্যান কার্যালয়ে না থাকায় তার বাড়িতে গিয়ে স্বাক্ষর নিতে হবে। জনদুর্ভোগ নিরসনে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দ্রুত কার্যালয়ে ফেরার দাবি জানান তিনি।
বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, পরিষদে উপস্থিত থাকতে না পেরে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে, বাড়ি থেকেই যতদূর সম্ভব সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। থানা পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হলে পরিস্থিতি বুঝে পরিষদে উপস্থিত হবেন বলেন জানান তিনি।
দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাবুর ইসলাম মিঠু জানান, ৫ তারিখের পর গতকাল সোমবার প্রথম পরিষদে এসেছেন তিনি। তবে, হামলা-আতঙ্কে তার পরিষদের অনেক সদস্য এখনো পরিষদে আসতে পারছেন না।
গত ৬ আগস্ট ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে হামলার শিকার হন দয়ারামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অনুপ কুমার চক্রবর্তী। এরপর থেকেই সচিবশূন্য অবস্থাতেই চলছে এই ইউপি কার্যালয়।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল বলেন, রাজনৈতিক কারণে হয়তো অনেকে যাচ্ছেন না। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বার সবার জন্যই নির্দেশনা একই। যারা যাচ্ছেন না আমি উনাদের সঙ্গে কথা বলব, যেন তারা নিয়মিত কার্যালয়ে যান।
মন্তব্য করুন