মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছেন। এরপর কাটিয়েছেন এলাকার মানুষের সেবা করে। বিয়ে-সংসারের বিষয়ে ছিলেন উদাসীন। বলেছিলেন, চিরকুমার হয়ে থাকবেন। এ সংকল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছেন এতদিন।
এখন বয়স ৮০ ছুঁই ছুঁই। অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন চিরকুমার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল হক। আর বিয়ের কনে মীনা আক্তার। বিধবা মায়ের একাকীত্ব দূর করতে মীনা বেগমকে বিয়ে দেন তার কলেজপড়ুয়া ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা অভিভাবক পেয়ে খুশি তিনি।
আরও পড়ুন : ১ নভেম্বর থেকে চিরকুমার-চিকু সংঘ
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দেড় লাখ টাকার দেনমোহরে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে বিয়ে হয় তাদের। মীনা বেগমের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে পড়েন। স্বজনদের সঙ্গে মাকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে নিয়ে আসেন তিনি। নুরুল হকের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল এই পরিবারের।
মিনা আক্তার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ভাসা গ্রামের বাসিন্দা। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গোলাপ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। তার প্রথম স্বামী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে চার বছর আগে মারা যান। এরপর থেকে সেখানেই বসবাস করতেন তিনি।
ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বাবার মৃত্যুর পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিলেন তারা। এখন নতুন করে অভিভাবক পেল পরিবারটি। শুধু তা-ই নয়, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এটা পরিবারের জন্য গর্বের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ময়মনসিংহের আচারগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা। সাত ভাইয়ের মধ্যে তিনি ৪ নম্বর। দীর্ঘদিন ধরে তার ভাইয়েরা তাকে বিয়ে করার জন্য বলে আসছিলেন। তবে, তিনি বিয়ে করবেন না বলে অনড় ছিলেন। ৭৮ বয়সে এসে তিনি বিয়েতে সম্মতি দেন। মীনা আক্তারের সন্তানদের সম্মতিক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক ফকির তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বলেন, ইচ্ছা ছিল না বিয়ে করার। তারপরও পরিবার ও সহযোদ্ধাদের অনুরোধে বিয়েতে রাজি হন তিনি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সরকারের দেওয়া ‘বীরনিবাসে’ কনেকে নিয়ে গেছেন নুরুল হক।
বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির, মুক্তিযোদ্ধা শামছুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মাস্টার, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনসহ দুই পরিবারের লোকজন।
মন্তব্য করুন