কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিমিষেই বিষাদে ছেয়ে গেল শহীদ সায়মনের স্ত্রী শামিমার সুখ

শহীদ সায়মন ও তার স্ত্রী শামিমা। ছবি : সংগৃহীত
শহীদ সায়মন ও তার স্ত্রী শামিমা। ছবি : সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়, পরে সম্পর্ক প্রায় তিন বছর। প্রায় পাঁচ মাস আগে বিয়ে করেন সাইমন ইসলাম আল-আমিন (২৩)। নববধূ থাকতেন বাবার বাড়িতে। এরই মধ্যে নতুন চাকরি পেয়েছেন সাইমন। এবার নতুন বউ ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মৃত্যুর আগে বউকে ফোন করে নতুন বাসা ভাড়া নিয়েছেন বলে খবরও দিয়েছিলেন। সুখের সংসার সাজাবেন নিজের মতো করে- এমন সুন্দর স্বপ্ন ও সুখের খবর দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই এলো বিষাদের খবর।

মাত্র একটি গুলিতেই সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে শামীমার। এ খবর বাস্তব নাকি দুঃস্বপ্ন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না স্ত্রী শামীমা আক্তার (১৯)।

গত ১৯ জুলাই দুপুরে সাভার রেডিও কলোনি এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও পুলিশের সংঘর্ষে শহীদ হন সাইমন ইসলাম আল-আমিন।

কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর মধ্যপাড়ার মো. বাবুল ও মনোয়ারা বেগম দম্পতির মেজো ছেলে সাইমন ইসলাম আল-আমিন (২৩)। তিনি সাভারের রেডিও কলোনির নয়াবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তার বাবা কাজ করেন গাজীপুরের এক কোম্পানিতে। শহীদ সাইমনের লাশ ২০ জুলাই তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর দক্ষিণপাড়ায় দাফন করা হয়।

নিহত সায়মন তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছিল মেজ। বড় ভাই মো. মহসিন মিয়া (২৬) কাতার প্রবাসী। ছোট ভাই জহির মিয়া (১৮) স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করেন। বড় বোন মাহমুদা আক্তার (২৭) বিবাহিতা।

নিহত সায়মনের স্ত্রী শামীমা আক্তার বলেন, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে ঢাকার সবুজবাগ এলাকায় থাকতাম। আর সায়মন থাকত রেডিও কলোনিতে। আমাদের বিয়ে হওয়ার পর তাদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা না থাকায় আমি বাড়িতে থাকতাম। পরে নতুন বাসা নিয়ে আমাকে নিয়ে যাবে এমন কথা হয়েছে দু’পরিবারের মধ্যে। সায়মন মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে সে আমাকে ফোন করে নতুন বাসা নেওয়ার কথা জানায়। পরে আমিও তার সঙ্গে গিয়ে ওই বাসা দেখে আসব বলেছিলাম। এর কিছক্ষণ পর খবর পেলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে তার গুলি লেগেছে। পরে সে হাসপাতালে মারা যায়। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এমন দুটি খবর আমার মোবাইল ফোনে আসবে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

নিহত আল-আমিনের মামা হারুনুর রশিদ বলেন, আমার বোনজামাই তার সন্তানের লাশ আনতে কোনো যানবাহন পাচ্ছিলেন না। শুক্রবার সারা রাতেও কোনো অ্যাম্বুলেন্স খুঁজে পাননি। তখন ফোন করে আমাকে বিষয়টি জানায়। পরে আমি কুমিল্লা থেকে শনিবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে কুমিল্লায় আসি। এ লাশ আনতে গিয়ে পথে পথে কঠিন বাধা ও পরিস্থিতির শিকার হয়েছি যা বলার ভাষা আমার নেই।

শহীদ সাইমন ইসলাম আল-আমিনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে বাসা থেকে জুমার নামাজ পড়তে বের হয়। পরে আমার কাছে খবর আসে ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে, কেউই ভয়ে ধরতে যাচ্ছে না। এর কিছুক্ষণ পর কল আসে সে হাসপাতালে। আমি দৌড়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি ছেলে মারা গেছে। টাকা-পয়সার অভাবে ছেলেটা এইচএসসি পাস করে আর লেখাপড়া করতে পারেনি। নতুন একটা চাকরি পেয়েছিল গত মাসে। ৫ মাস আগে সম্পর্ক করে বিয়ে করেছে। বউটাকে তুলে আনতেও পারেনি। এর আগেই আমার ছেলেটাকে খুন করল তারা। ছেলেটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে। নতুন বউ ঘরে আনবে- সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

নিহত আল-আমিনের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, আমার ছেলে মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে পরিবারের সচ্ছলতা আনতে চাকরি নিয়েছিল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) সাভারের রেডিও কলোনিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় আল-আমিনের পিঠে গুলি লেগে নাভির ওপর দিয়ে বের হয়ে যায়। সেখান থেকে কিছু ছেলে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় সাভার সুপার হাসপাতালে। তাকে সে হাসপাতালে রাখা হয়নি। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে আমার আহত ছেলেকে রেখে পালিয়ে যায় উদ্ধারকারীরা। পরে পুনরায় আমরা গিয়ে পথ পরিবর্তন করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ আইসিউতে রেখে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, আমার ছেলের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে ফোন করে খবর নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে বরুড়া উপজেলা যুবদল আমাকে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছিল। এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাইনি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জাব্বার, মতিন মিয়াসহ আরও অনেকে জানান, বাবুল মিয়া একটি ফ্যান কোম্পানির কর্মচারী। খুবই অসহায় ও অসচ্ছল পরিবার। বড় ছেলেকে অনেক ধার-দেনা করে বিদেশে পাঠিয়েছেন। তার অবস্থা ভালো না হওয়ায় এখনো ধার শোধ করতে পারেনি। এর মধ্যে মেজ ছেলে নিহত হয়েছে। অসহায় এ পরিবারটিকে সহায়তা দিতে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নু-এমং মারমা মং বলেন, আমরা নিহত পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। নিহত সাইমন ইসলাম আল-আমিনের পরিবার ঢাকায় থাকে। আমরা তাদের তালিকা পাঠিয়েছি। কোনো সহযোগিতা এলে আমরা তাদের জন্য ব্যবস্থা করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যুবদল নেতা মাহাবুব হত্যা, পুলিশ হেফাজতে ভ্যানচালক 

প্রথমে আপনি যা দেখেছেন, তা প্রকাশ করে আপনার লুকানো মানসিক শক্তি

প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ আকিজ বাশির গ্রুপে চাকরি

ডব্লিউএইচও থেকে পুতুলের ছুটি, প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস 

লেবাননে ১০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্র

‘আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব’

অজান্তেই শিশুর শরীরের নীরবে ক্ষতি করছে যে ৫ খাবার

সুনামগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

নৌকায় ঘুরতে গিয়ে বড় বোন নিহত, ছোট বোন নিখোঁজ

১০

রাজনীতিতে যারা এতিম, তারাই পিআর নির্বাচন চায় : খায়রুল কবির 

১১

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন অভিযানে শ্রমিক নিহত

১২

পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে হত্যা: আরও এক আসামি গ্রেপ্তার

১৩

১২ জুলাই / কোটা সংস্কারের দাবিতে ছুটির দিনেও রাজপথে সরব শিক্ষার্থীরা

১৪

টিকটকে প্রেমের পর বিয়ে, সেপটিক ট্যাংকে মিলল গৃহবধূর লাশ

১৫

বিয়েতে ভীতি, তবে মা হতে চান শ্রুতি

১৬

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন লেবাননের প্রেসিডেন্ট

১৭

মিটফোর্ডে হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল

১৮

ইসরায়েলি হামলায় নিহত মার্কিন তরুণ, নীরব যুক্তরাষ্ট্র

১৯

চাঁদপুর ও খুলনার ঘটনা নিয়ে জামায়াত আমিরের স্ট্যাটাস

২০
X