নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অবহেলায় প্রায় ৩৫ বছর ধরে হাজারো বিঘা জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাঁধটি সংস্কার না করায় বর্ষা মৌসুমে এসব জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না প্রান্তিক কৃষকরা। ফলে উপজেলায় কমপক্ষে ১০ হাজার টন ফসল কম উৎপাদন হচ্ছে।
বাঁধটি সংস্কার করে এসব জমি চাষাবাদযোগ্য করার দাবিতে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে গণস্বাক্ষরসহ আবেদন করেছে অত্র এলাকার সর্বসাধারণ।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িতিস্তা নদীতে ফসলি জমি রক্ষার জন্য নিজ সুন্দর খাতা এলাকা থেকে মধ্যম সুন্দর খাতা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয় দেশভাগেরও (১৯৪৭) সালের পূর্বে। এরপর ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সুন্দর খাতা কচুর দোলায় বাঁধের ৬০ মিটার ভেঙে যায়। তখন এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁধটি মেরামত করলেও নদীর পানির প্রবল স্রোতে আবারও ভেঙে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, বুড়িতিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়সহ বিস্তীর্ণ আবাদি জমিতে পানি প্রবেশ করে প্রতিবছর। এতে উপজেলার নিজ সুন্দর খাতা, মধ্যম সুন্দর খাতা, দক্ষিণ সুন্দর খাতাসহ পাঁচটি গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়। আর এতে শতাধিক পুকুর, রাস্তাঘাট ও রোপা আমনক্ষেত নানা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের ভাঙা অংশে সংস্কার না হওয়ায় দেখা দিয়েছে এই সংকট ও অনাবাদির বিড়ম্বনা এবং ক্ষতির কারণ।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ- এক ইঞ্চি জমিও পতিত থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর এরকম নির্দেশনার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় হাজারের অধিক একর জমির ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ এলাকার প্রান্তিকপর্যায়ে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে বাঁধটি সংস্কারের দাবি জানালেও কথা শোনার যেন কেউ নেই।
মাঠে কাজ করা কয়েকজন কৃষক জানান, এক সময় এসব জমিতে বছরে তিন ফসলি আবাদ করে ধানের গোলা ভরাতেন তারা। কিন্তু ১৯৮৮ সালের বন্যায় বাঁধ ভাঙার পর এখানে সারা বছর পানি লেগেই থাকে। যার ফলে এসব জমিতে শুকনো মৌসুমেও চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। বাঁধটি সংস্কার করা হলে বছরে তিন থেকে চার বার ফসল ফলানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
সুন্দর খাতা গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে চাষাবাদ শুরু হয় এখানে। তবে জ্যৈষ্ঠ মাসে শুরু হয় জলাবদ্ধতা। নদীর তলদেশে পলিমাটি পড়ার কারণে নদীর বুক উঁচু হওয়ায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের ভাঙা অংশের কারণে আধাপাকা ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে ফসলের মাঠ থাকে চার থেকে ছয় ফুট পানির নিচে।
কোরবান আলি নামের একজন কৃষক বলেন, ছয় বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। এর মধ্যে নদীর প্রবল স্রোতে সাড়ে চার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট দেড় বিঘাও পানির নিচে তলিয়ে আছে। প্রতিবছর ভাঙা বাঁধের অংশ দিয়ে পানি ঢুকে আমাদের ফসল আর ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। বাঁধের ওই ভাঙা অংশ এখনই মেরামত করা না হলে, আমাদের আর উপায় থাকবে না।
বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ অঞ্চলের জমিগুলো ছয় মাস পতিত থাকে আর শুধু এক ফসল হয়। বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আমন মৌসুমে যাতে পতিত জমিগুলোতে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারে সে জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। পতিত জমিগুলো প্রতিবছর নিয়মিত চাষাবাদ করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) সেকেন্দার আলী বলেন, বুড়িতিস্তা নদীর গাইড বাঁধের দুই পাশে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েক হাজার বিঘা জমি প্রতিবছর পতিত থেকে যাচ্ছে। এ বাঁধটি মেরামত হলে জমিগুলো আর পতিত থাকবে না তখন কৃষকরা আমন ধান রোপণ করতে পারবে। স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলার খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তায় সক্ষম হবে। তাই বাঁধের ভাঙা অংশটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে ২০০ হেক্টর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, বাঁঁধ ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। কী কারণে এত দীর্ঘ সময় বাঁধটি সংস্কার করা হয়নি, তা খতিয়ে দেখা হবে। জলাবদ্ধতার কারণে যাতে আবাদি জমির চাষাবাদ বন্ধ না থাকে, সেজন্য দ্রুত বাঁধটি সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন