বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মাস না পেরোতেই বিলীন স্কুল রক্ষায় ফেলা জিওব্যাগ

নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ। ছবি : কালবেলা
নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জিওব্যাগ। ছবি : কালবেলা

মাস না পেরোতেই স্রোতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে স্কুল রক্ষায় পাউবোর ফেলা বালুভর্তি জিওব্যাগ। তেঁতুলিয়া নদীভাঙনের কবল থেকে পটুয়াখালীর বাউফলের ৭১নং নিমদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় সংলগ্ন লঞ্চঘাট রক্ষায় ফেলা বালু ভর্তি ৬ হাজার ৬৭১টি জিওব্যাগ স্রোতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) প্রযুক্তিগত স্পেসিফিকেশন না মেনে এবং ব্যাগে বালির পরিমাণ কম দিয়ে স্তর অনুযায়ী না ফেলায় জিও ব্যাগগুলো নদীর স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার। এ ছাড়া অনুমোদিত নকশা ও দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করে বালু ভরার পরে ব্যাগের ভলিউম ও ওজন পরিমাপ না করাসহ ফ্ল্যাট বোট বা ভাসমান প্লাটফর্ম ব্যাবহার না করেই লোডিং আনলোডিংয়েরও অভিযোগ স্থানীয়দের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনবার স্থানান্তরের পরেও নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় ৭১নং নিমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন লঞ্চঘাট রক্ষায় নদীর ৭৪ মিটার অংশে সম্প্রতি ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের ৬ হাজার ৬৭১টি বালু ভতি জিওব্যাগ ফেলা হয়। ঢাকার দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেলেও সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. জবিরুল হক লিটু উপজেলার হোসিংগা গ্রামের একজন ভায়া হয়ে ওই কাজ পরিচালনা করেন।

এবারেও কাজ শেষে মাস না যেতেই নদীর স্রোতে বিলীন হচ্ছে স্কুল রক্ষায় পাউবোর ফেলা বালুভর্তি ওই জিও ব্যাগগুলো।

নিমদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার মু. ইব্রাহিম, রুহুল আমিন, ধানদি এলাকার মো. আনছার, কবির হোসেনসহ কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন থেকে নদীভাঙন রোধে টেকসই প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়ে আসছিল নদীপাড়ের ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিও পালন করেন।

এরই প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট পলাতক হাসিনা সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার মো. আমিনুল ইসলাম মাহমুদ (এমপি) একবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো কাজ হয়নি। ২০১৯ সালের ১৮ মে তারিখে পলাতক হাসিনা সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, স্থানীয় সাংসদ সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ পানি বাংলাদেশ উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকতা সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

নৌকায় ভোট দিলে ও হাসিনা সরকার ক্ষমতায় গেলে ভাঙন রোধে মেগা প্রকল্প গ্রহণের কথা জানান। এরপর ওই বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিমদি স্কুল রক্ষায় ২০০ মিটার অংশে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হয়। এতে নদীভাঙন থেকে হাটবাজার, স্কুল, মসজিদের মতো বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও কয়েক হাজার একর ফসলি জমি রক্ষা পাবে এমন আশায় বুক বাধেন স্থানীয়রা।

কিন্তু তৎকালীন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের অনৈতিক দাবি-দাওয়া ও লুটপাটের কারণে প্রকল্পের কাজের মান ভালো না হওয়ায় অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই নদীর গভীরে হারিয়ে যায় ওই সময় ফেলা জিও ব্যাগগুলো। এবার ঝুঁকিতে থাকা বিশাল এলাকার মধ্যে মাত্র ৭৪ মিটারে জিওব্যাগ ফেলা হয়। তাতেও সীমাহীন অনিয়ম। সিডিউল অনুযায়ী সংখ্যায় কম ও প্রতিটি বস্তার ভর ২৫ কেজি ও আয়তন ০. ১১৬ ঘনমিটার না মানার কারণে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উপরন্তু বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার একমাস না যেতেই তা প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শাহ মো. জবিরুল হক লিটু বলেন, নিমদি সাইডে ১০০ বস্তা ফেলার পরে কাজের মান ভালো মনে হয় না। পরে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তানবীর নামে একজনের কাছ থেকে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার কিনে আমি কাজ করি। প্রতি বস্তায় ২৫০ কেজি থেকে ৩০০ কেজি দিই। কিছু বস্তা ফেটে যায়। কিছু বস্তা কম হতে পারে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির প্রকল্প প্রকৌশলী ঠিকাদার তানবীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি রিসিভ হয়নি।

পাউবো পটুয়াখালীর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল রানা বলেন, ক্যাটাগরি অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে ৭৪ মিটারের কাজ ছিল। ডাম্পিং বস্তা ধরা ছিল ৬ হাজার ৬৭১টি। এ ধরনের কাজে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা লাগে। বরাদ্ধ ছিল ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী পটুয়াখালীতে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ হয়। আমি সরাসরি এ বিষয়ের তদারকি কর্মকর্তা। এরপরেও আমাদের থার্ডপার্টি বা টাস্কফোর্স থাকে। যারা অন্য অধিদপ্তর থেকে এসে কাজের বিভিন্ন বিষয় যেমন, বস্তায় বালু ঠিকটাক আছে কিনা, জিওব্যাগের কোয়ালিটি এরকম সব বিষয় চেক করে থাকেন। তারপরেও কাজ করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হতে পারে। তবে কাজ হয়নি বা সিডিউল মেনে হয়নি আমি এরকম মনে করি না। তেঁতুলিয়া নদী যে পরিমাণ গভীর তাতে সিডিউল অনুযায়ী যে পরিমান ডাম্পিং করতে হয় আর কাজ করতে গেলে যে পরিমাণ খরচ হবে তা জরুরি ভিত্তির কাজে ধরা থাকে না। এজন্য কাজ হয়তো বা দৃশ্যমান বা ইফেকটিভ হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাপ্রধান 

সাগরে ভাসমান ১৩ জেলে উদ্ধার, নিখোঁজ ৬

হবিগঞ্জে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে ভয়াবহ আগুন

অ্যাপলের আগে সারপ্রাইজ ‍দিল গুগল

ভয়াবহ আগুনে তুলার মিল পুড়ে ছাই

২১ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২১ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

১১

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

১২

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

১৩

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

১৪

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

১৫

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

১৬

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

১৭

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

১৮

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

১৯

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

২০
X