মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মাগুরায় ছাত্রদল নেতা খুন, আ.লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার। ছবি : কালবেলা
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার। ছবি : কালবেলা

প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে মাগুরার মহম্মদপুরের রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু তৈয়েব মোল্যার মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (২৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, এই ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ঘটেছে।

বিএনপি নেতার এমন দাবি তুলে করা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) জেলা কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া নিয়ে সংঘটিত এ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ মহম্মদপুর রাজাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য জিবলু বিশ্বাসসহ ১৫ জনের নামে হত্যা মামলা করেছেন।

এদিকে মাগুরায় সংবাদ সম্মেলনে মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার বলেন, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহসভাপতি আবু তৈয়েব মোল্যা ২০ আগস্ট রাত ৮টার দিকে স্বদলের প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে ঢাকার নিউ লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ আগস্ট সকালে মারা গেছেন। এ বিষয় নিয়ে তার বড় চাচা নুরুল ইসলাম আমাদের জানিয়েছেন, রাজাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নাওভাঙ্গা গ্রামের রাজা তার ফেসবুক পেজে তৈয়েবকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাসটি ছিল ‘এই লোকটাকে রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি করার কারণে রাজাপুর ইউনিয়ন তথা মহম্মদপুর উপজেলা ছাত্রদলের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে।’ ওই দিন রাত ৮টার দিকে তৈয়েব তার তিন সহযোগীকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রাজার সঙ্গে দেখা করলে তাকে নিয়ে লেখা স্টাটাস মুছে দেওয়ার কথা বলে। এ সময় তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এ ঘটনার পরে তৈয়ব বাড়ি ফেরার পথে নিজ গ্রামের জনৈক ফিরোজ মোল্যার বাড়ির সামনে পৌঁছালে স্বদলীয় প্রতিপক্ষরা তৈয়েবকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখান অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার নিউ লাইফ হাসপাতালে স্থানান্তর করে আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ২৩ আগস্ট সকালে তৈয়েব মারা যায়।

তিনি বলেন, রাজাপুর ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি তৈয়েবের ওপর হামলার ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা করেছে বলে দাবি করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। রুহুল কবির রিজভির এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভয়ংকর মিথ্যাচার। আমরা এ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। পাশাপাশি এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তার এ মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুণ্ডু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু ও মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ জানান, রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য নেননি। এটি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করায় বিষয়টি বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সঠিক তথ্য জানা থাকলে এ রকম পরিস্থিতি হতো না। হত্যার বিষয়ে তিনি জানান, এলাকায় সামাজিক দল থাকে, সেখানে নানা দলের মানুষ থাকে।

এ বিষয়ে রাজাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাকিল খান বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে রাজাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামীমুল হকের ড্রাইভার রাজার দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে। রাজা স্থানীয়ভাবে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক। এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ঘটেছে। এখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ২০ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানোর পর থেকেই লাইভ সাপোর্টে ছিল। বুধবার সকালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। বুধবার রাতেই তৈয়েবের মরদেহ নিজ গ্রাম নাওভাঙ্গায় নিয়ে আসার কথা। এদিকে মহম্মদপুর থানার ওসি বোরহান উল ইসলাম তৈয়েবুর রহমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় ২২ আগস্ট রাতে তৈয়েবুর রহমানের বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। যেখানে স্থানীয় রাজাপুর ইউনিয়ন কৃষকদল নেতা জিবলু বিশ্বাসসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তুরাগের চার ওয়ার্ড বিচ্ছিন্নের ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নেবে না : মোস্তফা জামান

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আমেরিকান প্রবাসী মিঠুর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

যশোর-৬ আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে গণমিছিল

কুকুরকে খাবার খাওয়ানোর কারণে নারীকে ৩৮ সেকেন্ডে ৮ বার থাপ্পড়!

টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আবারও গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক

চাঁদাবাজি করলে বহিষ্কারের পাশাপাশি স্থান হবে কারাগার : নীরব

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসেবে যে রেকর্ড গড়লেন রোনালদো

আবারও ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত

উপদেষ্টা মাহফুজ বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন কি না জানালেন বাবা আজিজুর

১০

‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শিশু ছোঁয়াকে আছড়ে হত্যা করে ফুপাতো ভাই’

১১

সড়ক পরিহার করে সভা-সমাবেশ করার অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের

১২

আমরা সবাই বাংলাদেশি, এর বাইরে কোনো পরিচয় নেই : জিলানী

১৩

জামদানি পল্লী পরিদর্শনে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

১৪

উৎসবমুখর পরিবেশে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ

১৫

বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক টাকা বেতনে নার্স নেবে কুয়েত

১৬

সংবিধানের ওপরে জুলাই সনদ প্রাধান্য পেতে পারে না : গণফোরাম

১৭

ঢাবি উপাচার্যের বক্তব্য ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপনের প্রতিবাদ কর্তৃপক্ষের

১৮

হাজার হাজার মার্কিনি নিচ্ছেন মেক্সিকোর নাগরিকত্ব

১৯

যাদের জনসমর্থন নেই, তারাই পিআর চায় : এসএম জাহাঙ্গীর

২০
X