নৌকার বাইরে ভোট দিলে ১০ কোটি টাকা লাগলেও সেই হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হালিম শিকদার।
সম্প্রতি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তার এই ব্যক্তব্যের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
নিজ গ্রাম রামচন্দ্রদী এলাকার একটি নির্বাচনী সভায় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘মায়ের ইজ্জত যে হাত দিয়া নষ্ট করা হবে, সেই হাত যদি আমার ১০ কোটি টাকাও লাগে কাইট্টা ফালাইয়া দিমু।’ আগামী ২১ জুন গোপালদী পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি হালিম শিকদার কথিত চুরির অপবাদ দিয়ে নিজ গ্রামের ২ শিশুকে নির্যাতন ও মাথার চুল কেটে দিয়ে জেলা জুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় মামলা হলে পরে তিনি আদালত থেকে জামিন নেন।
তবে হাত কেটে ফেলার হুমকির বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে মেয়র দাবি করেন তিনি এমন কোন বক্তব্য দেননি।
হালিম সিকদার আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি টানা ২ বার গোপালদী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তৃতীয়বারের মতো তিনি গোপালদী পৌরসভা মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
এই নির্বাচনে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর হোসেনের দাবি, হালিম শিকদার তাকে উদ্দেশ্য করে হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। তানভীর হোসেন ও হালিম শিকদার একই গ্রাম রামচন্দ্রদী এলাকার বাসিন্দা।
ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, হালিম শিকদার তার সমর্থক ও ভোটারদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে তিনি বলছেন ‘এই গ্রামের কেউ যদি গাদ্দার, রাজাকার, মীরজাফরের সাথে যায়, তাহলে ২১ জুন তারিখের পর ২২ তারিখে তার সাথে খেলা হবে। রাষ্ট্র চালায় শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ, নজরুল ইসলাম বাবু (সংসদ সদস্য) আওয়ামী লীগের, আমরা আওয়ামী লীগের। তাইলে ক্ষমতা আমাদের হাতে, এই বাংলাদেশের কাউরে ভয় পাওয়ার কথা আমাদের আছে?’
এ সময় তিনি নেতা-কর্মীদের প্রশ্ন করেন, ‘শক্তি কার বেশি, ২১ তারিখ সেন্টারে ক্ষমতা থাকবে কার বেশি?’ তখন নেতা-কর্মীরা উত্তর দেন, ‘আমাদের।’ পরে হালিম সিকদার বলেন, ‘তাহলে ভয়ের কারণ কী? ভয়ের কোন কারণ নাই। এই রামচন্দ্রদীর কোন ভোট যদি অন্য কোন প্রতীকে চলে যায় তবে আমি মনে করবো আমার মায়ের মান সম্মান ইজ্জত ওই ব্যক্তিরে দিয়ে নষ্ট হবে।’
মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, ‘গ্রামের ইজ্জত মানে মায়ের ইজ্জত। মায়ের ইজ্জত রক্ষা করতে হলে গ্রামের সকলে এক ঝাঁকে যাইতে হইব। আর এই গ্রামের ইজ্জত যদি নষ্ট করে তইলে আমার মায়ের ইজ্জত নষ্ট হইব। মায়ের ইজ্জত যে হাত দিয়া নষ্ট করা হবে, সেই হাত যদি আমার ১০ কোটি টাকাও লাগে কাইট্টা ফালাইয়া দিমু।’
হালিম শিকদার বলেন, ‘রামচন্দ্রদী গ্রামের একটারে কিন্তু আতুইরা বানাইয়া দিমু। যেন ওরে কেউ দেখলে কয় তুই আমার মায়ের শইলে হাত দিছস এর লাইগা তোর হাত কাইট্টা দিসে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর নাম উল্লেখ করে হালিম শিকদার বলেন, ‘এমপি সাব আমারে খালি কয় ভাই এইডারে বোয়াইয়া দেই, ওইডারে বোয়াইয়া দেই। এইডারে বোয়াইতে এত লাগবো, ওইডারে বোয়াইতে এত লাগবো। ওরা কিন্তু এখনো ঘর থেইক্কা বাইর হয় নাই, আমার অপেক্ষায় আছে। আমি কই, নির্বাচনতো আমি আগেও করছি দুইবার। একবার আমার লগে আছিলেন, আরেকবার আমার থেইক্কা দূরে আছিলেন। আমার রামচন্দ্রদীর মানুষের ঘাড় একটু ত্যাড়া। যত হেডমওয়ালা লোকই আসুক, যদি মন্ত্রীর পোলাও আমার লগে দাঁড় করায় দেন, আর রামচন্দ্রদীর মানুষ একজোট থাকে তইলে মন্ত্রীর পোলাও কিচ্ছু না। ওগোরে যেই টেহা দিয়া বোয়াইবেন হেই টেহা আমি আমার জনগণরে খাওয়াইয়া দিমু। আপনি খালি আড়াইহাজারে বইয়া থাকেন। আমি আর সুন্দর আলী (আড়াইহাজার পৌরসভা মেয়র) আপনেরে নিয়া জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘুরমু। দেখবেন রামচন্দ্রদীর মানুষ সর্বোচ্চ ভোট দিয়া আপনেরে পাস করাইবো।’
গোপালদী পৌরসভায় হালিম শিকদার ও তানভীর হোসেন ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মনিরুজ্জামান ও গোপালদী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর নির্বাচনের মাঠে আছেন।
বক্তব্যের বিষয়ে তানভীর হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে প্রচারণা চালাতে এসে হালিম শিকদার আমাকে উদ্দেশ্য করে এসব বক্তব্য দেন। পরে তার লোকজন আমার বাড়ির সামনে এসে হুমকি ধামকি দিয়ে যায়।’
এমন বক্তব্যের পর তার এলাকার ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আড়াইহাজারের নির্বাচনের পর হালিম শিকদার ও তার লোকজন ভোটারদের বলেছে- ভোটতো নৌকার এজেন্টদের সামনেই দিতে হবে। ভোটাররা যেন ভিন্ন কিছু না ভাবে। কেন্দ্রে আমার কোন এজেন্ট থাকতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করেছি। তিনি আমাকে যেতে বলেছেন।’
অভিযোগ অস্বীকার করে হালিম শিকদার বলেন, ‘আমি এমন কোন বক্তব্য দিইনি। এমন কোন বক্তব্য কেউ কখনো দেয়? আর এ ধরনের কথা আমি বলতেও পারি না। এগুলা এখন এডিট করা যায়।’
সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘মেয়রের এমন বক্তব্য আমি শুনিনি। আমাকে জড়িয়ে এমন কথা বলবেন তেমনটাও আমি মনে করি না ৷এখানে সবাই আওয়ামী লীগের লোক। তারা নিজেদের মতো নির্বাচন করছেন।’
এ বিষয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বশির আহমেদ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। স্বতন্ত্র প্রার্থী যদি আমাকে জানায় তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’
মন্তব্য করুন