কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ভয়াল ২৯ এপ্রিল : দুঃসহ স্মৃতি আজও কাঁদায় উপকূলবাসীকে

১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। ছবি : সংগৃহীত
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। ছবি : সংগৃহীত

আজ স্মৃতি জাগানিয়া ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এই দিনে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সর্বত্র। ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছিল বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল। বিশ্ববাসী তথা দেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে সেদিন প্রত্যক্ষ করেছিল প্রকৃতির করুণ এই আঘাত।

স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল চারদিকের পরিবেশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি এদেশের মানুষ এর আগে আর কখনও হয়নি। পরদিন সারা বিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেছিলেন ধ্বংসলীলা। আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল বিশ্ব বিবেক।

সেদিন বাংলাদেশে আঘাত হানা ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা এ ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘণ্টা)। ঘূর্ণিঝড় এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৪২ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। মারা যায় প্রায় ২০ লাখ গবাদিপশু। গৃহহারা হয় হাজার হাজার পরিবার। আর্থিক বিচারে ক্ষতি হয়েছিল ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি সম্পদ। প্রায় এক কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছিল।

এই ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ‘ম্যারি এন’ নামে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার পুরো উপকূল। উপকূলবাসী আজও ভুলতে পারছেনা সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি।

প্রলয়ংকরী এই ধ্বংসযজ্ঞের ৩৩ বছর পার হতে চলেছে। এখনও স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি। ঘরবাড়িহারা অনেক মানুষ এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে পারেনি। এই ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ড, হাতিয়া, সন্দ্বীপসহ পুরো উপকূলজুড়েই মানুষ মারা গিয়েছিলেন। এসব এলাকার কিছু অংশে এখনও বেড়িবাঁধ নেই।

৩৩ বছর পরও এখনও অনেক উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার-ভাটা দৃশ্যমান। তাই আতঙ্কে আছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর এত বছর পেরিয়ে গেলেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় বাঁধসমূহ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

এদিকে আজ (মঙ্গলবার) কক্সবাজার-চট্টগ্রামসহ ‍উপকূলীয় এলাকায় সেই দিনের ভয়াল স্মৃতির স্মরণে দোয়া মাহফিল, খতমে কোরআন ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে র‌্যালি-মানববন্ধন করে স্বজনদের স্মরণ করছে মানুষ।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, উপকূল অঞ্চল মিলিয়ে জেলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। আগের সাইক্লোন শেল্টারে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া শেল্টারের স্থলে নতুন করে স্থাপন হয়েছে। মানুষও এখন অনেক সচেতন। দুর্যোগের আভাস পেলে প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সময়মতো আশ্রয় কেন্দ্রে যান। ফলে আগের মতো ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আওয়ামী দুঃশাসনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকরা: ডা. রফিক

ভারতের নজরদারিতে ১১ কোটি ডলারের ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান

ক্রিস্টাল আইসসহ কুয়াকাটায় ৪ যুবক আটক

ছবিতে প্রথমে কী দেখছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন

শ্বশুরবাড়িতে অবৈধভাবে চাল মজুত, ধরা খেলেন জামাই

বিজিবিতে বড় নিয়োগ, অষ্টম শ্রেণি পাসেও করা যাবে আবেদন

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস

সাতসকালে ঝরল ৩ প্রাণ

সিসা কারখানায় অভিযান, ৬ জনের কারাদণ্ড 

জাতীয় উদ্যানে হাতির হামলায় প্রাণ গেল দুই নারী পর্যটকের

১০

দুপুরের মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব জেলায় 

১১

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তান সরকারের পাশে রাশিয়া

১২

নাতি-নাতিকে দুনিয়াছাড়া ও ছেলের বউকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়ে ডাকাতের চিঠি

১৩

‘গাজায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েল’

১৪

এসএসসি পাস না করা শামীম পরিচয় দিতেন ব্যারিস্টার

১৫

গাজায় ৪৮ ঘণ্টার নারকীয় তাণ্ডব, নিহত ৩০০

১৬

০৪ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

০৪ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৯

আসামির হুমকি / ‘একটা মার্ডার করেছি, আরও ১০০টা করব’

২০
X