জমি লিখে না দেওয়ায় নেত্রকোনার বারহাট্টা এলাকায় জন্মদাতা বাবাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে ছেলে। এরপর আহত বাবাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাবা মিয়াচান বেপারি বাদী হয়ে ছেলে সোহেল বেপারির বিরুদ্ধে গত ৩ মে বারহাট্টা থানায় মামলা করেন।
শনিবার (১০ মে) দুপুরে নেত্রকোনা জেলা প্রেস ক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাবা। মামলার পরও পুলিশ অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেপ্তার না করায় তিনি আতঙ্কে আছেন বলেও জানান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মে জেলার বারহাট্টা সদরের রাসেল এন্টারপ্রাইজ নামে ডিমের আড়ত গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিয়াচান বেপারিকে মারধর করে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। এসময় টাকা দিতে না চাইলে মিয়া চান বেপারিকে মারধর করা হয়। কুপিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত করা হলে তাকে স্থানীয়রা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মিয়াচান বেপারি তার ছেলে সোহেল মিয়াসহ, গুমুরিয়া গ্রামের মৃত মুক্তুল মিয়ার ছেলে মন্নান মিয়া, মৃত কেরামত আলীর ছেলে হাসিদ মিয়া ও হাদিস মিয়ার ছেলে বিকাশ মিয়ার বিরুদ্ধে ঘটনার পরদিন ৩ মে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার দারের পর বাবার বিরুদ্ধে ছেলে উল্টো এলাকার কয়েকজনকে নিয়ে একটি মানববন্ধন করে। এসব ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ভুক্তভোগী মিয়াচান বেপারি বলেন, ‘আমি ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। সে ভাড়াটে সন্ত্রাসী মন্নানকে নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। আমাকে মারপিট করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমি এর আগেও শহরের একটি বাসা বিক্রি করে তাকে ৫৭ লাখ টাকা দিয়েছি। সে নেশাগ্রস্ত হয়ে অনেক ঋণ করেছে। আমাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ মামলা নিলেও আসামিদের ধরছে না। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমার বাবা দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেমেয়েদের জমি লিখে দিচ্ছেন। তাকে এই কাজে বাঁধা দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছেন। তিনি দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে থাকলেও আমার মায়ের খোঁজখবর নেন না। আমার বোন তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে বলে তাকে আজও মেনে নেয়নি। অথচ আমার সৎ বোন পালিয়ে একটা নেশাগ্রস্ত ছেলেকে বিয়ে করার পরও তিনি ওই মেয়েকে মেনে নিয়েছেন। আমার মা ও আমার সঙ্গে সবসময় তিনি অন্যায় ও বৈষম্য করে আসছেন।’
ওই এলাকার বজলুর রহমান ও ডুমুরিয়া গ্রামের বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘আমরা মিয়াচান ভাইয়ের জমি বর্গা চাষ করে সংসার চালাই। তার বড় ছেলে সোহেল ১০/১৫ লোক নিয়ে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধান কেটে নিয়ে গেছে। আমরা ঋণ করে জমি চাষ করেছি এখন তাদের পারিবারিক সমস্যার কারণে আমরা জমির ফসল পাচ্ছি না।’
ভুক্তভোগী মিয়াচান বেপারির (দ্বিতীয় স্ত্রীর) বড় মেয়ে সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার বাবা শহরের বাসা বিক্রি করে তার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন। গ্রামে একটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। সেখানে আমাদেরও ভাগ ছিল। কিন্তু দেনা মুক্ত করতে সব টাকা তাকে দেওয়া হয়েছে। নেত্রকোনা শহরেও জায়গা কিনে দিয়েছেন। এখন আবারো টাকার জন্য বাবার ওপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীদের নিয়ে। আমরা সবাই জীবন নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছি।’
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান কালবেলাকে জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে মামলা নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন