আজ-কালকের মধ্যে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ালে যে আন্দোলন চলছে তা অন্যভাবে রূপ নেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে সিলেট নগরীর শিল্পকলা অ্যাকাডেমির অডিটরিয়ামে সিলেট বিভাগে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, এই সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত কিন্তু তার মানে এই নয়, আপনারা যা মনে চায় তাই করবেন মেনে নেব। আমি আহ্বান করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে পারলে আজ রাত অথবা কালকের মধ্যে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করুন। না হলে ঢাকার এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও বৃহত্তর আন্দোলন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আদালতের রায়ে যিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, ইলেকশন কমিশন যার নামে গেজেট করেছে আদালতের রায় মেনে। তাকে আপনারা শপথ গ্রহণ করাবেন না, বিভিন্ন রকম কলাকৌশল করছেন। তাহলে এটা কি আইনের শাসন হলো? তাহলে আমরা কীসের শাসনের জন্য অপেক্ষা করছি?
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যত শিগগির সম্ভব বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন, আপনার সম্মান রক্ষা হবে। এ দেশের মানুষ আশ্বস্ত হবে, দেশের মধ্যে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চাকা চালু হবে, বিনিয়োগের জন্য একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আসবে।
তিনি আরও বলেন, আপনার কয়েকজন উপদেষ্টা বিভিন্ন রকম চক্রান্ত করে দেশে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চান। তাদের সম্পর্কে আপনাকে আমরা জানিয়েছি, আপনি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিন, যাতে দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা হয়, কোনো রকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো অরাজকতার সৃষ্টি করার যাতে পাঁয়তারা না পায়। আপনি সবার সম্মানিত ব্যক্তি, আপনি সে ব্যবস্থা নেবেন। অন্যথায় আপনার সম্মান রক্ষা হবে কি না, আমরা সন্দিহান। কথাগুলো খুব নরম ভাষায় বললাম, সেজন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা খুব নরমভাবে নেবেন।
তিনি বলেন, নির্বাচিত সংসদের কি বিকল্প আছে? আমরা সেই কথা বললে অন্তর্বর্তী সরকার খুব নারাজ হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন দাবি করবে না তো কী দাবি করবে? বর্তমান বিশ্বে গণতান্ত্রিকভাবে শাসনব্যবস্থার জন্য নির্বাচনের কি কোনো বিকল্প আছে? সেই নির্বাচনের কথা বললে কেউ খুব গোস্সা হয়। উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, তারা বলছেন যে- তারা নাকি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত! গণ-অভ্যুত্থান নাকি তাদেরকে নির্বাচিত করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মনে করে তাদের কথায় জনগণ উঠবে ও বসবে। তাই উপদেষ্টারা মন যা চায় তাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা কথা বলছেন গণতন্ত্রের বিপরীত ভাষায়, কাজ করছেন আইনের শাসনের বিরুদ্ধে।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মানুষ ১৭ বছর আইনের শাসনের জন্য অপেক্ষা করেছে। এখন আপনারা যে রাস্তায় হাঁটছেন সেটা অগণতান্ত্রিক পন্থা। এটা কারো জন্য ভালো হবে না।
আওয়ামী লীগের কেউ যেন বিএনপিতে না আসতে পারে সে বিষয়েও তিনি বলেন, অনেক নেতা অনেক কথা বলেছে। বিএনপির কি খরা পড়ে গেছে যে আওয়ামী লীগ থেকে টানাটানি করতে হবে? যে আওয়ামী লীগের রক্তে, যে আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র নেই, তাকে কেন আহ্বান জানাতে হবে? জাতিসংঘ যাদের বিরুদ্ধে ১৪০০ মানুষ হত্যা ও ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করার রিপোর্ট দিয়েছে অথচ তাদের মধ্যে একটুও অনুশোচনা নেই বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো তারা গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী বলে আখ্যায়িত করছে। তারা কীভাবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে?
সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপির জন্ম না হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হত না, বিএনপি সুসংগঠিত না থাকলে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হত না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু হতো না। তাই বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পাহারাদার। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে দেশের একনায়কতান্ত্রিক সংবিধান বাকশালকে বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সংযুক্ত করে মহান আল্লাহ তায়ার ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দেশের সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে সবার সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করে সব মানুষের ধর্মীয় চর্চার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন।
দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শ সম্পর্কে জানাতে হবে, তারেক রহমানের ৩১ দফা তুলে ধরতে হবে। যেই মানুষ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যিনি নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দেবেন তিনিই জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য হতে পারবে।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন। নেতৃত্ব বাছাই তৃণমূল থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকা উচিত, তবে সেটা যেন প্রতিহিংসায় রূপ না নেয়। এই বিষয়ে সমন্বয় কমিটিগুলোকে খেয়াল রাখা উচিত।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছের সভাপতিত্বে ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম. রাসেদুজ্জামান মিল্লাত, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম.এ মালিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সহ সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার, সদস্য এম নাসের রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা ও মহানগর, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন সহ সিলেট বিভাগের সব উপজেলা, পৌর এবং সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন