নকশা জটিলতার অযুহাত দেখিয়ে চার বছর ধরে সেতুর কাজ বন্ধ। ভোগান্তিতে পরেছে সোনাকাটা ইকোপার্কের পর্যটক, জেলে, বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয়রা। সেতুর কাজ বন্ধ থানায় খেয়ায় নদী পার হতে হয়। এতে পর্যটক সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। দ্রুত সেতুর কাজ সমাপ্তের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, দেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় টেংরাগিরি ইকোপার্ক বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার ফকির হাটে অবস্থিত। ওই ইকোপার্কে যেতে সোনাকাটা খাল। এ খাল পার হয়ে ইকোপার্কে প্রবেশ করতে হয়। গত ২০ বছর ধরে ওই খালে স্থানীয়রা সাঁকো নির্মাণ করে। ওই সাঁকো দিয়ে পর্যটকরা ইকো পার্কে প্রবেশ করতো। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আরবিআরপি প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সোনাকাটা খালে ৭২ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করে। ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৫ টাকা ব্যয়ে কাজ পায় বরিশালের এমএস বিল্ডার্স অ্যান্ড মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন লিমিটেড। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তারা যথা সময়ে কাজ শুরু করেনি। ওই বছরের শেষের দিকে কাজ শুরু করেন। ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেতুর দুই পাড়ের গার্ডার নির্মাণ করেই কাজ বন্ধ করে দেয়।
তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, নকশা জটিলতার কারণে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকৌশলী অফিস নকশায় জটিলতার ঠুনকো অজুহাত তুলে কাজ বন্ধ রাখে। বার বার উপজেলা প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদারকে সেতুর কাজ সমাপ্তের কথা বললেও তারা করছেন না। গত চার বছর ধরে সেতু নির্মাণ না করায় ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটক, বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয়রা। এতে ইকোপার্কে প্রবেশ করতে হলে খেয়া পার হতে হয়। ফলে দিন দিন পর্যটক সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুকনো মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচ শতাধিক পর্যটক ইকোপার্কে আসতো কিন্তু সেতুর এ অবস্থার কারণে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সরকার গত চার বছর অন্তত কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এছাড়া সেতুর এমন অবস্থার কারণে ইকোপার্কের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।
সোমবার (১৯ মে) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাড়ের ৪৮ মিটার গার্ডার নির্মাণ করা হয়েছে। মধ্যখানের ২৪ মিটার কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ করেনি।
পর্যটক নজরুল ইসলাম ও জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, সোনাকাটা ইকোপার্কে গিয়েছিলাম কিন্তু ভোগান্তির শেষ নেই। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় খেয়া পার হতে হয়েছে। তাতে তো আরও ভোগান্তি। খেয়া থাকলে মাঝি থাকে না। মাঝি থাকলে খেয়া থাকে না।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মহসিন বলেন, সোনাকাটা খালটি ভাড়ানি খাল না। এটা দিয়ে বড় কোন নৌযান চলাচল করে না, করে ছোট নৌযান। এতে সেতুর মধ্যখানে উচ্চতায় কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। কিন্তু ঠিকাদার ও স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর নকশা জটিলতার অজুহাত তুলে চার বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. টুকু সিকদার বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ মিলে গত চার বছর ধরে সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। কেন বন্ধ করে রেখেছেন তা আমরা বোধগম্য নয়। সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার পর্যটক, জেলে ও বন বিভাগের লোকজনের বেশ সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত এ সেতুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের দাবি জানান তিনি।
ফরেষ্টার জাকির হোসেন বলেন, সেতুর কারণে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যটকরা আসলেই সেতুর এমন অবস্থা দেখেই ইকোপার্কে প্রবেশ না করে ফিরে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছেন।
সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, ওই খালে ভারি কোনো নৌযান চলাচল করে না। যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় সেতু নির্মাণ করলেই হয়।
তিনি আরও বলেন, সেতু নির্মাণের নকশা অনুসারে কাজ করতে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে লিখিত দিয়েছি কিন্তু ঠিকাদার ও প্রকৌশলী অফিস কাজ শুরু করছেন না। তাদের সেতু নির্মাণে ভিন্ন রহস্য রয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তালতলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্থানীয়দের বাঁধার কারণে নকশা জটিলতায় সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদার যে পরিমাণ কাজ করেছে তাকে সেই পরিমাণ বিল ছাড় দেয়া হয়নি। তাকে অল্প বিল ছাড় দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান সেতুর কাজ বন্ধ থাকা স্বীকার করে বলেন, আমি সেতু নির্মাণ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ওই স্থানের জন্য সেতুর বর্তমান নকশাই যথেষ্ট। আমি সেতুর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে প্রধান প্রকৌশলী অফিসকে অবহিত করেছি। সেতুটির কাজ শুরু করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। অধিদপ্তরের অনুমতি পেয়েই কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন