রাজবাড়ীর পদ্মাপাড়ের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে আবারও রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভয়ংকর এ সাপের ভয়ে কৃষিক্ষেতে কাজ করতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে জমির ফসল তোলা, ফসলের পরিচর্যা ও গবাদিপশুর খাবার (ঘাস) সংগ্রহ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে এ ব্যাপারে কৃষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ধান, ভুট্টা, তিলসহ অন্যান্য ফসল মাঠেই পেকে আছে। সাপের ভয়ে ফসল কাটার মানুষ নেই। এতে অধিক ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা কৃষকদের।
জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলা উজানচর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের চর মহিদাপুরের আব্দুর রহমান শেখের ছেলে কৃষক মো. সুরুজ শেখ। গত ২০ মার্চ ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া তুলতে গিয়ে রাসেল ভাইপারের কামড়ের শিকার হন। টানা ১২ দিন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে তিনি এখনও হাঁটতে-চলতে পারেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তাকে আরও অন্তত ৬ মাস চিকিৎসা নিতে হবে।
শুধু তিনিই নয়, গত এক সপ্তাহে কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে পদ্মাপাড়ের চর মজলিশপুরের সাগর শেখ ও দৌলতদিয়া বাহির চরের আলেকা বেগম নামের দুজন রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ের শিকার হয়েছেন। তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে আক্রান্ত কৃষক মো. সুরুজ শেখ কালবেলাকে বলেন, মিষ্টি কুমড়া তোলার সময় আমাকে সাপে কামড় দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই। পরে সেখান থেকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর থেকে এখনো চিকিৎসা চলছে। পা ফুলে আছে, ব্যথাও আছে। রোদের মধ্যে যেতে পারি না কাজ করতে পারি না।
জোছনা নামের এক নারী বলেন, সাপের ভয়ে কেউ আমরা মাঠে যেতে পারছি না। ফসল পেকে গেছে কাটতে পারছি না, আনতেও পারছি না। আমরা চরে বাস করি। এ সাপের ভয়ে রাতে ঘুমাতেও পারি না অনেক রাত জেগে থাকি। আমাদের ছেলে সন্তান নিয়ে খুবই ভয়ে আছি।
ইমরান সরদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, সাপের ভয়ে আমাদের বাড়ির চারপাশে চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে রাখছি। সাপ যেন বাড়িতে ঢুকতে না পারে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কেউ মাঠে যায় না।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান কালবেলাকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরে আক্রমণের হার কম। কৃষক আগের থেকে এখন বেশ সচেতন। আমরা গত বছরও বেশ কিছু গামবুট বিতরণ করেছি। এ বছরও ১৫০ জন কৃষকের মাঝেও গামবুট বিতরণ করা হয়েছে। সচেতনতার জন্য এ গামবুট বিতরণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমরা আরও কৃষকদের মাঝেও গামবুট বিতরণ করব। কৃষকদের সবাইকে বেশি বেশি সচেতন থাকতে হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, গোয়ালন্দে চর অঞ্চলে এ রাসেলস ভাইপারের উৎপাত শুরু হয়। যার কারণে বেশ কয়েকজন রাসেল ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। ১৫০ জন কৃষকদের মাঝে গামবুট বিতরণ করা হয়েছে। এ বছর কোনো মারা যাওয়ার সংবাদ আমরা পাইনি। তবে দুতিনজন কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন আছে, পুরোপুরি সুস্থ হননি।
এদিকে, রাজবাড়ীর পাংশায় ধান ক্ষেতে দেখা মিলেছে রাসেলস ভাইপার সাপের। পরে সাপটি পিটিয়ে মেরে ফেলেন কৃষকরা। শনিবার (২৪ মে) সকালে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের পদ্মার চরের ধান ক্ষেতে সাপটি মারা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী কৃষকরা জানান, সাপটি প্রায় তিন ফুট লম্বা হবে। মারার পর সাপটি তিল ক্ষেতে পুঁতে রাখা হয়।
কৃষক সালাম বেপারী বলেন, আমরা ছয়জন দিনমজুর স্থানীয় শিমুল প্রামানিকের জমিতে ধান কাটতে যাই। ধান কাটার সময় হঠাৎ বড় একটি সাপ দেখতে পাই। এ সময় সবাই মিলে কাচি দিয়ে সাপটি মেরে ফেলি। পরে জানতে পারি এটা রাসেলস ভাইপার সাপ। এখন তো সাপ নিয়ে ভয়ে আছি। ঘটনার পর থেকে এলাকায় কৃষকদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এ ঘটনার পর থেকে অনেকে পদ্মার চরে ধান কাটতে যেতে চাচ্ছে না।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম আবু দারদা বলেন, ধানের মাঠ থেকে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ কৃষকরা পিটিয়ে মেরে ফেলার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুতই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাবাসপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা হবে।
মন্তব্য করুন