সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুর রহমান যৌন হয়রানিসহ নানাবিধ অপকর্ম ঢাকতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। শনিবার (৩১ মে) ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগপন্থি এ শিক্ষক।
জানা গেছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক অনুষ্ঠান এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঙ্গে শিক্ষক শফিকের ছিল ঘনিষ্ঠতা।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে সামগ্রিক বিষয়কে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেন তিনি। যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ২৬ মে বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক শফিকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক তাৎক্ষণিকভাবে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং ২৯ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে, প্রাথমিক তদন্তে সহকারী শিক্ষক শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, ক্লাসরুমে ছাত্রীকে চুমু খাওয়া, স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ ও বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। যেসব বিষয়কে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন করেন শফিকুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে- নয়ন নামে এক ছাত্রকে অপর এক ছাত্রীর সঙ্গে আপত্তিকরভাবে বসে থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করছেন।
বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার ছাত্র নয়ন বলেন, শিক্ষক শফিক সংবাদ সম্মেলনে আমাকে জড়িয়ে যে বিষয়টি উপস্থাপন করেছে সেটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। মূলত নিজের অভিযোগ ও দোষ ঢাকতে আমার ওপর তিনি দোষারোপ করছেন কারণ আমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি। মেয়েদের যৌন হয়রানি করা তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যে বিষয়টি পুরো বিদ্যালয়ের সব ছাত্র-ছাত্রী জানে। তাই শিক্ষক শফিকের শাস্তির দাবিতে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এ যাবৎকাল মেয়েদের সঙ্গে যে অপকর্ম করেছে সেগুলো ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে এ জন্য নিজের দোষ ঢাকতে অন্যের ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন। যেহেতু বিক্ষোভ মিছিল-মানববন্ধনের নেতৃত্ব আমি দিয়েছিলাম তাই আমাকে ফাঁসানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি কাজটি করেছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আশা করি তার সব অপকর্ম প্রতিবেদনে প্রকাশ পাবে। যার ফলশ্রুতিতে তিনি তার শাস্তি পাবেন- এটাই আমাদের দাবি।
তদন্ত কমিটির সদস্য সেলিম রেজা মন্টু বলেন, শিক্ষক শফিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। লিখিত প্রতিবেদন দ্রুত জমা দেওয়া হবে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। ছাত্রীদের সঙ্গে আপত্তিকর কথাবার্তা, স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শসহ যৌন হয়রানির কয়েকটি তথ্য পাওয়া গেছে। নিজের পছন্দের ছাত্রীদের তিনি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিতেন সে বিষয়টির সত্যতা রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ বিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ নিবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, মঙ্গলবার (২৭ মে) উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা তদন্ত শেষে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। একই সঙ্গে শিক্ষা অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে যথাযথ তথ্য-প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, রমজান মাসে শ্রেণিকক্ষে এক ছাত্রীর জন্মদিন পালন করেন শিক্ষক শফিক। এ বিষয় নিয়ে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি তাকে শোকজ করে। নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে সেবারের মতো রক্ষা পান তিনি।
মন্তব্য করুন