গত ১ আগস্ট খুলনার রূপসা সেতু টোল প্লাজা থেকে ৯ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবাসহ তিন মাদক বিক্রেতাকে আটক করে র্যাব। এ সময় ইয়াবা বহনের অভিযোগে সিএইচআর মডেলের একটি জাপানি টয়োটা প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়। মামলাটির অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে খুলনার একটি কিশোর গ্যাং, মাদকের সিন্ডিকেট ও ছাত্রদল নেতাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য। র্যাব, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর লবণচরা এলাকার একটি কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করে ওই এলাকায় মাদক বিক্রি বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে মাদক এনে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে খুলনার বিভিন্ন এলাকায়। এই কাজে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন নামিদামি গাড়ি। এতে সহজে পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ হচ্ছে। কিন্তু গত ১ আগস্ট আর র্যাবের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি চক্রটি।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেপ্তার মাদক ব্যবসায়ী সজিব ‘খুলনার কার এভিনিউ’ নামে একটি শো-রুম থেকে গাড়িটি কেনে। চালক সুমনকে নিয়ে সজিব নিজেই চট্টগ্রাম গিয়ে মাদকের চালান নিয়ে খুলনায় আসত। আর এই মাদক ছোট ভাই আশিকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিত পুরো এলাকায়। লবণচরা এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের হোতা এই আশিক। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদকসহ ডজন খানেক মামলা খুলনার বিভিন্ন থানায়। সূত্রটি জানায়, তদন্তকালে একটি ভিডিও ফুটেজে এই মাদক চোরাচালানের সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে এসেছে।
দেখা গেছে, গত ১৭ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশে সভাপতিত্ব করতে খুলনা আসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। র্যাবের হাতে আটক এই প্রাইভেটকারে করেই খুলনায় ঘুরে বেড়ান তিনি ও অন্য ছাত্রদল নেতারা। মাদক বিক্রেতার গাড়িতে ছাত্রদল সভাপতি কেন জানতে চাইলে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ কালবেলাকে বলেন, ঢাকা থেকে নোহা মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা খুলনা যাই। রূপসা সেতু থেকে খুলনা মহানগর ছাত্রদল নেতারা আমাদের জন্য আরেকটি প্রাইভেটকার তৈরি করেছিলেন। আমরা সেটাতে করে জনসভাস্থলে গিয়েছি। প্রাইভেটকারের মালিক কে এটা আমি জানি না।
মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব তাজিম বিশ্বাস বলেন, সভাপতিকে নেওয়ার জন্য মহানগর আহ্বায়ক ইশতি একটি গাড়ি সংগ্রহ করেন। এর মালিক কে আমিও জানি না। তবে মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি কালবেলাকে বলেন, ওই গাড়িটি সভাপতি ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছিলেন।
ছাত্রদল নেতাদের পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যে আরও একটি ভিডিও ক্লিপ আসে কালবেলার কাছে। তাতে দেখা যায়, নোহা মাইক্রোবাসে করেই রূপসা সেতুর টোল প্লাজায় পৌঁছান শ্রাবণ। পরে খুলনার ছাত্রদল নেতারা তাকে সিএইচআর মডেলের ওই প্রাইভেটকারে তোলেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গাড়ির মালিক সজিবের ভাই কিশোর গ্যাংয়ের হোতা আশিকের সঙ্গে আগে থেকেই মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতির সখ্য রয়েছে। প্রতিপক্ষের ওপর হামলার কাজে ওই গ্যাংকে তিনি ব্যবহার করেন। এর আগে বিএনপির ইফতার মাহফিলে জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নাদিমুজ্জামান জনিকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনায়ও ইশতি ও আশিক জড়িত ছিলেন। আর মূল মাদক বিক্রেতা সজিবের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি এম এ কাফি সখার। একাধিক ইয়াবা ও মাদক মামলার আসামি সখার রাজনৈতিক শিষ্য ছিলেন ইশতি। অর্থাৎ ইশতিই মাদক চোরাচালান চক্রটির সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি বলেন, মাদকের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আশিক আমাদের ছোট ভাই। সে ভালো ছেলে। সজিবকে আমি চিনি না। গাড়ির বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতির বক্তব্য উদ্বৃতি করলে ইশতি বলেন, সভাপতি নোহা নাকি এই গাড়িতে ঢাকা থেকে এসেছে, তা আমার মনে নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপসা থানার উপপরিদর্শক মো. রাজু বলেন, মাদক বিক্রি ও চোরাচালানের সঙ্গে আরও অনেকের নাম আসছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন