সদ্য কারামুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, যারা আমাদের বিরুদ্ধে নানা কল্পকাহিনি বানিয়েছেন তারা আজকে চুপ মেরে গেছেন। এটা শুধু আমার মুক্তির কারণে। এর আগে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে দেখতে পাব তাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ১১টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কারামুক্তি উপলক্ষে উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে শোকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এটিএম আজহার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যেভাবেই জড়িত সরকারকে জানাতে চাই তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক। তা না হলে বাংলাদেশ আইনের শাসন থাকবে না। আজকে মানুষ আদালতকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আগে আদালত দলীয়ভাবে চলত। এখন আদালত দলীয় মুক্ত হয়েছে। আমার তো রায় হয়ে গিয়েছিল শুধু ফাঁসি কার্যকর করা বাকি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি মুক্ত হলাম। আর আমাকে ফাঁসির আসামি হিসেবে ঝোলানোর চেষ্টা করল যে বিচারপতিরা কোথায় আজকে তারা। তাদের আজ খুঁজে পাওয়া যায় না।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে তিনি জড়িত ছিলেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজ আমি মুক্ত ও স্বাধীন। আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই, যে অপরাধে আমাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম সে অপরাধী আমি সামান্যতম জড়িত ছিলাম না। আমাকে অন্যায়ভাবে করা হয়েছে।
জামায়াতের সাবেক নেতা বলেন, আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ গঠন করেছিল সেই বিচারপতিদের তো বিবেক থাকা দরকার। তিন কিলোমিটার দূর থেকে নাকি আমাকে দেখেছে এর মধ্যে নাকি বাড়িঘরও ছিল। এটা কি সম্ভব? তিন কিলোমিটার দূর থেকে কীভাবে দেখা সম্ভব। যারা সাক্ষী দিয়েছেন তারা মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারেন। কিন্তু বিচারপতিদের বিবেক গেল কোথায়। এরা বিবেক বিক্রি করেছিল আরেক জায়গায়। এ বিবেকহীন বিচারপতি যতদিন বাংলাদেশে থাকবে দেশের মানুষ সুবিচার পাবে না।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তাদের জুলুম অত্যাচারের শুধু জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যারা ওই সরকারের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছেন তারা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫ আগস্টের এ ঘটনা ঘটানোর কারণেই বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আজ স্বাধীন হয়েছে। আমরা শুধু স্বাধীন হইনি, আমাদের দেশের ভৌগোলিক সীমানাও স্বাধীন হয়েছে। আমাদের দেশকে নিজেরাই পরিচালনা করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা। আধিপত্য শক্তির হাত থেকে বাংলাদেশ আজ মুক্ত।
বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে আজহার বলেন, বাংলাদেশকে সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ষড়যন্ত্র হবে তবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। শকুনেরা এখনো হাত পেতে আছে দেশটাকে দখল করার জন্য। তারা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচন কবে হবে জানি না। তবে আমরা চাচ্ছি তাড়াতাড়ি নির্বাচন হোক। এপ্রিলের মধ্যে বলা হয়েছে, এর মধ্যে সংস্কার শেষ করতে পারলে আমরা এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন শুরু করব ইনশাআল্লাহ। সেই নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেই দাবি আমরা সরকারের কাছে করব। আগের মতো যেন ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি না হয়। নিশ্চয়ই এ সরকার সেটা করার সাহস পাবে না। এ সময় তিনি রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জের) মানুষের খেদমত করতে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ভোট চান।
শোকরানা মাহফিলে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর মহানগরীর আমির এটিএম আজম খান, জেলার আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, মহানগর ছাত্র শিবিরের সভাপতি নুরুল হুদা প্রমুখ।
এর আগে আজ সকালে কারাভোগের ১৪ বছর পর নিজ জেলায় ফিরেছেন তিনি। বিকেল ৩টায় বদরগঞ্জ উপজেলার শাহাপুর মাঠে গণসংবর্ধনায় তিনি অংশগ্রহণ করবেন। পরে নিজ বাড়ি লোহানীপাড়া ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থান জিয়ারত শেষে পৌরশহরের বালুয়াভাটার বাড়িতে এসে রাতযাপন করবেন তিনি।
মন্তব্য করুন