চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় হৃদ্রোগে বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায় বাসচাপায় প্রাণ গেল ছেলের। ঈদের ছুটি শেষে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন ওই যুবক। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাসটি জব্দ করেছে। তবে ঘাতক বাসচালক পালিয়ে গেছে।
শনিবার (১৪ জুন) আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার মতলব-বাবুরহাট পেন্নাই সড়কের বরদিয়া এলাকায় জৈনপুর পরিবহন বাসচাপায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
নিহত মুরাদ হোসেন (৩৫) লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার মধুপুর গ্রামের মৃত শাহজাহানের ছেলে। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস সহায়ক ছিলেন। তিনি স্ত্রী, ৩ ও ১ বছরের ২টি শিশু সন্তান রেখে গেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সকালে বাবুরহাট থেকে ঢাকাগামী জৈনপুর পরিবহন যাত্রীবাহী বাসটি ছেড়ে আসে। বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলটিকে বরদিয়া সরকার বাড়ি এলাকায় দ্রুতগামী ঘাতক বাসটি চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মোটরসাইকেল আরোহী মুরাদ ছিটকে পড়ে গুরতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে তার অবস্থা বেগতিক দেখে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আশরাফুল ইসলাম লিমন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রী ইফরিন সুলতানা কালবেলাকে বলেন, আমার স্বামী ঢাকা হাইকোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করতেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় একটি বাসায় থাকতেন। পবিত্র ঈদুল আজহার পূর্বে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এখন ঢাকা থেকে আমাদের নিতে আসছিলেন। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও মারা গেছেন। আল্লাহ আমার স্বামীকেও নিয়ে গেল। এখন আমি আমার ২টা ছোট্ট ছোট্ট ছেলে সন্তান নিয়ে কীভাবে থাকব?
নিহতের চাচাতো ভাই মোবারক হোসেন বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মুরাদের বাবা মারা যান। সপ্তাহ না যেতেই আজ দুর্ঘটনায় মারা গেল মুরাদ। এত অল্প সময়ের মধ্যে পরিবারের দুজন সদস্যের মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। এ ঘটনায় পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতের মামাতো ভাই হারুনর রশীদ বলেন, আমার ভাই সরকারি চাকরি করত। আমার ভাইয়ের ২টি সন্তান আছে। কখনোই মুরাদ হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালায়নি। যখনই বাইক চালায় খুব সতর্কভাবে চালাত। আগে বিভিন্ন পত্রিকায় দেখছি এই রোডে বাসের অদক্ষ ড্রাইভারের কারণে অনেক মানুষ মারা গেছে। আমার ভাইকে যে বাস চাপা দিয়ে মেরেছে তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্থানীয় রিপন ভুঁইয়া, শারমিন আক্তারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মতলব-ঢাকা সড়কে জৈনপুর পরিবহন বাসগুলো বেপরোয়াভাবে যাতায়াত করে। এছাড়া প্রায় সময় হেলপার দিয়ে বাস চালায়। তাদের বেপরোয়া চালানোর কারণে গত রোববার (০৮ জুন) একই এলাকায় জৈনপুর পরিবহন বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রী ঘটনাস্থলেই ২ জন মারা যান এবং আহত হন চার যাত্রী। দোষীদের বিচারের দাবি জানান তারা।
মতলব দক্ষিণ থানার ওসি মো. সালেহ আহমেদ বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যাই। আহত অবস্থায় মোটরসাইকেল আরোহীকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্য করুন