ইরাকের রাজধানী বাগদাদে আগুনে দগ্ধ হয়ে মোহাম্মদ আলী (২২) নামের এক বাংলাদেশি তরুণের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার (১৫ জুন) রাতে দগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন গত মঙ্গলবার এ খবর জানতে পারেন।
এদিকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলায় ইরাকে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আলীর মরদেহ দেশে আনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
নিহত মোহাম্মদ আলী ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের চেউয়াখালি গ্রামের হাফেজ মো. সালেহ আহম্মেদের ছেলে।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরে ওই এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, স্বজন হারানোর বেদনায় শোকে মুহ্যমান ভুক্তভোগীর পরিবার। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে মোহাম্মদ আলী ছিলেন ষষ্ঠ। সংসারের হাল ধরতে সাত বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন ইরাকের বাগদাদ শহরে।
এদিকে আদরের ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা। নির্বাক ছাউনিতে শেষবারের মতো আদরের ছেলেকে একবার দেখতে আহাজারি যেন থামছেই না। কান্নায় বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা নাজমা বেগম।
আলীর বাবা সালেহ আহম্মেদ কালবেলাকে জানান, অভাবের সংসারের হাল ধরতে সাত বছর আগে সুদূর ইরাকে পাড়ি জমিয়েছেন ছেলে মোহাম্মদ আলী। গত শনিবার (১৫ জুন) রাতে জেনারেটরের ইঞ্জিন চলা অবস্থায় তেলের পাইপ ফেটে পেট্রোল ছড়িয়ে পড়ে মোহাম্মদ আলীর গায়ে। পরে তড়িঘড়ি করে জেনারেটরের সুইচ বন্ধ করতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। মঙ্গলবার রাতে তার শ্যালকের মাধ্যমে জানতে পারেন আলী মারা গেছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আলীর বড় বোন ইয়াছমিন বেগম জানান, আমাদের খুব অভাবের সংসার ছিল। বাবা-মায়ের সুখের জন্য অল্প বয়সে বিদেশে পাড়ি জমান আলী। গত বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে এসে তার বন্ধুদের মাধ্যমে বিয়ে করবেন বলে পরিবারকে জানান। কিন্তু আমাদের ঘরটি জরাজীর্ণ থাকায় তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলি। এবং বাড়ির পাশে একটি বিল্ডিং তৈরি করি। কিছুদিন পর দেশে এসে বিয়ে করে ওই বিল্ডিংয়ে থাকার কথা ছিল আমার ভাইয়ের। দালান হলো; কিন্তু বিয়ে করে বউ নিয়ে ওই দালানে ওঠা হলো না।
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনা জটিল হয়ে পড়েছে। মরদেহ দেশে ফেরত আনতে চেষ্টা চলমান আছে। যদি দেশে আনা সম্ভব না হয় তাহলে হযরত আলী (রা.) মাজারের পাশে জমি কিনে দাফন করা হবে।
এদিকে দূতাবাসের মাধ্যমে আলীর মরদেহ ফিরে পেতে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর অনুরোধ জানিয়েছেন তার পরিবার।
এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে কোনো চিঠি আসেনি। চিঠি এলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন