নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নারায়ণগঞ্জে ২ খুন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু থেকে চিরশত্রু

বাঁ থেকে নিহত আব্দুল কুদ্দুস ও মেহেদী হাসান। ছবি : কালবেলা
বাঁ থেকে নিহত আব্দুল কুদ্দুস ও মেহেদী হাসান। ছবি : কালবেলা

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের দ্বন্দ্ব ও হামলায় এক রাতে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাতের ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বাবু-মেহেদী গ্রুপের বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৩৮) ও রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক আব্দুল কুদ্দুস (৬০)। তবে এক সময় নিহত মেহেদী ও রনির মধ্যে ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তারা দুজন ছিলেন একই গ্রুপে। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে-ময়দানে বিএনপির রাজনীতি করেছেন।

তবে গত ৫ আগস্টের পরে নানা কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এক সময়ের দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান চিরশত্রু। আর এই শত্রুতার বলি হলেন মেহেদী নিজে, সঙ্গে নিরীহ বৃদ্ধ আব্দুল কুদ্দুস।

জানা গেছে, বন্দর রেললাইন অটোস্ট্যান্ড ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়েক দিন ধরে সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাওসার আশার অনুসারী রনি-জাফর গ্রুপের সঙ্গে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির নেতা হান্নান সরকারের অনুসারী বাবু-মেহেদীর বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে শুক্রবার (২০ জুন) দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হন।

সেই বিরোধের জেরে শনিবার (২১ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাবু-মেহেদী গ্রুপের লোকজন রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক আব্দুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন রেললাইন সংলগ্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দর সিরাজ্উদ্দৌলা ক্লাব মাঠ দিয়ে মেহেদী যাওয়ার পথে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের মধ্যে কথা বলে জানা গেছে, রনি ও মেহেদীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। তাদের বাড়িও কাছাকাছি। ২০-২৫ বছর ধরে তারা একসঙ্গে বিএনপির রাজনীতি করছেন। তবে গত ৫ আগস্টের পরে রনির ছোট ভাই জাফর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন।

রনি-মেহেদী গ্রুপের বাইরে গিয়ে জাফর পৃথকভাবে আবুল কাউসার আশার মিটিং-মিছিলে অংশ নেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কিন্তু ছোট ভাইয়ের পক্ষ নেয় রনি। এ নিয়ে রনি ও মেহেদীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। এদিকে রনির ছেলে রায়হান এলাকার বেশ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করে। সম্প্রতি দেশীয় অস্ত্র হাতে তার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ করায় রনি ও মেহেদীর মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন মশু কালবেলাকে বলেন, রনি, মেহেদী ও বাবু হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা ও হান্নান সরকারের কাছের লোক। মেহেদী হাসান ও রনি এক সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পরে মেহেদী হাসান বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছিলেন। এ ছাড়া বাবু শিকদার নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে ছিলেন। তবে তারা কেউ এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে নেই। তারা ব্যক্তি স্বার্থে এ কাজ করেছে। আমাদের দল এ ধরনের কাজকে সমর্থন করে না।

নিহত মেহেদীর সঙ্গে রনির বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত সময়ে রনি ও মেহেদীর মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাদের চলাফেরা দেখলে মনে হতো, তারা এক মায়ের পেটের দুই ভাই। বিএনপি দলের সাংগঠনিক কাজে এক সময় তারা জুটি বেঁধে কাজ করেছে। আর রনির ভাই জাফর গত ৫ আগস্টের পরে এসে বিএনপি নেতা বনে গেছেন। এই জাফর ও রনির ছেলে রায়হানকে নিয়ে নানা ঝামেলার কারণে রনি ও মেহেদী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বলে শুনেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন পদধারী নেতা বলেন, রনি-জাফর গ্রুপে রনির ছোট ভাই জাফর। জাফর এখন বিএনপি নেতা পরিচয় দেয়। অথচ বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তাকে বিএনপির রাজনীতিকে দেখা যায়নি। আর রনির ছেলে রায়হান এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং লিডার। সে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে আসছে। মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রায় সময় নানা অভিযোগ আসত। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় রনি ও মেহেদীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। এসব ঘটনার জের ধরে রনি-জাফর গ্রুপের সঙ্গে বাবু-মেহেদী ও হান্নান সরকার গ্রুপের বিরোধী তৈরি হয়।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় দুপক্ষ দুটি হত্যা মামলা করেছে। এতে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারকে আসামি করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুপক্ষের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকরিজীবীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ল

নিহত হননি ইরানের শীর্ষ আইআরজিসি জেনারেল, দেখা গেল প্রকাশ্যেই

যুদ্ধবিরতির পর পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে অবস্থান জানাল ইরান

হেডিংলিতে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক জয়

‘আমরা খুব খুশি যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এটা শুরুর দরকারই ছিল না’

আমরা ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছি : নেতানিয়াহু

চীনের প্রশংসায় বিএনপি

দুঃখ প্রকাশ করে ইরানের প্রেসিডেন্টের কাতারের প্রতি বার্তা

ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ

হাসনাতের পোস্টে দুদকে তোলপাড় / তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ দুর্নীতি দমন কমিশনের

১০

সংঘাত থামছে না, উল্টো আরও জটিল রূপ নিচ্ছে

১১

যেসব লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন নেতানিয়াহু

১২

‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন’ স্লোগান দিয়ে বিপাকে বিএনপির ১৩ নেতা

১৩

অধ্যক্ষের ‘ভুয়া’ সনদ তদন্তে দুদকের অভিযান

১৪

ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

১৫

কাজ না করেই বিল উত্তোলন, প্রতিবেদন জমা হয়নি ৫ কর্মদিবসেও

১৬

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারও বজ্রসহ ভারী বর্ষণের আভাস

১৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন সম্পাদক আয়ান শর্মার বাবার পরলোকগমন

১৮

জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে যুক্ত হলো বাংলাদেশ

১৯

জনগণের ভেতরে বিএনপির শেকড় : প্রিন্স

২০
X