হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত বাঁশি সূত্রধরের স্ত্রী সুনিতী রাণী সূত্রধর (৮৭)। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কালনী নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে তার বাড়ি। নদীর পাড়ে বসে বারবার চোখ মুছছেন তিনি। মাত্র কয়েক মাস আগেও নিজের প্রয়াত স্বামীর ভিটায় বসবাস করছিলেন সুনিতী।
কালনী নদীর ভাঙনে নিজের বসতভিটা হারিয়ে এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা বয়োবৃদ্ধা সুনিতী রাণীর চোখে এখন কেবল বিষাদের জল। জীবনের শেষ সময়ে যেখানে নিজের বসতঘরে শান্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার কথা সেই সময়ে সুনিতী রাণীর দিন কাটছে মানুষের বাড়ির আশ্রিতা হিসেবে। শুধু সুনিতী রাণীই নন, কালনী নদীর ভাঙনে বিগত অর্ধযুগে বসতভিটা হারিয়েছেন কাকাইলছেও ইউনিয়নের কালনীপাড়া, বদরপুর, নদীপুর, সৌলরী, মনিপুর, সাহানগরসহ অন্তত আট গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার।
সুনিতী রাণী জানান, কয়েক মাসে আগে ঘরে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ঘরের মেঝেতে ফাটল দেখা দিলে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নদীতে চলে যায় বসতভিটা। এ সময়ে কোথায় যাব, শেষ বয়সে কীভাবে কাটবে বাকি দিন—সেই চিন্তায় এখন দিন কাটে।
স্থানীয়রা জানান, বিগত আড়াই বছর আগে কাকাইলছেও ইউনিয়নের নদী পাড়ের গ্রামগুলো বাঁচাতে কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া নদীভাঙন থেকে বাঁচাতে আর কোনো কাজই করা হয়নি। বছরের পর বছর আশ্বাস মিললেও অর্ধযুগেও নদী ভাঙনরোধে কোনো টেকসই প্রকল্প গ্রহণ না করায় প্রতিনিয়তই নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে দিশেহারা গ্রামগুলোর সহস্রাধিক পরিবার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই শুরু করা হবে কাজ৷ বিগত ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ দুই অর্থবছরে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় নদীভাঙন রোধে ব্যয় করা হয়েছে ৩ কোটি টাকারও বেশি।
বদরপুর গ্রামের শংকর সূত্রধর জানান, বিগত অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে কাকাইলছেও ইউনিয়নের বরপুরসহ প্রায় আটটি গ্রাম নদীভাঙনের কবলে পড়ে। বছরের পর বছর আশ্বাস মিললেও নদীভাঙন থেকে গ্রামগুলো রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সন্ধ্যা রাণী সূত্রধর নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, কয়েকদিন আগে আমার বসতভিটাও নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তিনি অন্য এক বাড়ির পেছনে কোনোরকমে পরিবার নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি৷
স্থানীয় শিক্ষক নিখিল সূত্রধর, স্থানীয় বাসিন্দা রমাকান্ত, মিলন মিয়া, ফয়সল মিয়ারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কালনী নদীর ভাঙনে বসতভিটা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ শত শত স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে৷ কিন্তু নদীভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কাজই করা হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মহিবুর রহমান বলেন, কালনী নদীর ভাঙনে কয়েকটি গ্রামের শত শত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু নদীভাঙন রোধে কোনো কাজই করা হয়নি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি৷ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি৷ উনারা জানিয়েছেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া জরুরি মেরামতের প্রয়োজন হলে তারা করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা কমিশনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদন হলেই দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ওই এলাকায় কাজ শুরু করা হবে।
মন্তব্য করুন