মানিকগঞ্জের হরিরামপুর পয়েন্টে উজান থেকে নেমে আসা জোয়ারের পানির তোড়ে ফুঁসে উঠেছে পদ্মা নদী। এরই মধ্যে পদ্মার ভয়াল গ্রাসে উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ হাজার একর জমি বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে শত শত বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় পঞ্চাশের দশক থেকে ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিই নদীভাঙনের কবলে পড়ে। আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে এ তিন ইউনিয়নে চর জেগে উঠলে নব্বই দশকের শেষ দিকে জনবসতি গড়ে ওঠে।
ভাঙন কবলিত অন্যতম আরেকটি ইউনিয়ন কাঞ্চনপুর। এ ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার মধ্যে ১২টি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে এ ইউনিয়নেরই প্রায় ১২টি গ্রাম পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই নদীতে জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই এ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানির তীব্র স্রোতে নদীর পাড় ধসে ভাঙন দেখা দেয়। অনেক জায়গায় আগের ফেলা আপৎকালীন জিও ব্যাগসহ ধসে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদী তীরবর্তী শত শত পরিবার।
তবে গত ১৫ দিনে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর, হরিহরদিয়া, গঙ্গাধরদি ও পাটগ্রাম এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হলে লোকজন ঘরবাড়ি সরিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। হুমকির মুখে রয়েছে হরিহরদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প। ২০০৬ সালের দিকে নির্মিত এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৪০টি ঘরে দুস্থ ও অসহায় পরিবারের বসবাস৷ বর্তমান নদীর পাড় থেকে প্রায় তিনশ ফুট দূরে রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি। তবে দু-এক দিনের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, নদীতে জোয়ার আসার পর বিশ দিন আগে থেকে এ ইউনিয়নে নদীভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রায় তিন হাজার একরের অধিক ফসলি জমি নদীতে গেছে। মাঝে পানি কমতে শুরু করলে ভাঙন বন্ধ হয়। এখন আবার পানি বাড়ছে। এতে করে নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। একটু বাতাস হলেই নদীতে প্রবল ঢেউ ওঠে। সঙ্গে শুরু হয় ভয়াবহ নদী ভাঙন। মানুষজন ভাঙনের অবস্থা দেখে অনেক পরিবার ঘরবাড়ি নিয়ে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে পানি যত বাড়বে, ভাঙনও তত বাড়বে। চলতি বর্ষায় এই চরাঞ্চল যে কতটুকু থাকে, সেটাই দেখার বিষয়। গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়ায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আপৎকালীন জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান থাকলেও আরও ৫শ মিটার এরিয়ায় কোনো জিও ব্যাগ পড়েনি। ফলে জোয়ারের পানির তোড়ে এ এলাকায়ও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল গাজী বলেন, আমাদের ৩নং ওয়ার্ডে ৬০ মিটার নদীশাসনের কাজ চলমান আছে। কিন্তু এতে আসলে কোনো কাজেই আসবে না। কারণ এখানে আরও ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার এরিয়া আছে, যেখানে কোনো জিও ব্যাগের কাজ হয়নি। এসব জায়গায় বর্ষার আগে জিও ব্যাগ না ফেললে এই এরিয়াটুকু বিলীন হয়ে যাবে। এরই মধ্যে জোয়ারের পানির স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর স্থায়ী ভাঙন রক্ষার্থে প্রায় ১২ কিলোমিটার জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ডিপিপি প্রণয়নের জন্য ডিজাইন কাজ চলমান। এ ছাড়া হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরে লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি, আজিমনগর ইউনিয়ন যেন নদীভাঙনে না পড়ে, সেজন্য ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্টাডির প্রতিবেদনের আলোকে ডিপিপি প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি পদ্মা নদীর ভাঙন রক্ষার্থে আপৎকালীন জরুরি কাজ হিসেবে কাঞ্চনপুরে ৬০ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। পুরো জেলার নদীভাঙন এলাকা সার্বক্ষণিক মনিটরিং জোরদার রয়েছে।
মন্তব্য করুন